খুচরো রান নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাটারদের বোঝাপড়ার অভাব দেখা গেল মেলবোর্নে। তার মাসুল হিসাবে শতরানের কাছে পৌঁছেও আউট হয়ে গেলেন যশস্বী জয়সওয়াল। তিনি খুচরো রান নিতে চাইলে, কয়েক পা এগিয়েও ফিরে যান বিরাট কোহলি। যশস্বী আউট হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় প্রাক্তন অধিনায়ককে।
লোকেশ রাহুল আউট হওয়ার পর তৃতীয় উইকেটের জুটিতে যশস্বী এবং কোহলি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের ইনিংসকে। বল বুঝে খেলার চেষ্টা করছিলেন দু’জনেই। ব্রিসবেনে ব্যাটিং ভরাডুবির পর ভারতীয় ব্যাটিংকে বেশ জমাট দেখাচ্ছিল মেলবোর্নের ২২ গজে। দু’জনের জুটিতে ১০২ রান তোলার পরই ছন্দপতন। খুচরো রান নেওয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভেঙে গেল তাঁদের জুটি। প্রায় নিশ্চিত শতরান হাতছাড়া করে সাজঘরে ফিরতে হল যশস্বীকে (৮২)। নিজের ভুলেই কি আউট হলেন যশস্বী? নাকি কোহলির জন্য আউট হতে হল তাঁকে? প্রশ্ন উঠেছে যশস্বীর রান আউট ঘিরে।
ঘটনাটি ভারতের ইনিংসের ৪১তম ওভারের। ব্যাটার ছিলেন যশস্বী। বোলার ছিলেন স্কট বোল্যান্ড। ওভারের শেষ বলটি অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার একটি ফুল লেংথে করেন। সামনের পায়ে ভর দিয়ে সহজেই বলটি যশস্বী খেলেন মিড-অন অঞ্চলে। ফিল্ডার ছিলেন প্যাট কামিন্স। তিনি কিছুটা দূরে থাকায় যশস্বী দৌড়ে এক রান নেওয়ার জন্য কোহলিকে বলেন। এ ক্ষেত্রে যশস্বীরই ‘কল’ ছিল। কারণ বল গিয়েছিল পিচের নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা কোহলির পিছন দিকে। যশস্বীর রানের ডাক শুনে দু’তিন পা এগিয়ে যান কোহলিও। তার পরই তিনি পিছন ফিরে দেখেন, বল ধরে ফেলেছেন কামিন্স। তা দেখে কোহলি রান না-নিয়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তত ক্ষণে যশস্বী প্রায় কোহলির প্রান্তে পৌঁছে যান। তা দেখে ঠান্ডা মাথায় কামিন্স বল ছুড়ে দেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারেকে। তিনি বল দিয়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান যশস্বী।
ক্রিকেটের রীতি অনুযায়ী, যে ব্যাটার বল এবং সংশ্লিষ্ট ফিল্ডারকে দেখতে পান তিনিই খুচরো রান নেওয়ার জন্য সঙ্গীকে আহ্বান জানান। অপর জন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড়ন। কারণ যিনি বল দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর পক্ষে বল এবং ফিল্ডারের অবস্থান বুঝে রান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। মেলবোর্নের ঘটনায় যশস্বীই সেই ভূমিকায় ছিলেন। এবং তিনি রান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাঁর সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অভিজ্ঞ কোহলি পিছনে তাকিয়েই বুঝতে পারেন রান সম্পূর্ণ হওয়া কঠিন। তাই তিনি এগিয়েও ক্রিজ়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রীতি অনুযায়ী, তাঁর নেওয়ার কথা না-হলেও এই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল না। আবার যশস্বীও দৌড়চ্ছিলেন কামিন্সের দিকে তাকিয়ে। কোহলিকে লক্ষ করেননি তিনি। যাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা, সেই যশস্বী নিয়েছিলেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আর যাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নয়, সেই কোহলি নিয়েছিলেন সঠিক সিদ্ধান্ত। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, শতরানের কাছে পৌঁছে যাওয়া যশস্বীর রান আউট কার ভুলে? ভুল রয়েছে দুই ব্যাটারেরই। যশস্বীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং কোহলির ক্রিকেটীয় রীতির ক্ষেত্রে। আবার দু’জনেই ঠিক। যশস্বী ক্রিকেটীয় রীতিতে। কোহলি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। নিশ্চিত ভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। তেমনই ঘটনায় শেষ হল যশস্বী-কোহলির ১০২ রানের জুটি।
আরও পড়ুন:
এই ঘটনার প্রভাব পড়ল ভারতের ইনিংসেও। ২ উইকেটে ১৫৩ রান থেকে ১৫৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। যশস্বীর আউটে কোহলির মনোসংযোগ নষ্ট হয়। সাত বল পরেই তিনি আউট হয়ে যান ৩৬ রান করে। রান পাননি নৈশ প্রহরী হিসাবে নামা আকাশ দীপও।