ছবি: পিটিআই।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শনিবারও অশান্ত থাকল রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল। মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা এবং রেল লাইন অবরোধ করে একাধিক ট্রেনে একের পর এক আগুন ধরানো হয়, বিভিন্ন স্টেশনে চলে ভাঙচুর। আগুন ধরানো হয় টোল প্লাজ়ায় এবং অনেক বাসেও। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসনাবাদ, লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখায় ট্রেন চলেনি। সব মিলিয়ে ভোগান্তি হয় সেই সাধারণ মানুষের।
এই পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা ফের দেওয়ার পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, থানা, স্টেশন-সহ সরকারি, বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর বা কোনও হিংসাত্মক কাজ প্রশাসন বরদাস্ত করবে না।
শনিবার নবান্নে যান মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। নবান্ন জানিয়েছে, আজ, রবিবার থেকে আন্দোলন হিংসাত্মক জায়গায় যেতে দেওয়া হবে না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশও বাড়ানো হয়েছে। রেলের ক্ষেত্রে জিআরপি নিরাপত্তা দেবে। প্রয়োগ করা হবে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর নিরোধক আইন। ইতিমধ্যেই বেলডাঙা, উলুবেড়িয়া, সাঁতরাগাছি-সহ সব ক’টি ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। অশান্তিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে পূর্ব বর্ধমানের সাইবার-থানায় এক জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং যে সব এলাকায় ট্রেন বা স্টেশনে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেখানে পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, পর্যাপ্ত পুলিশ না-থাকায় বিক্ষোভকারীদের আটকানো যায়নি। আর শান্তিরক্ষায় রাজ্যকে ‘ব্যর্থ’ হিসেবে দোষারোপ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘যারা আন্দোলন করছে, তারা সন্ত্রাসবাদী ও অনুপ্রবেশকারী।’’
আরও পড়ুন: বিক্ষোভ-আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদে শান্তির বার্তা ইমামদের
এ দিন সকাল ১০টা থেকে গোলমাল শুরু হয় হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। গরফা সেতুর উপরে ৮টি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। খেজুরতলার কাছে আরও দু’টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। দমকল ও পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। ছোড়া হয় বোমাও। পাথরের আঘাতে ডিসি (সাউথ) স্বাতী ভাঙালিয়া-সহ আট জন আহত হন। পরে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স এসে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। চার ঘণ্টা ধরে ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় যানজটে আটকে পড়েন বহু মানুষ। বেলা আড়াইটে নাগাদ যান চলাচল শুরু হয় ওই রাস্তায়। হাওড়ার ভারপ্রাপ্ত কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি বা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না।’’ হাওড়ার বিভিন্ন স্টেশনেও ভাঙচুর ও অবরোধ হয়। পাঁচলা-বেলতলা অঙ্কুরহাটি, উলুবেড়িয়ার পারিজাত, ধুলাসিমলা, রণমহলে ও সাঁকরাইলে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ হয়। সাঁকরাইলের ডাকঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। বিকেলে হুগলির দাদপুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধে তীব্র যানজটে ভুগতে হয় নাগরিকদের।
মুর্শিদাবাদে বাস, ট্রেন, টোল প্লাজায় একের পর এক আগুন লাগানো হলেও পুলিশকে ‘সক্রিয়’ হতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। শনিবার সকাল থেকেই সুতির সাজুর মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু হয়। একটি সরকারি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে বিক্ষোভকারীরা শমসেরগঞ্জ থানায় ইট ছোড়ে। থানার বেশির ভাগ জানলা ভেঙে গিয়েছে। বেলা আড়াইটে নাগাদ সুতির চাঁদের মোড়ে জাতীয় সড়কের টোল প্লাজায় ভাঙচুরের পর কন্ট্রোল রুমে আগুন লাগানো হয়। বিকেল ৪টে নাগাদ জনতা আহিরণ সেতুর নির্মাণে যুক্ত গাড়ি, জেসিবি, রোলার, অ্যাম্বুল্যান্স, অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে আগুন লাগায়। তার পরেই সুতির ব্লক অফিসে চড়াও হয় কয়েকশো লোক। সেখান থেকে নিমতিতা স্টেশনে আগুন লাগানো হয়। এসডিপিও (জঙ্গিপুর) প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় হাঙ্গামা আটকানো যায়নি।
সকাল ১০টা থেকেই রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয় ইসলামপুর বাজারে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়কের হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েন। এখানেও ‘সক্রিয়’ পুলিশের দেখা মেলেনি বলেই অভিযোগ। সন্ধ্যায় সাগরপাড়ায় পুলিশের গাড়িতেই ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশকর্মীরা গাড়ি ছেড়ে পাশের দোকানে ঢুকে পড়েন। লালগোলা শাখায় বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। নদিয়ায় চাপড়া এবং তেহট্টের নাজিরপুর এলাকায় করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এবং ফরোয়ার্ড ব্লক। কোথাও ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
শনিবার সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়। মারধর করা হয় এক অটো চালককে। অবরোধ হয় ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের বামনগাছি, দিঘার মোড়, কাজীপাড়া রেলগেটে। টাকি রোডের বেলিয়াঘাটা, গোলাবাড়ি, দেগঙ্গা, কদম্বগাছি বাজারে টায়ার পুড়িয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। বিকেলে বামনগাছিতে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তেও বিক্ষোভের জেরে ওল্ড সাতক্ষীরা রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়। অবরোধ হয় হাসনাবাদের বিভিন্ন এলাকায়। রাজারহাট-নিউটাউনেও রাস্তা অবরোধ করা হয় রায়গাছি ঘাট মোড়, বন্দের মোড়, নারকেলবাগান মোড়ে।
রেল অবরোধ হয় বীরভূমের মুরারইয়েও। তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল মুরারই-রাজগ্রাম সড়ক। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। ঘাটালে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে অবরোধ হয়। পরে পুলিশ গিয়ে সেখানে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে ১১৬বি জাতীয় সড়ক অবরোধে শামিল হন তৃণমূল বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য। বিকেলে পাঁশকুড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। ধরানো হয় আগুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy