Advertisement
E-Paper

পঞ্চায়েতের ‘খারাপ’ ফলে কি শঙ্কিত শতাব্দী? তড়িঘড়ি শুরু করে দিলেন লোকসভার প্রস্তুতি

অনেকেই বলেন, শতাব্দী রায় তৃণমূলের অন্য তারকা সাংসদদের মতো নন। তিনি নিয়মিত নিজের লোকসভা সংসদীয় এলাকায় যান। বিক্ষোভের মুখে পড়লেও ময়দান ছেড়ে দেন না। আবার ফিরে যান লোকসভা এলাকায়।

শতাব্দী রায়।

শতাব্দী রায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ১৯:৩১
Share
Save

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সে সবের অপেক্ষা না করে বৃহস্পতিবারের বারবেলায় ভোটমুখী দুই রাজ্যের আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে বিজেপি। কিছুটা সেই ধাঁচেই আগামী লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। লোকসভার নির্ঘণ্ট প্রকাশ এখনও অনেক দূরের বস্তু! কিন্তু বৃহস্পতিবারেই মুরারই এবং নলহাটির তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে সভা করেছেন শতাব্দী।

লোকসভা ভোটে তৃণমূল কাদের প্রার্থী করবে, আগের বারের সব জয়ীরা টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তো বটেই, শাসকদলের মধ্যেও কৌতূহলের শেষ নেই। সেই প্রেক্ষাপটে শতাব্দীর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া অনেকের কাছেই ‘অন্য রকম’ মনে হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, শতাব্দী টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে ‘আত্মবিশ্বাসী’। সাংসদের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, জনপ্রতিনিধির কাজ তো বটেই, সাংগঠনিক কাজও শতাব্দী নিষ্ঠার সঙ্গে করে গিয়েছেন। ফলে আত্মবিশ্বাস থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও কর্মিসম্মেলনে শতাব্দী বলেছেন, দল যাঁকেই প্রার্থী করুক, তাঁর জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। উদাহরণ দিতে গিয়ে রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকায় বীরভূমের ভূমিপুত্র সামিরুল ইসলামের প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি। শতাব্দীর কথায়, ‘‘সামিরুলের নাম কে সুপারিশ করেছে? আমি না আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়? তাঁর কাজ দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন।’’

বৃহস্পতিবার শতাব্দীর কর্মসূচিকে লোকসভার কর্মিসম্মেলন হিসাবেই লিখেছে তৃণমূলের মুখপত্র। যদিও বীরভূমের সাংসদ শুক্রবার বলেন, ‘‘এটা কোনও লোকসভার খুঁটিপুজো নয়। আমরা পঞ্চায়েতের ফল বিশ্লেষণ করতে বসেছিলাম।’’ প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে এই মুরারই ও নলহাটি থেকে বিপুল ভোটে ‘লিড’ পেয়েছিলেন শতাব্দী। কিন্তু এ বারের পঞ্চায়েতে এই দুই ব্লকেই তৃণমূলের ফল তুলনায় কিছুটা খারাপ হয়েছে। বেশ কিছু পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে শাসকদলের। সেই কারণে কি শঙ্কিত শতাব্দী? গত ১৪ বছর ধরে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় অনেক বিষয় থাকে। লোকসভা ভোট সম্পূর্ণ আলাদা পরিস্থিতিতে হবে। ফলে শঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।’’ বৃহস্পতিবারের কর্মিসম্মেলনে নলহাটি ও মুরারইয়ের নেতারাও শতাব্দীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। লোকসভায় তৃণমূলের ফল ভালই হবে।

অনেকেই মনে করেন, শতাব্দী তৃণমূলের অন্য তারকা সাংসদদের মতো নন। তাঁর অভিনেত্রী সত্তা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে পুরোদস্তুর ‘রাজনীতিক’ করে তুলতে পেরেছেন তিনি। শতাব্দী নিজের সংসদীয় এলাকায় যান, বিক্ষোভের মুখে পড়েন, কিন্তু ময়দান ছেড়ে দেন না। আবার যান। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বহু সাংসদের এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফল হয়েছে। কিন্তু ক’জন সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে এ ভাবে নেমে পড়েছেন? শতাব্দীর এই তৎপরতাই চোখ টেনেছে অনেকের।

এমনিতে বীরভূমের রাজনীতিতে শতাব্দীর সঙ্গে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। দু’জনের অ-বনিবনা বার বার বেআব্রু হয়েছে। তা নিয়ে জেলার রাজনীতি, তৃণমূলের অন্দরে আলোচনাও চলেছে বিস্তর। কিন্তু এ-ও সবার জানা যে, দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনকেই পছন্দ করেন ভিন্ন কারণে। আবার এ-ও ঠিক, পছন্দ-অপছন্দ যা-ই থাক না কেন, অনুব্রত দলের প্রতীকের প্রার্থীর জন্য উজাড় করে দিতেন। শতাব্দীও হয়তো জানতেন, সংগঠনের ব্যাপারটা ‘কেষ্টদা’ দেখে নেবেন। কিন্তু অনুব্রত এখন জেলবন্দি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বীরভূমের সাংগঠনিক কাজ পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গড়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাতে রয়েছেন সাংসদ শতাব্দীও। দেখা গেল, সাংসদ লোকসভার অনেকটা আগেই তাঁর প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন।

এখন শতাব্দী রায় ‘অভিনেত্রী’ কম। ‘নেত্রী’ অনেক বেশি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}