প্রতীকী ছবি।
বছর পাঁচেক আগে ব্যারাকপুরে ভোট প্রচারের অভিজ্ঞতা এখনও হজম করতে পারেননি রোগাটে প্রৌঢ়।
সিপিএম প্রার্থীর হয়ে রোড শো শুরুর আগেই বোমার ধুমধাড়াক্কা! মহিলা ঢাকি, শাঁখ বাজানোর মেয়েরা ঠিকঠাক বাড়ি ফেরা পর্যন্ত লোকশিল্প গোষ্ঠীর কর্ণধার রবি বসুর হাত-পা ঠান্ডা! এখন শাসক পক্ষের অতীন ঘোষ, পরেশ পালদের ডাকে রোড শো-য় শামিল হলে সেই টেনশন নেই। লোকশিল্পের কোনও উপকরণ সরবরাহের বরাত এলে ‘কোন দল’ ডাক দিয়েছে, সেটা জেনে নেওয়া তাই সব থেকে জরুরি।
রনপা-শিল্পী প্রসেনজিৎ সিকদারের অভিজ্ঞতাও কম উদ্বেগের নয়! নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পরে মেদিনীপুর তখন উত্তাল। কাঁথি বাসস্ট্যান্ডে শিশির অধিকারীর এলাকায় পথনাটিকায় রনপা-য় দাঁড়িয়ে ‘হার্মাদ’ হয়েছেন প্রসেনজিৎবাবু। কোথা থেকে উড়ে আসা আধলা ইটের ঘায়ে কপাল ফেটে রক্তারক্তি। প্রাণ নিয়ে পালানোটাই তখন মুশকিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই শিল্পীদের বাদ দিলে রাজ্যে ভোটপার্বণের আমেজে এখনও ফাঁক থেকে যায়। তবে কিছুটা নিরুপায় হয়েই রোড শোয়ের কো-অর্ডিনেটরেরা এখন শাসকপন্থী। রবিবাবু স্পষ্ট বলেন, ‘‘মহিলাদের নিয়ে কাজ মশাই! রুলিং পার্টি (শাসক দল) ছাড়া কে প্রোটেকশন (সুরক্ষা) দেবে!’’ প্রসেনজিৎবাবুও কিছুটা সাবধানি! নিজে রনপা-য় হাঁটা ছাড়াও বিভিন্ন আইটেম সরবরাহ করেন। তবে এ বার ভোটে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়দের পাশাপাশি ব্যারাকপুরে সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের প্রচারেও বরাত সামলেছেন তিনি। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, ‘‘ব্যারাকপুরেরটা বেশি ঝামেলা ছিল না। শুধু কিছু বেলুন আর রনপা। তাই রাজি হয়ে গেলাম।’’
সিপিএমের কনীনিকা বসু ঘোষের হয়েও কয়েক দিন আগেই এন্টালিতে ঢাক, রনপা নিয়ে প্রচারের আয়োজন হয়েছিল। রবিবাবু বললেন, ‘‘লেডিজ় ঢাক কিন্তু সেখানে ছিল না!’’ দমদমে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আমার মনোনয়নে পুরুলিয়ার ছৌ-শিল্পীদের আসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে রহস্যজনক ভাবে ওঁরা ‘না’ করে দিলেন।’’ সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীও এক ধরনের ‘ত্রাস’-এর আবহে প্রচারে মহিলা লোকশিল্পী ব্যবহারের ঝুঁকি অস্বীকার করছেন না!
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ তো শুনিনি। তবে কেউ বিরোধীদের প্রচারে যেতে না-চাইলে সেটা তাঁর দৃষ্টিকোণ। রাজ্য সরকারই যে লোকশিল্পীদের পাশে রয়েছে, এটাও তো স্পষ্ট।’’
সোদপুরের বাসিন্দা, আদতে রাঁচীর বেড়োর মেয়ে পূর্ণিমা ওরাওঁ সেটাও অস্বীকার করছেন না। মাথায় ছোটবড় কলসি নিয়ে ওরাওঁ জনজাতির বিয়ের নাচে দক্ষ পূর্ণিমা সরকারি ভাতা পান। গৃহপরিচারিকার কাজও করেন। তাঁর দলের গায়েন অজয় ওরাওঁ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। নেতাদের নামধাম, সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপির ফারাকও গুলিয়ে ফেলেন পূর্ণিমা। রবিবাবুর কথায়, ‘‘আদিবাসী নাচ, রনপা আর লেডিজ় ঢাকের সব থেকে চাহিদা ভোট প্রচারে। কখনও কখনও কার্টুনও (মিকিমাউস গোত্রের চরিত্র) দিতে হয় দু’-একটা। তবে ওদের চাহিদা বিজয়-মিছিলেই বেশি।’’ প্রসেনজিৎবাবু বললেন, ‘‘সব দলের কাছ থেকে নিয়মিত ডাক পেলেই আমাদের ভাল। ভোট আর পুজোপার্বণেই তো এ-সব শিল্প বেঁচে আছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy