— প্রতীকী চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ৬টি আসনের উপনির্বাচনে ‘ছয়ে ছক্কা’ মারার পরে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’য় এখন সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার ভরাডুবির পরে এমনটাই দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৯৯-এ পৌঁছনোর পর দৃশ্যতই প্রতাপ বেড়েছিল তাদের। সংসদের বাইরে এবং ভিতরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল কংগ্রেস। রাজনৈতিক নানা অঙ্কে তাদের প্রতি দীর্ঘদিনের ‘অ্যালার্জি’ও কিছুটা প্রশমিত রাখতে হয় তৃণমূলকে। কিন্তু রাজনৈতিক মহল আজ বলছে, কংগ্রেসের সেই দাপট ক্ষণস্থায়ী হল। আর তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের ব্যর্থতায় কংগ্রেস আজ ‘পুনর্মূষিক ভব’! বিরোধী জোটে শেষ কথা বলার জায়গায় আর নেই মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীরা। তৃণমূলের এই মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “তৃণমূল তো মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড কোনটাতেই লড়েনি। ফলে এই বিষয় নিয়ে পরে কথা বলব।”
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “তৃণমূল বাংলার উপনির্বাচনে ছ’টি আসনেই দাপটের সঙ্গে জিতেছে। বিজেপি ছাড়াও আমরা ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের দু’টি দলের সঙ্গে লড়াই করেছি, কংগ্রেস এবং সিপিএম। এই দু’টি দল প্রত্যেকটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। এটা মনে রাখা দরকার, ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকে কোনও দলের সঙ্গে আমাদের কোনও নির্বাচনী জোট নেই। ফলে ‘ইন্ডিয়া’ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনও নেই।” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই বক্তব্যের ঝাঁঝেই স্পষ্ট, বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেসকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচিতিকে সংযুক্তও করতে চাইছে না জোট সদস্য হিসাবে। বরং ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ে বিজেপির সামনে কংগ্রেস যে বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে, সেটাই ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল যে বারবারই একক লড়াইয়ে বিজেপিকে বড় ব্যবধানে হারাচ্ছে— এই ভাষ্যকেই সামনে আনছে তারা।
প্রসঙ্গত আজ সন্ধ্যায় তাঁর বিজয়-বক্তৃতায় মোদীও কংগ্রেসকে ‘পরজীবী’ বলে নিশানা করে জানিয়েছেন, কংগ্রেস নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে
রাখার জন্য আঞ্চলিক দলগুলিকে ব্যবহার করছে।
আজ কংগ্রেসের ভরাডুবির বাজারে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পুরনো অভিযোগকে ঝালিয়ে নিতে চাইছে যে, কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলির মধ্যে লোকসভার আগে আসন রফার বিষয়টিকে ইচ্ছা করে দেরি করিয়ে দিয়েছিল। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস ভেবেছিল, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভায় ভাল ফলাফল করে নিজেদের বাড়তি শক্তি নিয়ে দরকষাকষির টেবিলে বসবে। কিন্তু বাস্তবে দু’টি রাজ্যই তাদের হাতছাড়া হয়।
শুধু কংগ্রেসই নয়, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অন্য দলগুলির থেকেও বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে মমতার ট্র্যাক রেকর্ড যে অনেক ভাল, সেটাও তুলে ধরা হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। গত জুলাই মাসে মহারাষ্ট্রে অনন্ত অম্বানীর বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই গিয়েছিলেন মমতা। সেই সফরে মাতোশ্রীতে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে পাশে নিয়ে সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে মহাবিকাশ আঘাড়ীর হয়ে মমতা প্রচার করবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে তিনি যে সেই সিদ্ধান্ত বদলান, তা-ও আজ তুলে ধরেছে তৃণমূল।
সে সময় কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, বিরোধী পক্ষে উদ্ধবের শিবসেনা, শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং কংগ্রেসের প্রার্থী এবং তাঁদের নেতারা রয়েছেন। ফলে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট করতে চান না তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ তৃণমূলের বক্তব্য, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভার ফলের প্রভাব জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিতে পড়বে। আপাতত সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী দলগুলির সমীকরণ কী দাঁড়ায়, এ বার তার দিকেই নজর রাখতে চাইছে রাজনৈতিক শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy