ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফায় বীরভূমের দুবরাজপুর ও পারুইয়ে গুলি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রয়োজন হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাকি তিন পর্বেও তারা একই ভূমিকা পালন করবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে। তবে সরাসরি সে-কথা বলছেন না কমিশনের কর্তারা। তাঁদের মতে, বুথ রক্ষার্থে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
কী সেই আইনানুগ পদক্ষেপ?
কমিশন-কর্তাদের ব্যাখ্যা, যে-কোনও সশস্ত্র বাহিনী আইন মেনেই পদক্ষেপ করে থাকে। বাহিনীর চোখের সামনে যদি বুথ ‘ছিনতাই’ হয়, বাহিনীর জওয়ানেরা নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন। সেই নিয়মের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে গুলিও চালাতে পারেন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান হাজির থাকা সত্ত্বেও কোথাও বুথ ভাঙচুর বা লুটপাটের ঘটনা ঘটলে তাঁরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন! বাহিনীর সামনে এমন ঘটনা ঘটলে তো তাঁদের ভূমিকাই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে।’’ তবে আমজনতাকে লক্ষ্য করে নয়, অবৈধ জমায়েত সরাতে প্রয়োজনে শূন্যে গুলি চালাতে পারেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। এ ক্ষেত্রে সোমবার দুবরাজপুর ও পারুইয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকাকে উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরছেন কমিশনের কর্তারা। তাঁদের মতে, বাহিনীর জওয়ানেরা পরিস্থিতির মোকাবিলায় শূন্যে গুলি না-চালালে ওই দিন দু’টি বুথে ভাঙচুরের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। সেই জন্য জমায়েত সরাতেই গুলি চালাতে ‘বাধ্য’ হয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জওয়ানেরা। বীরভূমের দু’টি বুথে মোবাইল নিয়ে ঢোকার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বচসা হয়েছিল বাহিনীর জওয়ানদের।
এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার বনগাঁ, ব্যারাকপুর, শ্রীরামপুর, হুগলি, আরামবাগ, উলুবেড়িয়া ও হাওড়া কেন্দ্রে ভোট হবে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সাত কেন্দ্রের জন্য মোট ৫৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের কথা ছিল। তবে তার মধ্যে ৫০ কোম্পানিকে ষষ্ঠ দফায় ভোটের জন্য নির্দিষ্ট আটটি লোকসভা কেন্দ্রে টহলদারি চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সোমবার ১৩,২৯০টি বুথে ৫২৮ কোম্পানি আধাসেনা ব্যবহার করা হবে। রবিবার তার সঙ্গে আরও দুই কোম্পানি যোগ হয়েছে। অর্থাৎ ৫৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে পারে সোমবারের নির্বাচনে। কমিশনের কর্তাদের দাবি, ১০০ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানান, পঞ্চম দফায় ৫৭৮ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহৃত হবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াও আজ সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে মাইক্রো পর্যবেক্ষক, ভিডিয়ো ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা এবং ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। ফণী পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাই এ রাজ্যের ভোটে অন্য কোনও ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে চিন্তা বাড়েনি কমিশনের। কিন্তু ফণী ওড়িশায় দাপট দেখানোয় সোমবার বঙ্গের ভোটে ওয়েব কাস্টিংয়ে কিয়দংশে সমস্যা হতে পারে। কারণ, ইন্টারনেট পরিষেবা খানিকটা শ্লথ হয়ে গিয়েছে। ওয়েব কাস্টিংয়ে মূলত বিএসএনএলের লাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএসএনএলের একটি লিজ লাইন চেন্নাই, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসে। ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সেই লাইনে কিছু গোলমাল হয়েছে। ওড়িশায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় টেলিকম-ইন্টারনেট পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে বলে বিএসএনএলের দাবি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিএসএনএলের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিশনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, ‘‘সোমবারের নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না। ঠিক ভাবেই ওয়েব কাস্টিং হবে।’’ তবে এই দাবির সারবত্তা সোমবারের ভোটেই বোঝা যাবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy