Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Bishnu Mal Murder Case

ফাঁসির সাজার পরেও মুখে হাসি! ‘তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসব’ বলতে বলতে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠল বিষ্ণুর খুনি বিশাল

ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত। তবুও মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি! পুলিশি ঘেরাটোপে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার সময় হাসতে হাসতেই বিষ্ণু মালের খুনি বিশাল দাস বলল, ‘‘তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসব!’’

হাসতে হাসতে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠছে বিশাল দাস।

হাসতে হাসতে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠছে বিশাল দাস। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫৬
Share: Save:

ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত। তবুও মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি! পুলিশি ঘেরাটোপে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার সময় হাসতে হাসতেই বিষ্ণু মালের খুনি বিশাল দাস বলল, ‘‘তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসব!’’

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর হুগলির চুঁচুড়ার বিষ্ণুকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বিশাল এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে বিশাল। এর পর দেহ ছয় টুকরো করে শেওড়াফুলি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। চার বছর আগের সেই ঘটনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিশাল এবং তার সাত সঙ্গীকে সাজা শুনিয়েছে চুঁচুড়া আদালত। বিশাল-সহ ছ’জনের ফাঁসির সাজা হয়েছে। সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে আর এক জনের।

ওই রায়ের পর আদালত থেকে বেরিয়ে প্রথমে নিরুত্তাপই দেখাচ্ছিল বিশালকে। প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার সময় সে দাবি করে, শীঘ্রই সে মুক্তি পাবে! প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার পর অবশ্য তাকে চিৎকার কর নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে দেখা যায় বিশালকে। সম্প্রতি আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার মামলায় বিচার শুরু হয়েছে কলকাতার শিয়ালদহ আদালতে। বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম দু’দিন আদালত চত্বর থেকে বেরোনোর সময় একই ভাবে চিৎকার করতে দেখা গিয়েছিল ওই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে। তার মতোই বৃহস্পতিবার বিশালও প্রিজ়ন ভ্যানের জাল দেওয়া জানলার সামনে মুখ এনে দাবি করে, ঘটনায় আসল দোষীদের ছেড়ে দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে সেই চক্রান্ত হয়েছে। তার কথায়, ‘‘সবাইকে ছেড়ে দিল, আর আমাকে আটকে দিল। আমি কোন ভাল মানুষের ক্ষতি করেছি যে আমাকে এ ভাবে ফাঁসানো হল। পয়সার জোরে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সবাই পয়সা খেয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে আমি কিচ্ছু জানি না। আমাকে জেল থেকে নিয়ে এসেছে। আমার জামাইবাবু, কাকাকে কেস দিয়েছে। আমার মাকে এক মাস আটকে রেখেছিল। আমার মোবাইল শো করলে (প্রকাশ্যে আনলে) সব সত্যি সামনে আসবে!’’

বিষ্ণু খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল বিশাল। যুবতী তাতে সাড়া দেননি। সেই যুবতীর সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বিষ্ণুর। সে কথা জানার পরেই আক্রোশবশত বিষ্ণুকে খুন করেছিল বিশাল। তার শাগরেদরা একে একে গ্রেফতার হওয়ার পর তারাই পুলিশি জেরায় সন্ধান দিয়েছিল, কোথায় কোথায় বিষ্ণুর দেহাংশ ফেলা হয়েছিল। সেই মতো হাত-পা, ধড় উদ্ধার হলেও বিষ্ণুর কাটা মুন্ডুর হদিস মেলেনি। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছিল, বিষ্ণুকে খুনের পর তাঁর কাটা মুন্ডু নিয়ে রাতভর বসেছিলেন বিশাল। তার পর সকাল হলে মুন্ডুটি নিয়ে একটি সাইকেলে বেরিয়ে যায়। দিন কুড়ি পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় কয়েক জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছিল বিশাল। জীবনতলা থানার পুলিশই পরে তাকে চন্দননগর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাকে জেরা করেই বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু মিলেছিল। সেটি উদ্ধার হয়েছিল বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে, প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায়।

ওই মামলায় গত সোমবার মূল অভিযুক্ত বিশাল এবং তার সাত সঙ্গী— রামকৃষ্ণ মণ্ডল, রথীন সিংহ, রাজকুমার প্রামাণিক, রতন ব্যাপারি, বিনোদ দাস, বিপ্লব বিশ্বাস, মান্তু ঘোষ এবং শেখ মিন্টুকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ। মান্তুকে সাত বছরের কারাবাসের সাজা দিয়েছেন বিচারক। বাকিদের ফাঁসির সাজা হয়েছে।

সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছরের লড়াই। বিষ্ণু একটা মেয়েকে ভালবাসত। সেই কারণে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়। মুরগি কাটার চপার দিয়ে টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ওই বীভৎস ঘটনা বিরলতম। আদালত আজ সাত জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। এক জনের সাত বছরের জেল হয়েছে। এই মামলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy