—প্রতীকী ছবি।
মাথার উপরে বনবন করে ঘুরছে পাখা। শীতের আমেজ সরে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে বসন্তের দুপুরে। বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হচ্ছে কপালে।
পরীক্ষার্থী মেয়েটি মন দিয়ে লিখে চলেছে। মাথা তার ওড়নায় ঢাকা। এক লহমায় সন্দেহ হল পরীক্ষকের। কাছে এসে ওড়না সরাতেই দেখা গেল কানে গোঁজা ইয়ারপড। হাঁটুর উপরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা মোবাইল। সেটা অন করা। অন্যপ্রান্ত থেকে কেউ বলে দিচ্ছেন উত্তর। আর ইয়ারপডে সেই উত্তর শুনে মাথা নিচু করে লিখে যাচ্ছে মেয়েটি। বিদেশি কোনও সিনেমা দেখেই নাকি তার এই পরিকল্পনা।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ বছর মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু ছেলেদের থেকে মেয়েরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। ৩৬ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মহিলা পরীক্ষার্থী মোবাইল নিয়ে ধরা পড়েছে।’’
২০২৪-এর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। এখন চলছে উচ্চ মাধ্যমিক। আর এ বছর এই দুই পরীক্ষা ঘিরে নকল করার যে অভিনব পদ্ধতি পর্ষদ ও সংসদ কর্তাদের সামনে এসেছে, তা দেখে তারা হতবাক।
উদাহরণ দিয়ে এক সংসদ কর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে স্কুল পোশাকের উপরে জ্যাকেট পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে দেখা গিয়েছিল এক পরীক্ষার্থীকে। তখন রীতিমতো গরম পড়ে গিয়েছে। তারও মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে।
দেখা যায়, ওই গরমের মধ্যেও কেউ ফুল সোয়েটার পরে এসেছে। এত গরমেও কেন সোয়েটার, জ্যাকেট? উত্তর এসেছে, গতকাল রাতে জ্বর এসেছিল। কিন্তু এই উত্তর মনঃপূত হয়নি পরীক্ষকদের। মাথায় ওড়না জড়ানো পরীক্ষার্থীদেরও কাউকে কাউকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের সন্দেহ, এই সোয়েটার, জ্যাকেট, ওড়নার আড়ালে রয়েছে অন্য কোনও উদ্দেশ্য।
মাধ্যমিকের সময়ে তাও শীতের আবেশ ছিল। কিন্তু, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার অনতিবলম্বে গরম পড়ে যায়। তখনও কেন শীত-পোশাক, উঠেছে প্রশ্ন। শুধু কাগজের নোট নয়, পোশাকের মধ্যে মোবাইল নিয়েও অনেকে আসছে বলে পরীক্ষকদের দাবি।
কলকাতার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের এক পরীক্ষকের কথায়, ‘‘পরীক্ষার পরে শৌচাগার পরিষ্কার করতে গিয়ে স্কুলের সাফাইকর্মী দেখেছেন, নর্দমা ছোট ছোট কাগজের টুকরোতে ভরা। নর্দমা দিয়ে জল যাচ্ছে না।’’
গত কয়েক দিন বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে বেশ কিছু সন্দেহজনক বিষয় লক্ষ করেছি। এই গরমে জ্যাকেট পরে পরীক্ষা দিতে দেখে খুব অবাক লেগেছে। আগামী বছর থেকে মোবাইল রুখতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করছি। তখন পোশাকবিধি কিছু থাকবে কিনা, তা-ও ভেবে দেখা হবে।’’
তবে আগামী বছর থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের সংখ্যা যে অনেকটাই বাড়ানো হবে, সেটা এখন থেকেই জানিয়ে দিয়েছেন চিরঞ্জীব। ডিটেক্টর থাকলে হলে ঢোকার সময়ে মোবাইলের মতো কোনও কিছু সঙ্গে থাকলে তা তৎক্ষণাৎ ধরা পড়ে যাবে। চিরঞ্জীবের মতে, ‘‘সব পরীক্ষাকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর নেই। সেই সুযোগেই এখন কেউ কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে।’’
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল নিয়ে ধরা পড়েছে ৩৬ জন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েছে ২৪ জন। এদের সবার পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy