নন্দীগ্রামের ‘শহিদ’ দিবসে রাজ্যের কৃষক কল্যাণে তাঁর সরকারের কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সেখানকার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তৎকালীন বাম আমলের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের কোনও পার্থক্য নেই বলে তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায় উঠে এল ‘মিথ্যা মামলা’র প্রসঙ্গও।
মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার নন্দীগ্রামে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের গুলি চালনায় এবং আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও কৃষকদের ‘কুর্নিশ’ করে এক্স হ্যান্ড্লে পোস্ট করেছেন। সেখানেই তিনি কৃষক-স্বার্থে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘কৃষকবন্ধু (নতুন) প্রকল্পে আর্থিক, কর্মরত কৃষকদের মৃত্যুজনিত সহায়তা, শস্য বিমার কিস্তির সম্পূর্ণ খরচ বহন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর্থিক সহায়তা, কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনা, কৃষক-পেনশন দেওয়া, ১৮৬টি ‘কিসান মান্ডি’ চালু, বিনামূল্যে কৃষি যন্ত্র প্রদান— সব কিছুই আমরা করেছি।’ আগামী দিনেও চাষিদের পক্ষেই সরকার থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা। তুলে ধরেছেন রাজ্যের ‘বাংলা শস্যবিমা’ প্রকল্পের কথাও।
যদিও রাজ্য প্রশাসনকে নিশানা করে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু-সহ অন্যেরা এ দিন নন্দীগ্রামের অধিকারীপাড়ায় গিয়ে ‘শহিদ বেদি’তে মাল্যদান করেছেন। পরে সোনাচূড়ায় ‘শহিদ-স্তম্ভে’ গিয়েও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। নন্দীগ্রাম থেকেই তাঁর অভিযোগ, “শাসক বদলেছে, ব্যবস্থা বদলায়নি। ২০১১-র আগে নন্দীগ্রামের জনতা মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হতেন। এখনও তা-ই। ভোটার তালিকা ধরে ধরে সিপিএম যা করত, এখনও এখানে সেই ব্যবস্থা চলছে।” এই সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতাদের শ্রদ্ধা জানানোর পরে জল দিয়ে ‘শহিদ-বেদি’ ধুয়ে সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বও। পাশাপাশি, শুভেন্দুকে আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামেই হারাবেন বলে ‘হুঙ্কার’ দিয়েছেন শাসক দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “নন্দীগ্রামে ওঁকে হারিয়ে ছাড়ব। বিধায়ক হিসেবে ওঁর মেয়াদ আর মাত্র এক বছর। তার পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে!” শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণের আরও দাবি, “শুভেন্দু হাই কোর্টের আশীর্বাদ আছে বলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর বড় বড় কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন। না-হলে ওঁর এত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল!”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)