Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ভাল’ মানুষের টানেই লাভলি ফের জেলমুখী

মাত্র দেড় বছর আগে শ্বশুর খুনের ঘটনা লাভলির জীবন আকাশ-পাতাল পাল্টে দিয়েছিল। তখন নিজের হাতে ‘বুটিক’ চালাতেন। কিন্তু জেলে যাওয়ার পরে সে সবই লাটে ওঠে। কিন্তু তাতে দমে যাননি লাভলি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

জেলে ছিলেন মাত্র দেড় বছর। কিন্তু ওই দেড় বছর তাঁকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। এখন জেলের বন্দিদের কর্মমুখী করতে তাই ফের জেলমুখী লাভলি।

আলিপুর মহিলা জেল থেকে বেরিয়ে লাভলি অধিকারী ফিরে গিয়েছেন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। এ বার অন্য ভূমিকায়। সেখানকার বন্দিদের পাটের জিনিসপত্র তৈরির ‘দিদিমণি’ এখন লাভলিই। যদিও ন্যাশনাল জুট বোর্ডের প্রশিক্ষক বন্দিদের পাটের তৈরি জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরে সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ এখন লাভলিরই কাঁধে। আর তাঁর কাজ নিয়ে জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী থেকে শুরু করে ‘রক্ষক ফাউন্ডেশন’-এর চৈতালী দাস— সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

মাত্র দেড় বছর আগে শ্বশুর খুনের ঘটনা লাভলির জীবন আকাশ-পাতাল পাল্টে দিয়েছিল। তখন নিজের হাতে ‘বুটিক’ চালাতেন। কিন্তু জেলে যাওয়ার পরে সে সবই লাটে ওঠে। কিন্তু তাতে দমে যাননি লাভলি। জেলে গিয়ে বন্দিদের সঙ্গে ছবি আঁকার কাজ শুরু করেন। ভর্তি হয়ে যান ইংরেজি শেখার ক্লাসেও।

২০১৬ সালের শেষ দিকে আলিপুর মহিলা জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে লাভলি দেখেন, বাইরের জগৎ তাঁর জন্য অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। সে সময়েই তিনি যোগাযোগ করেন চৈতালীর সঙ্গে। চৈতালী বলেন, ‘‘ইংরেজি ক্লাস নিতে গিয়েই দেখেছিলাম, ও খুব সিরিয়াস। তাই ওঁকে বলি, দমদমের কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না। এক কথায় রাজি হয় লাভলি।’’ তার পরে ন্যাশনাল জুট বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দমদম জেলের পাটজাত জিনিসপত্র তৈরির কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন লাভলি। চৈতালী বলেন, ‘‘ও কাজটাকে খুব উপভোগ করে। লাভলির মতো প্রাক্তন বন্দিদের দেখে বর্তমান বন্দিরা কাজে অনুপ্রেরণাও পায়।’’

বন্দিদের সঙ্গে কাজে যুক্ত হতে পেরে খুশি লাভলিও। তিনি বলেন, ‘‘জেল আমার কাছে তিক্ত অতীত নয়। বরং সুখের। ওখানে আমি খুব ভাল ছিলাম।’’ তাঁর মতে, ‘‘জেলে অনেকে নির্দোষ। অনেকে আবার পরিস্থিতির চাপে কোনও অপরাধ করে ফেলেছেন। কিন্তু সারা জীবন কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে চলছেন। কিন্তু মানুষগুলো খারাপ নয়। ওঁদের পাশে থাকতে পেরে ভাল লাগে।’’

লাভলি ‘ফিরে আসা’য় খুশি আলিপুর মহিলা জেলে আঁকার শিক্ষক চিত্ত দে-ও। তাঁর কথায়, ‘‘শিল্পসৃষ্টিকে হাতিয়ার করে ও আবার মূলস্রোতে ফিরে আসছে। এর থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE