জমে উঠেছে আড্ডা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
এঁদের কেউ কেউ এ বারই প্রথম ভোট দেবেন। স্বাভাবিক ভাবেই কিঞ্চিৎ উত্তেজিত। তবে বুথে পা দেওয়ার আগে নানা বিষয় মাথায় ভিড় করেছে তাঁদের। চাওয়া-পাওয়া তো আছেই। রয়েছে ভোটসন্ত্রাস এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ নিয়ে মতামত। সব মিলিয়ে বাগদার হেলেঞ্চা বি আর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের ভবনের সামনের মাঠে জমে উঠল ভোট-আড্ডা।
রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা নাকি অর্থের বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেন— আমজনতার এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পড়ুয়ারাও এমনটা শুনেছেন। শুনেছেন, চাকরি পেতে হলে ‘দলের লোক’ হতে হয়। আড্ডা তাই শুরুই হল সরকারি চাকরি পাওয়ার বিষয় নিয়ে। কথা শুরু করলেন (প্রথম বর্ষের ছাত্রী) রিয়া বিশ্বাস। তর্ক-বিতর্কের ইন্ধন-সহ আড্ডার সুর চড়া সুরে বেঁধে দিতে-দিতে বললেন, ‘‘সরকারি চাকরি পেতে গেলে তো রাজনৈতিক দল ও নেতাদের উপরে নির্ভর করতে হয়। এ সব এ বার বন্ধ হোক। মেধার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’’ রিয়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পাশ থেকে একজন বললেন, ‘‘আরে, মেধা-টেধা ছাড়। এখন টাকা ছাড়া চাকরি হয় না!’’ কিন্তু রিয়ার মতটাকেই হালকা সমর্থন করে প্রভাস দাস (তৃতীয় বর্ষের ছাত্র) যোগ করলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেই চাকরি মিলবে, এটা কিন্তু ঠিক নয়।’’
পঞ্চায়েত ভোটে বাগদা ব্লকে ব্যাপক সন্ত্রাস ঘটেছিল। বোমাবাজি, গুলি, মারপিট তো ছিলই। ব্যালট-লুট, ছাপ্পার অভিযোগও ছিল। প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়ার আগে অনেকেরই আশঙ্কা, এ বার-ও তেমন কিছু ঘটবে না তো? প্রথম বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ মাঝি যেন নিজেকেই আশ্বস্ত করতে-করতে বললেন, ‘‘আশা করছি, বাগদায় এ বার ভোটের দিন কোনও গোলমাল হবে না। এলাকাবাসী শান্তিতেই ভোট দিতে পারবেন।’’ সুর মেলালেন প্রথম বর্ষের তরুলতা বালা, ‘‘আমাদের এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা রুটমার্চ করছেন। তাই ভরসা পাচ্ছি। আশা করছি, ভোটে এ বার কোনও গোলমাল হবে না।’’ চাকরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আড্ডা শুরু করে দিয়ে তারপরে চুপই ছিলেন রিয়া।
এ বার আবার মুখ খুললেন, ‘‘ভোটে সন্ত্রাস, খুনখারাপি আর দেখতে চাই না। সকলেই যেন সুষ্ঠু ভাবে ভোটটা দিতে পারেন।’’
বাগদার মানুষের বহুদিনের দাবি রেলপথ। মমতা বন্দোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাগদার জন্য রেলপথের ঘোষণা করেছিলেন। জমি সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতো পড়ুয়ারাও হতাশ। প্রথম বর্ষের মৃদুল বিশ্বাসের গলায় ঝরে পড়ল সেই হতাশারা সুর। বললেন, ‘‘আমাদের বহুদিনের দাবি একটা রেলপথ। এত দিনেও তা পূরণ হল না। আমাদের রেলপথের এই স্বপ্ন বোধ হয় চিরকাল অধরাই থেকে যাবে!’’ রেলপথ-সংক্রান্ত হতাশাকে আর কেউ দীর্ঘায়িত করলেন না আড্ডায়।
একরাশ হতাশা নিয়েই প্রভাস বলে উঠলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে ব্লক-ভিত্তিক উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে। তবে বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকাও ঢোকেনি। সবই ভাঁওতা।’’ এরই মধ্যে আশাবাদী তরুলতা। তিনি যেন সতীর্থদের সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বললেন, ‘‘আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি ঠিকই। তবে আশা করছি, এ বার হবে।’’
কাদের ভোট দেওয়া উচিত, এমন প্রশ্নও উঠে এল আড্ডায়। শোনা গেল নানা মত। প্রথম বর্ষের মৌসুমী বৈরাগী বললেন, ‘‘হালকা বৃষ্টি হলেই আমাদের কলেজের সামনে জল জমে যায়। যাতায়াতের অসুবিধা হয়। কলেজের চারপাশে কোনও পাঁচিল নেই। বহিরাগতেরা ঢুকে পড়ে। এ সব সমস্যার যাঁরা সমাধান করবেন বলে মনে হবে, ভোটটা তাঁদেরই দেব।’’ তৃতীয় বর্ষের সন্তু ঢালি-ও না-পাওয়ার এই তালিকায় সংযোজন করলেন। বললেন, ‘‘কলেজের উন্নয়ন থমকে, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। এ জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। তবে কলেজ সংস্কারের আগে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বেশি জরুরি।’’
মৃদুল একটু হেসে বললেন, ‘‘নেতাদের প্রতিশ্রুতি মানে ডাহা মিথ্যা। আমি তাই ব্যক্তি নয়, দলীয় প্রতীক দেখে ভোট দেব।’’ প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমনা বিশ্বাস বেশ গম্ভীর মুখে এবং একটু বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘রাজনৈতিক দল জোরদার না হলে কোনও কাজই তাদের দিয়ে সম্ভব নয়। উন্নয়ন তো দূরের কথা। ফলে, আমাদের দেখতে হবে, যাঁকে ভোট দিচ্ছি, তাঁর পিছনে তাঁর দল কতটা জোরদার।’’
প্রসঙ্গ বদলে দিলেন প্রথম বর্ষের সুস্মিতা ঘোষ। তিনি সরাসরি সমাজ-সমস্যার কথা তুলে বললেন, ‘‘নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখন অনেকটাই কমেছে। স্কুলে স্কুলে ‘কন্যাশ্রী’র সুফল মিলছে। এ ভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন খুব জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলিকে এই সব দিকে বেশি নজর দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy