Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM Congress

বহুদিন পরে দলীয় নথিতে ‘কংগ্রেসি গুন্ডা’ লিখল সিপিএম, পাল্টা সাঁইবাড়ি নিয়ে খোঁচা দিল হাতশিবির

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বড় বিতর্ক হয়েছিল সিপিএমে। জোটের বিপক্ষে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অমল হালদার, কল্লোল মজুমদারেরা।

—গ্রাফিক আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২৮
Share: Save:

বামেরা সরকারে থাকার সময়ে কথায় কথায় সত্তরের দশকের ‘কংগ্রেসি সন্ত্রাস’ মনে করাত। কিন্তু ‘সম্ভাবনার শিল্প’ রাজনীতিতে সেই কংগ্রেসই গত আট বছর ধরে বামেদের ‘অভিন্নহৃদয় বন্ধু’ হয়ে উঠেছে বঙ্গ রাজনীতিতে। ছ’মাস আগে লোকসভা ভোটেও জোট করে লড়েছিল তারা। কিন্তু ডিসেম্বর পড়তেই দেখা গেল, বেশ কয়েক বছর ধরে সিপিএমের অভিধান থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন শব্দবন্ধ ফিরে এসেছে দলীয় নথিতে। সৌজন্যে: সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্মেলন। তা ছাপাও হয়েছে দলের প্রভাতী মুখপত্রে।

শুক্রবার থেকে পূর্ব বর্ধমানের কালনায় শুরু হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্মেলন। শুরুর দিনই প্রকাশ্য সমাবেশের মঞ্চে ১৯৫৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দলের যাঁরা রাজনৈতিক ভাবে খুন হয়েছেন বলে দাবি সিপিএমের, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। ‘শহিদ’দের পরিবারবর্গকে সম্মানিত করে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিএম। সম্মেলন সম্পর্কে যে লিফলেট বিলি করা হয়েছিল, সেখানে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়াও শনিবার দলের প্রভাতী মুখপত্রে সম্মলনের প্রতিবেদন সম্পর্কে লেখা হয়, ‘১৯৫৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লড়াই সংগ্রামে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপির গুন্ডাদের হাতে যে সব কমরেড শহিদের মৃত্যু বরণ করেছেন, তাঁদের পরিবারের অনেকেই এ দিন উপস্থিত হয়েছিলেন।’

২০১৬ সাল থেকে বাংলায় প্রায় সব বড় নির্বাচনেই (২০১৯ সালে লোকসভায় সর্বত্র বোঝাপড়া হয়নি) কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়েছে সিপিএম। এই পর্বে দলীয় নথিতে সত্তরের দশকের ওই সময়কালকে ‘আধা ফ্যাসিস্ত’ সন্ত্রাস বলে অভিহিত করত সিপিএম। কোথাও কংগ্রেসের নামোল্লেখ হত না। তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনাও ছিল। অনেকে বলতেন, ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছেন নেতৃত্ব। কিন্তু এ বার পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্মেলন সেই পুরনো শব্দ ফিরিয়ে আনল। যদিও সিপিএমের দাবি, এর মধ্যে বিশেষ কোনও তাৎপর্য নেই। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দলের প্রভাতী দৈনিকের সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেছেন, ‘‘আলাদা করে এর মধ্যে তাৎপর্য খোঁজার কিছু নেই। ইতিহাসটা ইতিহাসই।’’

কংগ্রেসও সিপিএমকে পাল্টা ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক তথা মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘জাতীয় কংগ্রেস কখনওই খুনোখুনির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সিপিএম যদি ইতিহাস খুঁড়তে চায়, তা হলে ওদেরও সাঁইবাড়ির কথা মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আমতায় কী ভাবে হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার অপরাধে কংগ্রেস কর্মীর পাঞ্জা কেটে দেওয়া হয়েছিল। ওটাও কিন্তু ইতিহাসই।’’

উল্লেখ্য, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না বলে সিপিএমের বিভিন্ন এরিয়া কমিটির সম্মেলনের আলোচনায় উঠে এসেছে। এই পর্যন্ত হয়ে যাওয়া একাধিক জেলা সম্মেলনেও সেই প্রসঙ্গ উঠেছে। যদিও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এখনও মনে করে, বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই তারা লড়বে। তার মধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্মেলন খুঁচিয়ে তুলেছে পুরনো শব্দবন্ধ। যা নিয়ে দলের মধ্যেও আলোচনা শুরু হয়েছে। সিপিএমের এক তরুণ নেতার কথায়, ‘‘২০১৬ সালের পর থেকে দলের কোনও প্রচারপত্রে কংগ্রেস সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু লেখা হত না। যাতে ভুল বার্তা না যায়। তা করা হত সচেতন ভাবেই।’’

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হওয়া নিয়ে বড় বিতর্ক হয়েছিল সিপিএমে। সেই সময়ে দলের রাজ্য কমিটির অধিকাংশ সদস্য ছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে। বিপক্ষের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। যাঁরা উল্টো দিকে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের তৎকালীন সিপিএম জেলা সম্পাদক অমল হালদার, কলকাতার কল্লোল মজুমদারেরা। দেখা গেল, সেই পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই কংগ্রেস সম্পর্কে পুরনো শব্দবন্ধ ফিরিয়ে আনল সিপিএম। তবে দলের অনেকেই বলছেন, সর্বত্র এই জিনিস দেখা যাবে না। তবে আরও দু’একটি জেলায় এমন কিছু ‘কড়া কথা’ লেখা হতে পারে কংগ্রেস সম্পর্কে। সেই তালিকায় থাকতে পারে কল্লোলের কলকাতাও। আবার অনেকের বক্তব্য, ২০১৬ সালে রাজ্য সিপিএমে যে সমীকরণ ছিল, এখন তা বদলে গিয়েছে। ফলে তখনকার সমীকরণ এখনও বজায় থাকবে, তা না-ও হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Congress Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy