Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঘরছাড়া মজিদ এ বার কমিটি ছা়ড়া, ক্ষোভ দলে

বাম জমানায় তাঁর নামে ভয়ে কাঁপতেন বিরোধীরা! পরিবর্তনের জমানায় দাপট হারিয়ে তিনি ঘরছাড়া। এ বার সিপিএমই তাঁকে দলে কোণঠাসা করে ফেলল! উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ চলে গেলেন মজিদ আলি! এ বাংলার রাজনীতি যাঁকে মজিদ মাস্টার নামে চেনে। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে বিরোধীদের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখন জেলায় দলের মধ্যেই প্রশ্ন, ঘরছাড়া হয়েও সিপিএমের হয়ে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৪:৪১
Share: Save:

বাম জমানায় তাঁর নামে ভয়ে কাঁপতেন বিরোধীরা! পরিবর্তনের জমানায় দাপট হারিয়ে তিনি ঘরছাড়া। এ বার সিপিএমই তাঁকে দলে কোণঠাসা করে ফেলল!

উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ চলে গেলেন মজিদ আলি! এ বাংলার রাজনীতি যাঁকে মজিদ মাস্টার নামে চেনে। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে বিরোধীদের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখন জেলায় দলের মধ্যেই প্রশ্ন, ঘরছাড়া হয়েও সিপিএমের হয়ে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। এই অবস্থায় তাঁকে বাদ দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হল? সেই সঙ্গেই জেলা কমিটি উত্তপ্ত নতুন নামের অন্তর্ভুক্তি ঘিরেও। যে অশান্তির জেরে রবিবার জেলা কমিটির বৈঠকে আপত্তি জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন রাজারহাটের নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়। যাঁর পুরসভা এলাকায় ভোট আসন্ন!

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে এ বার সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মনোনয়ন শান্তিতে মেটেনি। জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন ঘিরে মতবিরোধ তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। এক দিকে যেমন মজিদের বাদ পড়া নিয়ে ঘোর আপত্তি দলের একাংশের, তেমনই রাজারহাটের বলাই চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতার সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তাপসবাবুরা। দলের শৃঙ্খলা মেনে বিক্ষুব্ধেরা কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কিন্তু দলের অন্দরে তাপস, আব্দুস সাত্তার, রমলা চক্রবর্তী, পল্টু দাশগুপ্তদের বক্তব্য, তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে পারবেন, এমন মুখদের নেতৃত্বে উপযুক্ত জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব পূর্ণ সুস্থ নন। জেলা সিপিএমে এখন নেপালদেব ভট্টাচার্যদের দাপট। প্রথমে সম্মেলন-পর্ব এবং এখন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গড়া নিয়ে জেলা সিপিএমের দ্বন্দ্ব যে ভাবে প্রকট হয়ে উঠল, তাতে বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে ছাপ পড়তে পারে বলেই দলের একাংশের আশঙ্কা।

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে রবিবার বারাসতে যে নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে, তাতে নতুন মুখ তিনটি। পানিহাটির অহিভূষণ (দুলাল) চক্রবর্তী, বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ এবং ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে সদ্য রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে অবশ্য জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। পুরনো সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে অমিতাভ বসু ও অমিতাভ নন্দী আগেই প্রয়াত। আর এ বার বাদ গিয়েছেন মজিদ, হরিমোহন নাথ ও নীহারেন্দু চট্টোপাধ্যায়। নতুন নাম নিয়ে আপত্তি তুলে বিমান, সূর্য, গৌতমবাবুদের সামনেই বৈঠক ছেড়ে গিয়েছেন তাপসবাবু। পরে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এটা। তা নিয়ে কিছু বলব না।’’ তবে তাপস-ঘনিষ্ঠ শিবির আঙুল তুলছে রবীন মণ্ডলদের দিকে।

তবে তার চেয়েও বেশি প্রশ্ন উঠছে মজিদকে নিয়ে। দলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, মজিদকে ছেঁটে ফেলে জেলায় সংখ্যালঘু মহলে ভুল বার্তা দেওয়া হল। সিপিএমেরই অভিযোগ, চার বছরেরও বেশি তাঁর শাসনের বাড়িতে তৃণমূলের বাধায় ঢুকতে পারেন না মজিদ। দীর্ঘদিন বারাসতে দলীয় কার্যালয়ে কাটানোর পরে এখন সস্ত্রীক কাজীপাড়ায় ঘর নিয়ে থাকেন। ঘরছাড়া হয়েও পঞ্চায়েত ভোটে দলের হয়ে পরিশ্রম করেছেন, আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের প্রশ্ন, ‘‘মজিদ মাস্টারের ভাবমূর্তি নিয়ে আপত্তির জন্য আগেই তাঁকে বাদ দিলে অন্য কথা ছিল। কিন্তু এখন তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে কী বার্তা দেওয়া হল? যাঁরা ঘরদোর হারিয়ে, জীবন বিপন্ন করেও দলের জন্য লড়ছেন, তাঁরা কী বার্তা পেলেন?’’

স্বয়ং মজিদ অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘বাঙালির যা গড় আয়ু, তার চেয়ে বেশি বয়সেই আমি বেঁচে আছি। বছরদুয়েক আগেই আমি অব্যাহতি চেয়েছিলাম। এটা একটা ভদ্রলোকের মতো সিদ্ধান্ত হল! এখন আমার বারাসত-২ জোনাল কমিটিতেই মন দিতে পারব।’’ আর দলের মধ্যেকার ক্ষোভ-বিক্ষোভকে ‘স্বাভাবিক ব্যাপার’ আখ্যা দিয়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘যে তিন জন বাদ গিয়েছেন, তাঁরা অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আর যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতেই নির্বাচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE