মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার দাবিতে বারেবারে সরব হয়েছেন তিনি। কিন্তু যে বৈঠকে রাজ্যকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলো, সেখানে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে গরহাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! নেহরুর আমলের যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নতুন কমিটি গড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা বৈঠকে চারটি বাদে দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাজির থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
তবে মোদী সরকারের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা মমতা এ বারে একটি কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন। মমতা লিখেছেন, ‘নতুন যে প্রতিষ্ঠান বা পরিকাঠামো নিয়েই ভাবনাচিন্তা করা হোক না কেন, তা যেন রাজ্যের হাতকে শক্তিশালী করে।’ আর এই বৈঠকেই মোদী যে বিকল্প প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব দিলেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীদেরও সদস্য করার কথা বল হল। যা দেখেশুনে দিল্লির রাজনীতিকরা বলছেন, এ তো প্রকারান্তরে মোদীর মতকেই সমর্থন করেছেন মমতা! এবং সেটা কখন? মোদীর নতুন প্রস্তাবটি যখন নাকচ করে দিয়েছেন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রথমে গত কাল সুর নরম করে কেন্দ্রকে সহযোগিতার বার্তা, তার পরে এই চিঠি এ সব কি মমতার চাপের মুখে অবস্থান বদলের ইঙ্গিত? নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই এবং খাগড়াগড় বিস্ফোরণে এনআইএ-র সক্রিয়তা বাড়ার পরে সেই সুর কখনও কখনও শালীনতার সীমাও ছাড়িয়েছে। তার পরে প্রশাসনিক স্তরে ‘মোদীর সঙ্গে সহযোগিতা’র বার্তা দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নটা উঠে গিয়েছে।
অনেকে জানতে চাইছেন, তা হলে তিনি এ দিনের বৈঠকে এলেন না কেন? যেখানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে মোদীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন এবং বৈঠক করেছেন। আজ মমতার বড় কোনও কর্মসূচিও ছিল না। সারা দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তৃণমূলের হাতে গোনা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অনুপস্থিতির কারণ কি সারদা কেলেঙ্কারি এবং খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত? অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির জবাব, “ওঁর অর্থমন্ত্রী কারণ হিসেবে তেমন কিছু বলেননি।” জেটলি জানান, মমতা চিঠিতে মূলত তিনটি বিষয় তুলে ধরেছেন। এক, রাজ্যের হাতে বেশি ক্ষমতা প্রয়োজন। দুই, উন্নয়নের নীতি তৈরির ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। তিন, নতুন প্রতিষ্ঠানের যেন সাংবিধানিক বৈধতা থাকে।
মমতার প্রস্তাব, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির বদলে আন্তঃরাজ্য পরিষদকেই যোজনা কমিশনের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হোক। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় তৈরির জন্য আন্তঃরাজ্য পরিষদ তৈরি হলেও তার খুব বেশি ক্ষমতা নেই। মমতা চিঠিতে লিখেছেন, “এই পরিষদ সংবিধান মেনে তৈরি। এর সচিবালয় রয়েছে। কিন্তু তাকে প্রয়োজনমতো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে সংবিধানে সংশোধন করা যেতে পারে। জাতীয় উন্নয়ন পরিষদকেও এর অধীনে নিয়ে আসা যেতে পারে।”
যোজনা কমিশন ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন বলে মমতা যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “জনপ্রতিনিধি হিসেবে বর্তমান প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা দরকার। আগে একই ধরনের সাংবিধানিক বৈধতা সম্পন্ন বিশ্বাসযোগ্য ও ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার।” মমতার দাবি, নতুন কাঠামোয় যেন কোনও ভাবেই রাজ্যের ক্ষমতা বা আর্থিক অধিকার লঘু না হয়। যা শুনে মোদী সরকারের এক মন্ত্রীর মতামত, মমতার বক্তব্যে যুক্তি আছে। কিন্তু আন্তঃরাজ্য পরিষদে সব মুখ্যমন্ত্রীই থাকেন। সেখানে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy