Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভাই কেষ্টর চাওয়া কি ফেলতে পারেন দিদি

তাঁর প্রিয় কেষ্ট চেয়েছেন। না কী করেই বা বলতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! অতএব রাস্তার প্রস্তাব পাশ। পাশ বাস রুট কিংবা স্কুলের দাবিও। কেষ্ট ওরফে অনুব্রত মণ্ডলের সৌজন্যে বৃহস্পতিবার বীরভূমের জন্যদরাজহস্ত মুখ্যমন্ত্রী।

অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার  দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।

অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

তাঁর প্রিয় কেষ্ট চেয়েছেন। না কী করেই বা বলতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

অতএব রাস্তার প্রস্তাব পাশ। পাশ বাস রুট কিংবা স্কুলের দাবিও। কেষ্ট ওরফে অনুব্রত মণ্ডলের সৌজন্যে বৃহস্পতিবার বীরভূমের জন্যদরাজহস্ত মুখ্যমন্ত্রী।

কেষ্ট যে মমতার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার ছোট্ট প্রমাণ অবশ্য মিলেছিল ট্রেনেই। মঙ্গলবার পুরুলিয়া এক্সপ্রেস মেদিনীপুর স্টেশন ছেড়েছে। এক সতীর্থ সামনে নিয়ে এলেন চানাচুরে মাখা চালভাজা। মেদিনীপুরের পার্টির ছেলেরা পাঠিয়েছে। এক গ্রাস তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সতীর্থ বললেন,‘‘ আহা! কী স্বাদ!’’। শুনে মমতা বলে উঠলেন, ‘‘কী যে বলিস! আমার দেশের (বীরভূমের কুসুম্বা মুখ্যমন্ত্রীর মামাবাড়ি) মুড়ি খেয়েছিস কখনও? সেই স্বাদ কোথাও নেই। চল যাচ্ছি, কেষ্ট তোদের বীরভূমের মুড়ি আর তেলেভাজা খাওয়াবে।’’

মুড়ি-পোস্তর বীরভূমের খ্যাতি অবশ্য ভোটের মরসুমে দলের জেলা সভাপতির দৌলতে গুড়-বাতাসায় বদলে গিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের বেনজির কড়াকড়ির মধ্যেই জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রে গুড়-বাতাসা মডেলে ৯টি জিতেছেন কেষ্ট মণ্ডল। তাঁর দাপট থাকবে না তো কার থাকবে! বৃহস্পতিবার বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও সেই ছবি ধরা পড়ল। বৈঠকের এক দিকে যদি তৃণমূল নেত্রী ‘দিদি’, তো অন্য দিকে তাঁর ভাই। মাঝে রইলেন ৪০ জন সচিবালয়ের বড় কর্তা আর বীরভূমের নেতা কিংবা সরকারি অফিসারেরা।

এ দিন গ্রামের রাস্তা নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছিল। বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতিরা মৃদুস্বরে বলছিলেন কী কী চাই তাঁদের। এর মধ্যেই বাজখাঁই গলাটা শোনা গেল। ‘‘দিদি, আমার ১৬৭টা পঞ্চায়েত। সব পঞ্চায়েতে একই দিনে একটা করে নতুন রাস্তা তৈরি করতে চাইছি। তুমি না বললে হবে না। একটু বলে দাও।’’ মমতা পঞ্চায়েত মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন এই প্রকল্প করা যাবে কি না। সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্মতি দিতেই প্রকল্প পাশ! ঠিক হল, রাখি পূর্ণিমার দিন সব পঞ্চায়েতে একটি করে নতুন রাস্তা হবে।

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলেন, কার কার এলাকায় স্কুল চাই? সামনের দিকে বসেছিলেন জনপ্রতিনিধিরা। কেষ্ট পিছনে। তাঁর বার্তা গেল তাঁদের উদ্দেশে। সেই মতো কেউ চাইলেন মেয়েদের স্কুল, কারও দাবি স্কুল হোক উচ্চ মাধ্যমিক। সব পাশ। এর পরে কেষ্টর দাবি, মুরারই থেকে কলকাতা, ময়ূরেশ্বর থেকে কলকাতা, তারাপীঠ থেকে নলাটেশ্বরী বাস দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, কেষ্ট বলে উঠলেন, ‘‘দিদি আমাকে দু’টো থানা দাও।’’ দিদির বকুনি—‘‘না আর হবে না। তোকে অনেক দিয়েছি। আমি পারব না।’’ কিন্তু বৈঠক শেষে বেরনোর আগে পুলিশের ডিজি-কে মুখ্যমন্ত্রীই বলে গেলেন,‘‘দেখুন তো কেষ্টর থানা দু’টো করে দেওয়া যায় কি না!’’

রাস্তা নিয়ে কেষ্টর সঙ্গে একপ্রস্ত বাদানুবাদ হল পূর্ত সচিব ইন্দিবর পাণ্ডের সঙ্গে। সচিব যে সব প্রকল্পের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন, তা মানতে রাজি নন বীরভূমের নেতা। বেশ কিছু রাস্তার অবস্থা যে খারাপ, পরপর বলে গেলেন। শুনে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘কেষ্ট যে রাস্তাগুলোর কথা বলছে সেগুলো করে দাও ইন্দিবর।’’

দু’ঘণ্টার এই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুব্রত প্রতিপদে বুঝিয়েছেন, শুধুই জেলা তৃণমূলে নয়, জেলার প্রশাসনেও তাঁর দাপট সংশয়াতীত। তা না হলে কেষ্টর সমস্ত দাবি এক-এক করে সচিবেরা উঠে দাঁড়িয়ে নোট করেন!

শেষ বেলায় অবশ্য দিদির কাছে আরও এক আব্দার করে বসেছেন। কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট আর আউশগ্রাম বীরভূমের সঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হোক। কেন এই আব্দার? কারণ, বীরভূমের জেলা সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি বর্ধমানের এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বেও যে অনুব্রতই! তবে, নিজের ‘স্নেহধন্যের’ এ হেন দাবি শোনার পরেই তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘এ বার শেষ করতে হবে। না হলে কেষ্ট চা‌ইতেই থাকবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE