ফ্ল্যাট কিনে লর্ডস থেকে কসবায় এসেছেন এক মহিলা। স্থানীয় বিএসএনএল-এর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে ল্যান্ড লাইনটি স্থানান্তরিত করার সঙ্গে চেয়ে নিয়েছিলেন অতিরিক্ত ব্রড ব্যান্ড পরিষেবাও। মাসখানেকের মধ্যে নতুন বাড়িতে টেলিফোন-সহ ব্রডব্যান্ড বসেও যায়। ব্যস, ওই পর্যন্তই।
ঠিক দু’দিন পরেই খারাপ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড পরিষেবা।
তার পরে গত আড়াই বছরে মোট সাত বার বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছেন মহিলা। লাইন চালু হয়নি। উল্টে বাড়িতে ব্রডব্যান্ড বসানোর জন্য তিন হাজার টাকার বিল পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএনএল। এ নিয়ে বলতে গেলে একচেঞ্জ জানিয়েছে, ‘আগে বিল জমা দিন। তার পরে কথা হবে।’ সুরাহা না হওয়ায় ওই বিল না মিটিয়ে এক বেসরকারি সংস্থার পরিষেবা নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন ওই মহিলা।
কসবারই বাসিন্দা আর এক ব্যক্তিও বিরক্ত হয়ে অনেক আগেই বিএসএনএল-এর মোবাইল নম্বরটি অন্য পরিষেবায় নথিভুক্ত করেছেন। বহু দিনের পুরনো বলে ল্যান্ডলাইনটি রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত ভেঙে পড়া পরিষেবায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত সেটিও সম্প্রতি ছেড়ে দিলেন তিনি। এবং জানালেন, ওই ফোন ছাড়তে গিয়েও যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাঁকে।
শুধু এই দু’জনই নন, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার বিএসএনএলের এ হেন কর্মসংস্কৃতিতে গ্রাহকেরা কম বেশি সকলেই তিতিবিরক্ত। যত দিন যাচ্ছে, ততই নামছে পরিষেবার মান। বিএসএনএল কর্তারা মুখে যা-ই বলুন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে পারলে সব গ্রাহকই এখনই ওই পরিষেবা ছাড়তে চান। শেষ চার বছরে বিএসএনএলের গ্রাহক সংখ্যা যে ভাবে কমছে, তা দেখলেই স্পষ্ট হবে পরিষেবার মান ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে।
সংস্থা সূত্রের খবর, ২০১১ সালে ল্যান্ডলাইন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষেরও বেশি। ক্রমশ কমতে কমতে সেই সংখ্যা এখন সাড়ে ৭ লক্ষের কাছাকাছি। ওই সময়ে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষ। তা এখন ৭ লক্ষের একটু বেশি। অর্থাৎ অর্ধেকেরও অনেক নীচে। এমনকী এ বছর লাভ হওয়া দূরে থাক, উল্টে আয় কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
কেন এই হাল?
বিএসএনএলের কর্তারা বলছেন, ল্যান্ডলাইনের ক্ষেত্রে মূল অসুবিধাই হল গ্রাহকের চাহিদার পরিবর্তন। তাঁরা এখন আর চান না, এক জায়গাতেই ফোন থাকুক। ওই কর্তাদের বক্তব্য, সমীক্ষায় উঠে এসেছে— যে ভাবে মানুষের কাজের ধরন পাল্টাচ্ছে, তাতে দেখা গিয়েছে গ্রাহকেরা ল্যান্ডলাইন থেকে মুখ ফিরিয়ে মোবাইলেই কাজ সারছেন। কিন্তু ব্রডব্যান্ড? বিএসএনএল কর্তাদের বক্তব্য, বেশির ভাগ মানুষই এখন মোবাইলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ফলে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকও কমছে।
তবে অনেকেরই অভিযোগ, সংস্থার কর্তারা যা-ই বলুন না কেন, গ্রাহক সংখ্যা কমার পিছনে আর একটি কারণও রয়েছে। তা হল বিএসএনএলের কর্মসংস্কৃতি। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিএসএনএলের কোনও যন্ত্র এক বার খারাপ হলে, তা মেরামতির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় একই অভিযোগের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই মেরামত করে
দেন তাঁরা।
কর্মসংস্কৃতির হাল যে ক্রমশই খারাপ হচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিএসএনএলের কর্তারাও। সংস্থা সূত্রেরই খবর, সম্প্রতি এ রাজ্যের কর্মসংস্কৃতির প্রসঙ্গ তুলে বিএসএনএলের সর্বোচ্চ কর্তা বিহারে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, চেষ্টা করেও এখানে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে পারেননি তিনি। তাই চলে যেতে বাধ্য হলেন। ফলে কর্তারাই যেখানে চলে যাচ্ছেন, তখন গ্রাহকেরা থাকবেন কেন?
তবে মোবাইল পরিষেবার ক্ষেত্রে মূল অসুবিধাগুলি একটু আলাদা। এ ক্ষেত্রে সময়মতো প্রযুক্তিগত ও পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে না পারাই এখন বিএসএনএল মোবাইলের গ্রাহক বাড়ানোর ক্ষেত্রে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থার কর্তারা বলছেন, মোবাইল টাওয়ার খারাপ হওয়া, দূষণের কারণে অনেক টাওয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে সংস্থার সুযোগসুবিধা সম্পর্কে সচেতন না করাতেই পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা।
প্রশ্ন উঠেছে, যার উপর ভিত্তি করে সব সংস্থা উন্নত পরিষেবা দেয়, সেই টু-জি, থ্রি-জি বা ফোর-জি ‘স্পেকট্রাম’ একই থাকা সত্ত্বেও বিএসএনএল পারছে না কেন?
কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সরকারি ফাইলের লাল ফিতের ফাঁসে কাজের দেরি আর কর্মীদের মানসিকতা। দুটোই দায়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy