—নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির নৌকায় সওয়ার হলেন ভীমপুরে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের নেতা বিধান পোদ্দার। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা বিচলিত হলেও জেলা নেতারা এটাকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। বিজেপির দাবি, এতে শুধু ভীমপুর নয়, গোটা জেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির প্রভাব আরও বাড়বে।
কেন দল ছাড়লেন বিধান? তাঁর দাবি, মন্ত্রী রত্না ঘোষ থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু পর্যন্ত তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, দলনেত্রী তাঁকে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী করবেন। সেই মতো তিনি মানসিক প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রও নাকি এক বারের জন্য যোগাযোগ করেননি।
মঙ্গলবার দুপুরে বিধান ভীমপুরে বিজেপির দফতরে গিয়ে ওই দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর কথায়, “এই লুটেরার দল আর করা যাচ্ছে না। ওরা শুধু আমাকে নয়, গোটা রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করছে। এটা আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কংগ্রেসে থাকার সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন বিধান। ১৯৯৬ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়েন এবং সিপিএমের কাছে মাত্র ১৬৯৮ ভোটে পরাজিত হলেন। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে আবারও সুশীল বিশ্বাসের কাছে ৫৪১ ভোটে হারেন। এই সময়ে সিপিএমের হাতে নানা ভাবে নির্যাতিতও হয়েছেন, তৃণমূল করার ‘অপরাধে’ কিছু দিন ঘরছাড়া হয়েও থাকতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু ২০০৩ সুশীল বিশ্বাস সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিলে পরের বিধানসভা ভোটে বিধানের ভাগ্যে আর টিকিট জোটেনি। সুশীলই তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হন।
সেই সময় থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিধান। ২০১৪ সালে সুশীল বিশ্বাসের মৃত্যু হলেও বিধান আর ক্ষমতার মূলস্রোতে ফিরতে পানেননি। উপনির্বাচনে টিকিট পান যুবনেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস। সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো জেলা কমিটির সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছিল বিধানকে। এক সময়ে সেটাও খোয়াতে হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সত্যজিৎ খুন হওয়ার পরে মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখে তাঁকে কিছুটা হলেও তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। দলের তফসিলি জাতি, জনজাতি ও অন্য পশ্চাৎপদ সেলের জেলা সভাপতি করা হয় তাঁকে। কিন্তু কৃষ্ণগঞ্জে টিকিট দেওয়া হয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা প্রমথরঞ্জন বসুকে।
বিগত কিছু বছর ধরে একটি অভিযোগ অবশ্য বিধানের বিপক্ষে গিয়েছে— নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার, বিশেষ করে সুশীল বিশ্বাস যখন প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু বিধান কখনই তৃণমূলের ঝান্ডা ছাড়েননি। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয় সুশীলের স্ত্রী সাধনা পোদ্দারকে। দল তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দিয়েছিল। কিন্তু তিনি পরাজিত হন। বিধানের দাবি, তৃণমূলেরই একটা অংশ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত বিধান যা-ও সামলে-সুমলে ছিলেন, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তার পরেই বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে শুরু করেন তিনি। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “উনি আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে পাওয়াটা একটা বড় পাওনা। দেখুন, আরও চমক আছে।”
যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কটাক্ষ, “বিধান এমন নেতা যে নিজের বুথেই জিততে পারেনি। আমরাই বরং ভারমুক্ত হলাম।” আর মহুয়া মৈত্রের দাবি, “এতে ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ মানুষের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগই নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy