ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অলোককুমার বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল! তবে তাতেও উচ্চ মাধ্যমিকে বসায় বাধা থাকবে না। যদিও তার জন্য গুনতে হবে হাজার টাকা! তা হলেই টেস্টে পাশ! নিশ্চিন্তে বসা যাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। সেই টাকা প্রায় ৭২ জন পড়য়ার কাছ থেকে নেওয়াও হয়েছে। এমনই অভিযোগই উঠল শিলিগুড়ির একটি স্কুলে। ঘটনাটি নিয়ে শোরগোল পড়তেই নড়চড়ে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি বলেই জানান ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক। তবে তিনি এ-ও জানান, পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ, লেট ফাইন সংক্রান্ত টাকা রেখে বাকিটা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে পড়ুয়াদের!
হাতেগোনা আর কয়েক দিন বাকি। তার পরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। রাজ্যের প্রায় সব স্কুলে ইতিমধ্যেই টেস্ট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ফল বার হচ্ছে। সেই ফলের উপই নির্ভর করবে পড়ুয়াদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া বা না-দেওয়া। এ হেন পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর সন্তোষিনী বিদ্যাচক্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াদের পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা চাওয়া এবং নেওয়ার অভিযোগ উঠল।
শিলিগুড়ির ওই স্কুলের ৭২ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছে। অভিযোগ, ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অলোককুমার বিশ্বাস অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াদের ফোন করে ১০০০ টাকা নিয়ে স্কুলে আসতে বলেন। সেই টাকার বিনিময়ে তাদের পাশ করিয়ে দেওয়া হবে এবং তারা উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসতে পারবে বলেও জানান তিনি। পড়ুয়াদের বক্তব্য অনুযায়ী, স্কুলে ছুটি চলছে। তার মাঝে প্রধানশিক্ষক তাদের স্কুলে ডেকে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি সাদা কাগজে নাম নথিভুক্ত করে নিয়েছেন!
সাধারণত, স্কুলের যাবতীয় নির্দেশিকা এখন হোয়াট্সঅ্যাপেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের পরিবারের কাছে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। পড়ুয়াদের দাবি, টাকা চাওয়ার কথা জানাজানি হতেই বিপাকে পড়েন প্রধানশিক্ষক। বিষয়টা ধামাচাপা দিতে স্কুলের পক্ষ থেকে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ করে টাকা ফেরতের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে সেখানে কোথাও টেস্টে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ ছিল না। নির্দেশিকায় বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফর্ম ফিলআপ করার জন্য ১০০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই টাকা জমা দেওয়ার লেট ফাইন রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
ওই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র বিশাল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘হেডস্যর (প্রধানশিক্ষক) ফোন করে বললেন, তোদের ফাইন লাগবে। পাশ করিয়ে দেব। ফাইন দিতে ১০০০ টাকা লাগবে। আমরা যারা ফেল করেছি তাদের জন্য এটা ফাইন। কিছু কম করার কথাও বলেছিলাম কিন্তু শোনেননি। এই রকম আমরা প্রায় ৭২ জন টাকা দিয়েছি।’’ একই অভিযোগ ওই স্কুলের ছাত্রী দীপিকা মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে সে দিন ছাত্রছাত্রী বা অন্যান্য স্যর-ম্যাডাম কেউই ছিল না। শুধু প্রধানশিক্ষক ছিলেন। ১০০০ টাকা নিয়ে তিনি সাদা খাতায় নাম লিখলেন। আমাদের পার্সোনালি ফোন করে টাকার কথা জানানো হয়েছে। পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা চাওয়া হয়েছ।’’
টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ অস্বীকার করেছেন অলোক। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘স্কুল থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য ছাত্রছাত্রীরা একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই কারণে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।’’ অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াদের থেকে টাকা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যারা ফেল করেছে স্কুলের পরিচালন সমিতি তাদের পাশ করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী তাদের অ্যাডমিট কার্ডের ফর্ম ফিলাপের জন্য ফাইন-সমেত একটা টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে বাকি টাকা তাদের ফেরতের জন্যই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করে টাকা চাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করলেন অলোক। তাঁর কথায়, ‘‘ক্ষোভ থেকে ওরা মিথ্যে বলছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ওরা ফেল করেছে, তাই রাগ। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসাতে চাইছে।’’ তবে শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য টাকা নেওয়ার কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি বলে জানান ওই প্রধানশিক্ষক। এমনকি কোনও রশিদও দেওয়া হয়নি বলে মেনে নেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘খামতি রয়েছে অনেক জায়গায়।’’
এই বিতর্কে মুখ খুলেছে স্কুলের পরিচালন সমিতি। সমিতির সভাপতি শিবেশ ভৌমিক বলেন , ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি হাজার টাকা দিলে পাশ করানো হবে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ অপরাধমূলক। এই বিষয় নিয়ে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যদি বেআইনি ভাবে টাকা নেওয়া হয়ে থাকে তা হলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে প়়ড়ুয়াদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy