(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ডিভিসির জল ছাড়া এবং বাংলায় বন্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের অভিযোগ নতুন নয়। এ বার জল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে জলযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, বিধানসভা থেকে একটি কমিটি জল নিয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রকে যাবে। সেই সঙ্গে লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে তৃণমূলের সংসদীয় দলও যাবে সেচ মন্ত্রকে। বন্যার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকেও কথা বলে এসেছেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধান প্রসঙ্গ ছিল জলবণ্টন। ডিভিসির জল ছাড়ার বিরোধিতা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এবং ভুটানের নদী প্রসঙ্গ তুলেছেন। জানিয়েছেন, ভুটানের ছাড়া জলে প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের ক্ষতি হয়। বাংলাকে না জানিয়েই কেন্দ্র তাতে সম্মতি দিয়ে দেয়। এ বার ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের আদলে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গড়ে তোলার কথা বলেছেন মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠকেও সেই প্রস্তাব জানিয়ে এসেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে আমি বিশদে কথা বলে এসেছি। বাংলা হল নৌকার মতো। সব জল আমাদের রাজ্যে এসে পড়ে। আমাদের ভুগতে হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রেকর্ড করে এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ভুটান এবং সিকিমে বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গে ক্ষতি হয়। ভুটান থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয়, কিন্তু রাজ্যকে জানানো হয় না। বন্যায় বনভূমি, চা-বাগান শেষ হয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণ ভেসে যাচ্ছে। জলচুক্তি নিয়ে দিল্লিতে আমি নিজের অবস্থান জানিয়ে এসেছি।’’
বন্যার প্রসঙ্গে বাজেটে বঞ্চনার কথাও বলেন মমতা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিহার এবং অসমকে টাকা দেওয়া হলেও বাংলাকে কিছু দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যা নিয়ে বাজেটে বিহার, অসমকে টাকা দেওয়া হল। বাংলা কিছু পেল না। বিজেপি সরকারকে সেলাম।’’
বাংলার সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন চুক্তি করা, চুক্তি নবীকরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘ফরাক্কা চুক্তি আবার নবীকরণ করেছে। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সতর্কবার্তা দেওয়া যায়। কিছুই করা হয়নি। ২০২৬ সালে ফরাক্কা চুক্তি নবীকরণ হবে। ২০২৪ সালেই ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে কমিটি। যে কমিটি পাঠানো হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের ন’জন এবং রাজ্যের এক জন প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে।’’
তিস্তা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘সিকিম ১৪ হাইড্রোপাওয়ার করে তিস্তার জল অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে। প্রতি বছর দার্জিলিং, কালিম্পং জলে ভেসে যায়। তিস্তা বন্ধ করে দিলে তো উত্তরবঙ্গ পানীয় জল, সেচের জল পাবে না।’’
বাংলাদেশের সঙ্গে জলচুক্তির বিষয়ে এ পার বাংলার স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘ফারাক্কা ব্যারেজ কমিউনিটি মানুষের জীবন-জীবিকার উপর নির্ভরশীল। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি। কিন্তু আমি বাংলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কেন্দ্র অগ্রিম চুক্তি করে দিচ্ছে। বাংলা কোনও আলোচনায় থাকতে পারছে না।’’
মালদহে প্রতি বছর ভাঙনের প্রসঙ্গও বিধানসভায় তুলে ধরেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে বন্যা হলে মালদহে ভাঙন হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ৩,৩৭৩ হেক্টর জমি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। রতুয়া, কালিয়াচকে ভাঙন বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি করার সময় জ্যোতি বসুর সঙ্গে আলোচনা করেছিল কেন্দ্র। পরে ওঁকে বাংলাদেশ সংবর্ধনাও দেয়। কিন্তু এ বার বাংলাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফরাক্কা ব্যারেজের পাড় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আগে পালন করুক কেন্দ্র। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করুক।’’
জল-সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, ভবিষ্যতে এর সমাধান কী ভাবে করা যায়, তার উপায় বলে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘নদী সংক্রান্ত বিষয়ে সেচসচিব প্রতি দিন আমাকে জানান। আমি সব খবর রাখি। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিই। ৫০০ কোটি টাকার বাঁধ আমরা নির্মাণ করেছি। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে পাঁচ লক্ষের বেশি পুকুর কেটেছি। ২,২৩২ কোটি টাকা খরচ করে লোয়ার দামোদর বেসিন করেছি। এতে বর্ধমানে বন্যা কমবে।’’ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জল নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, জানান মমতা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান। পাশাপাশি কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শুনলাম ডিভিসির বেসরকারিকরণ হচ্ছে? রেল থেকে জেল, সব ওরা বেসরকারি করে দেবে। দেশের ঐক্যকেও বেসরকারি করে দেবে।’’
জল নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রকে জানাতে বিধানসভার কমিটি যাবে সেচ মন্ত্রকে। মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর বিধানসভার স্পিকার জানান, পরিষদীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটি গঠন করা হবে। বিধানসভায় যা আলোচনা হল, তার কপি দলের সাংসদদের কাছেও পাঠিয়ে দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল জল-সমস্যা নিয়ে দিল্লিতে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy