অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফেসবুক।
রাজনীতিতে অবসরের বয়ঃসীমা নিয়ে আরও একবার প্রকাশ্যেই নিজের অভিমত জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে তৃণমূলের তরুণ প্রজন্মের এই নেতা বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সব পেশার মতো রাজনীতিতেও একটা বয়ঃসীমা থাকা উচিত।’’ সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরের সভায় প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের নামোল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘বয়স আবার কী! মনের বয়সটাই আসল কথা!’’ তার পরে ওই বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং সৌগতের তাল ঠোকাঠুকি চলেছে। সেই আবহে অভিষেক আরও এক বার তাঁর অভিমত প্রকাশ করলেন। যা শাসকদলের ‘আগামী’র জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে তৃণমূল শিবির।
তবে পাশাপাশিই অভিষেক এ-ও বলেছেন যে, দলের প্রবীণদের অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে। তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়েও বলতে গিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নবীন-প্রবীণ সবাইকে নিয়েই দল চলবে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা দলের প্রয়োজন। তবে কাজের জন্য দরকার তরুণদের। যতই হোক, বয়স বাড়লে কাজের ক্ষমতা কিছুটা হলেও কমে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই যোগ্য লোকদের সামনে আসতে দেন না। সেটা ঠিক নয়।’’ উদাহরণ দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সমস্ত পেশাতেই অবসরের বয়ঃসীমা আছে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও আছে। শুধু রাজনীতি কেন, ক্রিকেট, ফুটবল— সবেতেই অবসরের বয়স আছে।’’ তবে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন, যাদের বয়স ২০, ২৫ বা ৩০— তারাই শুধু তৃণমূল করবে, তা হলে মনে রাখতে হবে, বিষয়টা সেটাও নয়।’’
অভিষেকের কথায় স্পষ্ট যে, তিনি তাঁর মতামত থেকে সরছেন না। প্রসঙ্গত, অভিষেক চান পেশাদার রাজনীতিক যিনি হবেন, তাঁদের সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করতে হবে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান অভিষেক। তার পর থেকেই সাংগঠনিক কাঠামোয় সংস্কারের পথে হেঁটেছেন তিনি। তবে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে প্রবীণ নেতাদের ‘বাধা’র মুখেও পড়তে হয়েছে। সাময়িক ভাবে কিছুটা থমকে গেলেও অভিষেক বারে বারেই বুঝিয়েছেন, তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় হাঁটতে চান। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখলে পতন অবশ্যম্ভাবী। তা সে কংগ্রেস হোক, সিপিএম হোক বা তৃণমূল।’’ প্রসঙ্গত, দলে অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত কুণালও বলেছিলেন, ‘‘দেহত্যাগ না করলে পদত্যাগ করবেন না, এটা চলতে থাকলে দলটা সিপিএমের বৃদ্ধতন্ত্রে পরিণত হবে! প্রবীণদেরও ছাড়তে শিখতে হবে।’’ অনেকের মতে, অভিষেক অত ‘কড়াভাষায়’ কিছু না বললেও তাঁর বক্তব্যের মর্মার্থও তা-ই।
চোখের সমস্যার কারণে মমতার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় সশরীরে হাজির ছিলেন না অভিষেক। সামান্য সময়ের জন্য যোগ দিয়েছিলেন ভার্চুয়ালি। সেই সভায় তৃণমূলের মঞ্চের পটভূমিকায় দেখা গিয়েছিল শুধু মমতার ছবি। সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের কোনও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যা দেখা যায়নি। এখন শাসকদলের যে কোনও কর্মসূচিতে মমতা-অভিষেকের ছবি পাশাপাশিই থাকে। নেতাজি ইন্ডোরের সভার পরে দলের মুখপাত্র কুণাল বলেছিলেন, অভিষেকের ছবি না থাকায় তৃণমূলের মঞ্চ ছিল অসম্পূর্ণ। তা নিয়েও দলে বিতর্ক বাধে। প্রকাশ্যে কুণালের সঙ্গে সৌগতের বিবৃতির লড়াইও হয়। যদিও অভিষেক সোমবার কুণালের বক্তব্যকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মত বলেই অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যদি কেউ ওটা মনে করে থাকেন, তা হলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। নেত্রীর ছবি ছিল তো!’’
চোখের সমস্যার কারণে মমতার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় যেতে না-পারার পর অভিষেক সম্প্রতি হয়দরাবাদে গিয়েছিলেন তাঁর চোখের চিকিৎসার জন্য। সোমবার তিনি কয়েকদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন। দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও অভিষেক একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন মমতাও। তিনি উত্তরবঙ্গ রওনা হচ্ছেন বুধবার। তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা ১২ তারিখ।
অভিষেক সম্প্রতি দলীয় কর্মসূচি থেকে ‘দূরত্ব’ তৈরি করেছিলেন বলে অনেকে বলছিলেন। সোমবার সেই প্রসঙ্গেও প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ‘তৃণমূলের সেনাপতি’। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি তো আছি! মাত্র একটা মি়টিংয়েই যেতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy