Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

অশান্তি ঠেকাতে আংশিক বন্ধ ইন্টারনেট, উস্কানির অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী

এ দিনও শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি।

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
Share: Save:

নয়া নাগরিকত্ব আইন ঘিরে অশান্তি অব্যাহত রবিবারেও। কিছু জায়গায় পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে শান্ত হলেও নতুন নতুন জায়গায় গোলমাল ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ করেছে প্রশাসন। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়েছে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশেও। পুলিশও পথে নেমে হিংসাত্মক বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছে। আবার কয়েকটি এলাকায় শান্তির বার্তা দিতে পথে নেমেছে নাগরিক সমাজ।

এ দিনও শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘‘কিছু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় গোষ্ঠী বাইরে থেকে লোক এনে উস্কানি দিচ্ছে এবং তাদের প্ররোচনায় এক শ্রেণির লোক যে ধরনের হঠকারী কাজকর্ম শুরু করেছে, তা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাংলার ঐতিহ্য।’’ দিল্লির খবর, এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে কত নিরাপত্তা বাহিনী লাগবে, তা জানতে চান। তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রের বাহিনী পাঠানোর চেয়ে অনেক জরুরি বিজেপির বাহিনী এবং তার সহযোগীদের সংযত রাখা। সন্ধ্যায় বাড়িতে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। হিংসাত্মক কাজকর্ম যারা করে চলেছে, তাদের গ্রেফতারে স্থানীয় পুলিশ দেরি করছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে যেমন প্রয়োজন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন ব্যবস্থাই নিতে হবে।

শনিবার সাঁতরাগাছিতে বিক্ষোভের আগুনে পুড়েছে গাড়ি। রবিবার সেখানেই খেলা খুদেদের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এই পরিস্থিতিতে টহলদারি বাড়াতে এবং থানাগুলিকে স্থানীয় নাগরিক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জনজীবন ব্যাহত করতে দেওয়া হবে না। পুলিশকর্মীদের ছুটি নিতে নিষেধ করেছে লালবাজার।

এ দিন বড় ধরনের গোলমাল হয়েছে মূলত মুর্শিদাবাদের সুতি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রায়। সুতির দফাহাটে অন্তত ৭০টি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। চলে লুটপাটও। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, পুলিশ গুলি চালিয়েছে। জেলার এসপি মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘পুলিশ গুলি চালায়নি। তবে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে।’’ মুর্শিদাবাদে আরও কয়েকটি জায়গায় অশান্তি এবং ভাঙচুর হলেও পুলিশের তৎপরতায় বেশির ভাগ জায়গায় তা থামানো গিয়েছে।

আরও পড়ুন: পিছনে কারা? অশান্তি মোকাবিলায় মুখ্য়মন্ত্রীর বৈঠক প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে

এ দিন সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রা স্টেশনে এবং ট্রেনে ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টেশন মাস্টারের ঘর ও বুকিং অফিস। রেলকর্মীরা পালিয়ে বেঁচেছেন। পুলিশকে ঢিল ছোড়া হয়। পাল্টা লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে হাঙ্গামাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

শান্তির বার্তা দিতে মালদহের মোথাবাড়িতে জনতার মিছিলে হাতে হাত ধরে হেঁটেছেন ইমাম-পুরোহিত-পাদ্রিদের অনেকে। সকলেই জানালেন, নতুন নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে তাঁরাও। কিন্তু সেই আন্দোলন হোক শান্তিপূর্ণ ভাবেই। এর পরেই বহু এলাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়েছে। মুর্শিদাবাদের মুখ্য ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার নামে জেলা জুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে, তা যেন যুদ্ধের চেহারা না নেয়। আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি কাম্য নয়।’’ বাগনানে শান্তি মিছিল করে নাগরিক সমাজ। শান্তি-মিছিল হয় হুগলির ফুরফুরাতেও।

রবিবার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে তৃণমূল। শনিবার আন্দোলনের জেরে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকা অশান্ত হয়েছিল। সেখানে মিছিল করেন স্থানীয় বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় মিছিল, পথসভা ও পথ অবরোধে শামিল হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। হাওড়ার আমতা, পাঁচলা এবং জগৎবল্লভপুরের একাধিক জায়গায় রাস্তা অবরোধ করা হলেও অশান্তি হয়নি। রাস্তা অবরোধ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকাতেও।

ডানকুনি উড়ালপুলের নীচে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খণ্ডঘোষের পলেমপুরে বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষও বাধে। দু’পক্ষের লোকই গ্রেফতার হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy