ভিত তৈরিই ছিল। বিন্দুমাত্র কাল বিলম্ব না করে তার উপরে ইট গাঁথতে শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য, বিধানসভা ভোটের আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থন যথাসম্ভব নিজের দিকে টেনে আনা। পুরভোটে বিপুল সাফল্যের মাঝেও শাসক দলের সংখ্যালঘু সমর্থনে কিছু হাল্কা চিড় ধরা পড়েছিল। রাজ্যে প্রায় ৩০% সংখ্যালঘু ভোট যখন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাই কোনও তাস ফেলে রাখতে রাজি নন মমতা! সেই অঙ্ক থেকেই বৃহস্পতিবার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সমাবেশে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই সমাবেশ মিটে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুতের আরও বার্তা পৌঁছে গিয়েছে জমিয়ত নেতৃত্বের কাছে!
জমিয়ত সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতেই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কাছে ফোন আসে মুখ্যমন্ত্রীর। নানা রকম আশঙ্কার মেঘ সত্ত্বেও শহিদ মিনার ময়দানে জমিয়তের সমাবেশ ‘সুশৃঙ্খল’ ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় উদ্যোক্তা সিদ্দিকুল্লাকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। আর এই সৌজন্য-আলাপের মোড়কেই তিনি বার্তা দিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতির নিরিখে সংখ্যালঘুদের আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে হবে এখন। সংখ্যালঘুদের সামাজিক সংগঠন হিসাবে জমিয়তে সেই লক্ষ্যে কাজ করুক এবং যে কোনও প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের সাহায্য নিক— বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত, সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা সংগঠনের যে আন্দোলন চলছে, তাদের এক সূত্রে গাঁথার ভার পরোক্ষে মমতা দিয়েছেন সিদ্দিকুল্লার উপরেই।
ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে জমিয়তের সাধারণ পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মুখ্যমন্ত্রীকে হাজির করে এমন সমাবেশের প্রভাব কেমন পড়ল, তার ময়না তদন্ত হবে ওই বৈঠকেই। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা অনুযায়ী অদূর ভবিষ্যতে কোনও বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়া উচিত কি না, তা-ও ঠিক হবে সেখানেই। তৃণমূল শিবির থেকে ইঙ্গিত মিলছে, আপাতত জাতীয় অখণ্ডতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার স্বার্থে সামাজিক আদানপ্রদানের চেহারা দেওয়া হলেও এ সবই আসলে বিধানসভা ভোটের আগে সিদ্দিকুল্লাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার পূর্বাভাস! যার দায়িত্ব তৃণমূল নেত্রী নিজেই নিয়েছেন। আর কোনও প্রয়োজন হলে দলে তাঁর আস্থাভাজন দুই নেতা— মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও সিদ্দিকুল্লাদের যোগাযোগ করার ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন। সিদ্দিকুল্লা বলছেন, ‘‘আমাদের সমাবেশে আসতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী খুশি। আমরাও চাইছি, সংখ্যালঘুদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সুস্থ পরিবেশে দাবি আদায় করতে।’’ আপাতত যেমন দু’টি আশু দাবির কথা জমিয়তে নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর কানে তুলেছেন। প্রথমত, নারী সুরক্ষার দিকটি গুরুত্ব দিতেই হবে সরকারকে। কারণ, পরিস্থিতি দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়ত, সংরক্ষণের সুযোগ নিতে ওবিসি শংসাপত্র সই করার এক্তিয়ার বিডিও স্তরেও দিতে হবে। মহকুমা শাসকের কার্যালয় থেকে ওই শংসাপত্র নিতে আবেদনকারীর চাপ অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ পরিষদের সম্মতি সাপেক্ষে এই বিষয়গুলি নিয়েই সরকারের সঙ্গে আলোচনা চান জমিয়তে নেতৃত্ব।
মাদ্রাসার একাধিক সংগঠন-সহ বেশ কিছু মঞ্চ থেকে এখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই ধরনের সব সংগঠনকেও আলোচনার জন্য আহ্বান জানাতে চলেছেন জমিয়তের রাজ্য নেতৃত্ব। সিদ্দিকুল্লার কথায়, ‘‘নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ করে লাভ নেই। বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, তাঁদের সকলের সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই।’’ নানা গোত্রের আন্দোলনকারীদের এক জায়গায় এনে দাবি আদায়ের পথে নিয়ে যেতে পারলে তাতে সিদ্দিকুল্লারও লাভ, মুখ্যমন্ত্রীরও স্বস্তি!
কংগ্রেস এবং বিজেপি অবশ্য এমন উদ্যোগের পিছনে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজনীতি দেখছে। আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে ভয়ঙ্কর অসত্য প্রচার শুরু হয়েছে! বামফ্রন্ট আমলে সংখ্যালঘুদের জন্য কী পদক্ষেপ হয়েছিল আর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও কাজে কী ফারাক— সব তথ্যই আমরা পুস্তিকা তৈরি করে মানুষের কাছে নিয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy