রাজ্য বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার ২৫টিতে সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়েছে। তালিকায় পুরনো জেলা সভাপতিদের বদলে ১৭ জন নতুন মুখ রয়েছেন। পদে পুনর্বহাল হয়েছেন আট জন। বিজেপি সূত্রে দাবি, ৬০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বসীমা, দু’বারের বেশি জেলা সভাপতি না-করা এবং গত লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফল — এই তিনটি মাপকাঠিকে সামনে রেখে জেলা সভাপতিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কয়েক জন সভাপতির নাম দেখে ‘সঙ্ঘের প্রভাব’ নিয়েও দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে দাবি, অতীতে শুধুমাত্র দলের শীর্ষ-স্তর থেকে সভাপতিদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে নানা জায়গায় ক্ষোভ ছিল। এ বার তাই দলের একেবারে নিচু স্তর থেকে সভাপতিদের নাম নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু ‘ভোটাভুটি’ এড়াতে নজর রাখা হয়েছিল যাতে একটি জেলায় একাধিক সভাপতি-পদপ্রার্থী না থাকেন। তাই ১৪টি জেলায় এখনও সভাপতিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। পাশাপাশি, ৫০% মণ্ডল তৈরি না হওয়ায় চার জেলায় সভাপতিদের নাম আটকে রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে গোটা প্রক্রিয়ায় অতীতের তুলনায় ক্ষোভ দৃশ্যত কমেছে। তবুও শনিবার জলপাইগুড়ি ও বসিরহাটে নতুন জেলা সভাপতিদের নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন নেতা-কর্মীদের একাংশ। যদিও দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “পরিবর্তন সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। কয়েকটি মাপকাঠিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে বদল হয়েছে, সেখানে কেউ দু’বার পদে ছিলেন, কেউ বা নিষ্ক্রিয় গিয়েছিলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা এবং সম্মতির ভিত্তিতে সক্রিয় সভাপতিদের নির্বাচন করা হয়েছে।”
পাশাপাশি, কয়েকটি জেলার সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠেরা নতুন সভাপতি হয়েছেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের। তাঁদের মতে, দলের সংগঠনে সঙ্ঘ নিজেদের অবস্থান দৃঢ় ভাবে রাখতে চাইছে বলেই এই ছবি দেখা গিয়েছে।
বিজেপি সূত্রে বক্তব্য, নেতৃত্ব বদলের ক্ষেত্রে তিন মাপকাঠির একটি বা একাধিক কারণ প্রযোজ্য হয়েছে। বয়সসীমার কারণে জলপাইগুড়ি, বসিরহাট সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদল হয়েছে। আবার দু’বারের বেশি জেলা সভাপতি না-করা, এই মাপকাঠিতে মালদহ উত্তরে এসেছেন নতুন মুখ। গত লোকসভা ভোটে হারের জন্য কোচবিহার, হুগলি, আসানসোল, বাঁকুড়ায় সভাপতি বদল হয়েছে। আরামবাগ, কাঁথির মতো কিছু জায়গায় দলেরই বিধায়ক থাকায় ‘বোঝাপড়া’র ভিত্তিতে বদল হয়েছে সভাপতি পদে। আবার, লোকসভা ভোটে হার সত্ত্বেও তুলনায় ভাল হওয়ায় পুরনো সভাপতিদেরই পুনর্বহাল করা হয়েছে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণের মতো কিছু জায়গায়।
প্রসঙ্গত, বিজেপি সূত্রে দাবি, আগামী সপ্তাহে দলের নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা হতে পারে। সুকান্তও বলেছেন, “যে কোনও দিন ঘোষণা হবে।” এই সূত্রেই একটি অংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের আগে সময় কম থাকায় সুকান্তকেই পদে রাখা হতে পারে। আবার, সুকান্তের পাশাপাশি সঙ্ঘের আস্থাভাজন পুরনো এক নেতা, সুকান্ত-ঘনিষ্ঠ এক জনজাতি সাংসদ, এক রাজ্যসভার সাংসদ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক নেত্রীর নামও এই সূত্রে সামনে আসছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)