সরব: কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: প্রদীপ আদক।
গবাদি বিধিই হোক, বা ভিআইপি-দের গাড়ি থেকে লাল বাতি খুলে নেওয়া— কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্ত ঘোষণার বিরোধিতায় ফের সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে, যা অনৈতিক ও অসাংবিধানিক।’’
গবাদি পশু কেনাবেচা নিয়ে কেন্দ্রের নতুন নির্দেশিকার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার মমতাও বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন। তাঁর মতে, ‘‘কেন্দ্রের এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের সব ধর্মনিরপেক্ষ দলের একজোট হওয়া উচিত।’’ ঘটনাচক্রে, এ দিন সিপিএম পলিটব্যুরোও বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে অভিযোগ করেছে। সুতরাং গবাধি বিধি প্রশ্নে কার্যত একই অবস্থানে রয়েছে সিপিএম-তৃণমূল।
এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের নতুন গবাদি বিধি তাঁরা মানবেন না। ‘‘আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। প্রয়োজনে সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে আমাদের যেতে হবে’’— হুঁশিয়ারি মমতার। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক রমজান মাসের সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক খেলা রয়েছে বলে মনে করছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের রাজস্ব আদায় কমবে, চর্মশিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
নোটবন্দির সময় থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কখনও রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ, কখনও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের অভিযোগ করে চলেছেন মমতা। নোটবন্দির পর তাঁর অভিগ ছিল তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে। রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে তিস্তা নিয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে দিল্লি— সেই অভিযোগ তোলেন মমতা। আবার, দূষণের অভিযোগ তুলে কী ভাবে নগরোন্নয়নের মতো রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, কী ভাবে রাজ্যের অর্থ দফতরে লোক পাঠিয়ে দিল্লি অডিট করাতে চায়— সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
আরও পড়ুন: ডাক্তার-স্বার্থ বিরোধী নয় আইন: মমতা
সম্প্রতি বিজেপির লালবাজার অভিযানে পুলিশ লাঠিচার্জ করায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন করে ঘটনার বিবরণ জানতে চান। রাজ্যপালও ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। আইনশৃঙ্খলার মতো রাজ্যের বিষয়ে দিল্লির এই হস্তক্ষেপেও
ক্ষুব্ধ মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ভিআইপি-দের গাড়ি থেকে লাল বাতি খুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেও রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করেনি কেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বিরোধিতা করে চিঠি দিয়েছি। তার কোনও উত্তর না দিয়ে সেই রাতেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হল!’’ মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পাহাড়ে লাল বাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করছেন। যা নিয়ে বিভিন্ন মহল সরব। উত্তরে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, অরূপ কোনও দোষ করেননি। কারণ কেন্দ্রের কাছ থেকে চিঠির জবাব মেলেনি। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেয়নি। তাঁর কথায়— শহরে লালবাতি ব্যবহার না করলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কায় হাইওয়েতে করতে হয়।
গবাদি বিধি নিয়ে মমতার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ গরু যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে ট্যানারির ক্ষতি হচ্ছে না? সেটা কেন রাজ্য দেখছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy