Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪

মমতার নীরবতা উস্কে দিল দুই মহকুমার বিতর্ক

ঝালদা ও মানবাজারকে পৃথক মহকুমা গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু পুরুলিয়া জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়টিকেই এড়িয়ে গেলেন। এক সাংবাদিক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সোমবার জানতে চেয়েছিলেন, ওই দুই মহকুমা গড়ার কাজ কী পর্যায়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’’ এরপরেই জেলাবাসীর অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার বিষয়টি তৃণমূল রাজ্য সরকার ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৩:৫৪
Share: Save:

ঝালদা ও মানবাজারকে পৃথক মহকুমা গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু পুরুলিয়া জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়টিকেই এড়িয়ে গেলেন।

এক সাংবাদিক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সোমবার জানতে চেয়েছিলেন, ওই দুই মহকুমা গড়ার কাজ কী পর্যায়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’’ এরপরেই জেলাবাসীর অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার বিষয়টি তৃণমূল রাজ্য সরকার ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

পুরুলিয়া জেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের মানবাজার ও পশ্চিম প্রান্তের ঝালদা এই দুই প্রাচীন জনপদকে মহকুমা শহর ঘোষণার দাবি অনেকদিনের। ১৮৩৩ সালে জঙ্গলমহল জেলা ভেঙে মানবাজারকেই মানভূম জেলার সদর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাঁচ বছর পরে মানভূমের সদর মানবাজার থেকে পুরুলিয়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে ঝালদাই ছিল পঞ্চকোট রাজবংশের প্রথম রাজধানী। পরবর্তীকালে এই রাজবংশ বিভিন্ন সময়ে তাঁদের রাজধানী বদলে শেষে ১৮৩২ সালে কাশীপুরে এসে থিতু হয়। গবেষকদের মতে, আনুমানিক ৮০ খ্রীষ্টাব্দে ঝালদায় এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তাই ইতিহাস থাকলেও দু’টি জায়গাই এখনও মহকুমা সদর হিসেবে গড়ে না ওঠায় বাসিন্দাদের হতাশা দীর্ঘদিনের।

জেলা সদর পুরুলিয়া থেকে দূরে থাকা ব্লকগুলিকে নিয়ে এই দুই মহকুমা শহর গড়ে তোলার দাবি অনেকদিনের। ঝালদার তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোও সরব হয়েছিলেন ঝালদাকে মহকুমা হিসেবে গড়ে তুলতে। অবশেষে ২০০৮ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঝালদায় একটি পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসে ঘোষণা করেন, সরকার ঝালদা ও মানবাজারকে মহকুমা হিসেবে গড়ে তুলবে। জেলার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ঝালদা, বাঘমুণ্ডি, কোটশিলা, জয়পুর। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের বান্দোয়ান, মানবাজার, বোরো (মানবাজার ২), পুঞ্চা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন স্বপ্ন দেখেছিলেন অফিস-কাছারির কাজকর্মে এ বার থেকে এতটা পথ ঠেঙিয়ে তাঁদের পুরুলিয়া শহরে ছুটতে হবে না। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শেষ পর্যন্ত শিকে ছেঁড়েনি। তৃণমূল সরকারও কি সেই দাবিপূরণ করবে না? বাসিন্দাদের এই প্রশ্নের জবাবে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো শুধু বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি।’’ বিষয়টি নিয়ে সোমবার মুখমন্ত্রী উন্নয়ন বৈঠকেও কোনও আলোচনা হয়নি। মানবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের পরিষদীয় সচিব সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, ‘‘মানবাজারকে মহকুমা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে বলে জানি। কিন্তু তা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে বলতে পারব না। সোমবারের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’’

এরপরেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার ঝালদা ও মানবাজারকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণাক বিষয়টি নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীরও কথা হয়েছিল। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও উচ্চ আদালতের অনুমতির জন্য আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখন যদি বলেন তিনি কিছু জানেন না, তাহলে আমরা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।’’

বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ঝালদা ও মানবাজারকে মহকুমা হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কোন কোন ব্লকগুলিকে নিয়ে দু’টি মহকুমা গড়ে উঠবে তাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তবে মহকুমা গড়তে হলে আদালতের অনুমতি লাগে। সেই প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে। তারমধ্যেই রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন চলে আসায় চূড়ান্ত কাজটিই হয়নি। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার চার বছরে সেই শেষ কাজটুকুও করতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও খবরও রাখেননি। আমরা হতাশ।’’

বামফ্রন্ট সরকারকে পরাস্ত করে রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও রাজনৈতিক ভাবে ঝালদা এলাকায় তৃণমূল এখনও তাদের অস্তিত্ব কায়েম করতে পারেনি। বাসিন্দাদের অনুযোগ, ঝালদায় না হয় তৃণমূল এখনও সে ভাবে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি, কিন্তু মানবাজার এলাকায় তো তৃণমূলেরই জয়জয়কার। তবু কেন বিষয়টি তৃণমূল সরকার অবহেলা করছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE