ফাইল চিত্র।
নতুন প্রজন্মের উঠে আসা মানে পুরনোদের ‘অমর্যাদা’ করা নয়— নবগঠিত রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় এই বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা সংগ্রাম করে এসেছেন তাঁরা দলটাকে জানেন। আর যাঁরা সংগ্রাম করে আসেননি তাঁরা এক এক জন নিজেকে ভগবানের বাবা বলে ভাবছেন।’’
রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী কী দিশা দেবেন, সে দিকে নজর ছিল সকলের। পর্যবেক্ষকদের মতে, যাঁরা পুরনো তাঁদের কোনও ভাবেই খাটো করা মেনে নেবেন না, মমতার বার্তায় তা স্পষ্ট। তৃণমূলে পুরনো এবং নবীনের মধ্যে একটি ভেদরেখা তৈরি হচ্ছে বলে কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন। এ দিনের বক্তব্যে তা নিয়ে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই সঙ্গে এ দিনও দলের নেতা-মন্ত্রীদের জীবনচর্চার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
এ দিনই ছিল তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি, এই দিনটিকে দলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করে দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন মমতা। এই সময়ে দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাখ্যা করতে এ দিন নতুন রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। সেখানেই জেলায় জেলায় দল পরিচালনায় তৃণমূলনেত্রী পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। চলতি মাসের ২০ তারিখের পরে জেলা ও ব্লক স্তর পর্যন্ত দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হবে বলেও এ দিনের বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠে আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন সভাপতি অজিত মাইতির অনুপস্থিতি ঘিরে। ওই জেলা থেকেই চলতি মাসে জেলা সফর শুরু করতে চলেছেন মমতা। সে কথা উঠতেই তিনি খোঁজ করেন অজিতের। তাঁকে জানানো হয়, নতুন রাজ্য কমিটিতে অজিত নেই। জেলা সভাপতি পদেও নেই তিনি। তখনই জেলার বর্তমান নেতৃত্বের খোঁজ করেন তিনি। এই নবীন নেতাদের সঙ্গে খুব বেশি পরিচয় না থাকার কথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘কীসের সভাপতি?’ তার পরেই তিনি বলে দেন, জেলা সফরে তাঁর যে দলীয় বৈঠক করার কথা রয়েছে তার আয়োজন করতে হবে অজিতকে। তাঁকেই সেই বৈঠকের আহ্বায়ক করতে বলা হয়।
নবীন- প্রবীণ আলোচনায় আসে হুগলির আরামবাগ। সেখানেও এই টানাপড়েন রয়েছে। দল বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে এখানে সভাপতি করলেও এ দিন মমতা খোঁজ করেন দিলীপ যাদবের। এখানেও পুরনো নেতা দিলীপকে সংগঠন দেখার কথা বলেন তৃণমূলনেত্রী। তবে সেই কাজে স্নেহাশিস ও স্থানীয় অন্য নেতাদের সঙ্গে নিতেও বলা হয়েছে দিলীপকে।
১০ তারিখে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ফের জেলা সফর শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকের পরে জেলার একেবারে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি। একই ভাবে অন্য জেলাগুলিতেও প্রশাসনের পাশাপাশি দলের বৈঠক চলবে। বৈঠকের পরে মমতা সাংবিদক বৈঠকে বলেন, ‘‘সব সময় উপরতলার বার্তা নীচে পর্যন্ত যায় না। সেই জন্য আমি সব জেলায় বৈঠক করব।’’ ঝাড়গ্রামেও একই কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি।
দলকে না জানিয়ে ডিএমকে-র একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। নাম না করে বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘ডিএমকে আমাদের বন্ধু দল। তবু দলকে জানিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কেউ তো জানতেন না!’’ মহুয়া অবশ্য এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। পারস্পরিক বিবাদে লাগাতার সংবাদে রয়েছেন কোচবিহারের বিধায়ক উদয়ন গুহ, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং জেলা সভাপতি পার্থপ্রতীম রায়। তাঁদেরও এ দিন সতর্ক করেছেন মমতা। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, সাংসদ সৌগত রায় ও স্থানীয় পুরপ্রধানের মধ্যে বিরোধের কথা তুলেও তাঁদের সংযত থাকার কথা বলেন তৃণমূলনেত্রী। মদনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বলতে শুরু করলে কিছু খেয়াল থাকে না!’ পূর্ব মেদিনীপুরের তুষার মণ্ডল ও আলিপুরদুয়ারের মৃদুল গোস্বামীর কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা।
দল ও শাখা সংগঠনের কমিটি নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ এসেছে। সেগুলি দেখে চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে নতুন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
এ দিন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy