Advertisement
E-Paper

বিতর্কের মাঝেই ওবিসি সমীক্ষা, ভাবনা নয়া পথের

সূত্রের খবর, রাজ্যের অনগ্রসর কমিশনের তরফে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে ওবিসি সমীক্ষার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রথমে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ০৪:১৬
Share
Save

রাজ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য চালু সংরক্ষণ খারিজ হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। আদালতের নির্দেশেই বাতিল হয়েছে ওবিসি শংসাপত্র। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের আর্জি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন। তারই মধ্যে নতুন করে ওবিসি সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশ পাঠিয়ে এবং প্রশ্ন বেঁধে দিয়ে ওই সমীক্ষা শুরু করতে বলা হয়েছে। আইনি লড়াই চলাকালীন রাজ্যের এমন পদক্ষেপে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তবে সরকারি একটি সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে আর্থিক ভাবে অনগ্রসর মুসলিমদের যাতে সংরক্ষণের আওতায় রাখা যায়, সে দিকে নজর রেখেই বিকল্প পথ ভাবতে শুরু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রয়োজনে আর্থিক ভাবে দুর্বল (ইডব্লিউএস) অংশের আওতায় চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণ দেওয়া যায় কি না, সেই সম্ভাবনাও ভেবে দেখা হচ্ছে সরকারি স্তরে।

সূত্রের খবর, রাজ্যের অনগ্রসর কমিশনের তরফে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে ওবিসি সমীক্ষার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রথমে। তার পরে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্লক ও পুরসভা স্তরে কী ভাবে কত জন সমীক্ষক কাজ করবেন, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও। কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী ৬২টি জাত এবং ১১৩টি উপ-জাতের (সাব কাস্ট) কথা জানিয়ে সমীক্ষা চালাতে বলা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেঞ্চমার্ক সার্ভে’। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে সমীক্ষার জন্য নমুনা প্রশ্নের তালিকাও।

সাচার এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট পরপর আসার পরে ২০১০ সালের ৭ মার্চ তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওবিসি সংরক্ষণের নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন। ওবিসি-র জন্য চালু ৭%-এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছিল আরও ১০% সংরক্ষণ। যার ফলে মুসলিমদের মধ্যে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশ ওবিসি-র তালিকায় সংরক্ষণের আওতায় আসতে পেরেছিল। তার আগে সমীক্ষা চালিয়ে জোলা, কসাই-কুরেশি, নশ্য-শেখ সহ কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠীকে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকার নিরিখে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রাজ্যে সরকার বদলের পরে সেই তালিকা লম্বা হয়েছে। কিন্তু বিধি মেনে এই কাজ করা হয়নি বলে কারণ দেখিয়ে হাই কোর্টে ওবিসি সংরক্ষণ বাতিল হয়েছে। সেই আইনি প্রক্রিয়ার নিস্পত্তি হওয়ার আগেই ফের সমীক্ষার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য।

সরকারি ভাবে অবশ্য এই উদ্যোগের প্রসঙ্গে মুখ খোলা হচ্ছে না। প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রী বুলু চিক বরাইক বলছেন, ‘‘ওবিসি-র বিষয়টি আদালতে রয়েছে। বিচারাধীন অবস্থায় এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’ তবে রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল আছে। আদালতের দিকটা পরিষ্কার না-হলে কোনও সিদ্ধান্ত হবে না। তবে ওবিসি এ এবং বি ক্যাটিগরির সংরক্ষণকে আইনি বৈধতা দিতে গেলে যুক্তিসঙ্গত সমীক্ষা প্রয়োজন।’’ সরকারি ওই কর্তার আরও বক্তব্য, ‘‘আগের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন একই পেশায় থেকে বা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থেকেও মুসলিম হওয়ার কারণে যাঁরা সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছেন না, ওবিসি-র মাধ্যমে সেখানে সমতা বিধানের চেষ্টা হল। এই যুক্তিতে কোনও ভুল নেই বলেই মনে হয়। ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ তো দেওয়া যায় না।’’

প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য ধর্মের প্রশ্নই তুলছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘তোষণ-নীতির কারণে ওবিসি-র মাধ্যমে মুসলিমদের সংরক্ষন দিয়েছিল সরকার। সব বাতিল হয়েছে। এই সরকার নির্লজ্জ!’’ সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যেখানে সমীক্ষা হচ্ছে, সেই পাড়া সংখ্যালঘু না মিশ্র, পানীয় জল নিতে সমস্যা হয় কি না, রান্না করা খাবার প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগ করা হয় কি না, সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাকা হয় কি না, কেউ মারা গেলে সৎকারে সমস্যা আছে কি না, এমন সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। সেই সূত্রে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রামমোহন, বিদ্যাসাগরের বাংলায় এমন পরিস্থিতি আছে কি কোথাও? এটা কী ধরনের সমীক্ষা? যে ১১৩টা গোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় সবই মুসলিম। হিন্দুরা ওবিসি তালিকায় আর নাম তোলার সুযোগ পাবেন না? পিছনের দরজা দিয়ে মুসলিমদেরই ফের সংরক্ষণ পাইয়ে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার!"

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘তৃণমূলের সরকার কি অন্য কোনও রাজ্যের পরিস্থিতিকে এ রাজ্যের ছবি হিসেবে দেখতে চাইছে? ধর্মের বাছ-বিচার সরিয়ে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সকলকে সুযোগ দিতেই ওবিসি সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। এই সরকার নিয়ম না মেনে সবটা গোলমাল পাকিয়ে এখন নানা রকম কৌশল করছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

OBC Calcutta High Court Supreme Court of India West Bengal government survey

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}