চিঠিতে মারাত্মক অভিযোগ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এখন দল চালাচ্ছেন দলবদলুরা। রাজ্য বিজেপিকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করছে তৃণমূল থেকে আসা শক্তি। সিবিআই এবং ইডি-র ভয় দেখিয়ে আরও তৃণমূল নেতাদের ভাঙিয়ে আনার চেষ্টাও চলছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে এমনই এক চিঠি লিখেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। শুক্রবার এমনই একটি চিঠি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। ইংরেজিতে লেখা সেই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ওই চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার না করলেও অস্বীকারও করেননি সায়ন্তন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘যাঁদের থেকে চিঠি হাতে পেয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন। আমি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে রাজ্য বিজেপি সায়ন্তনের চিঠিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয়।
চিঠির শেষ দিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কেও মন্তব্য করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, বিরোধী দলনেতা-সহ দলের প্রবীণ সাংসদরাও এমন ভাবে শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বকে আক্রমণ করছেন, যাতে মনে হচ্ছে, তৃণমূলেরই দুই শিবিরের লড়াই চলছে। এর পরেই বলা হয়েছে, বাংলায় দল মূলনীতি নিয়ে লড়াই করছে না। মানুষের কাছে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সিবিআই, ইডি-র সমনের ভয়ে আরও অনেকে বিজেপিতে যোগ দেবেন। রাজ্য বিজেপির উপরে মানুষের ভরসা কমছে। ‘দলবদলু’ তৃণমূল নেতারাই চালাচ্ছেন বিজেপি। ওই ‘দলবদলু’ নেতা বলতে সায়ন্তন আদতে শুভেন্দুকেই বোঝাতে চেয়েছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। সায়ন্তন ওই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে শুভেন্দু ছাড়া মোটামুটি তৃণমূল থেকে-আসা প্রায় সব নেতাই আবার তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। শুধু শুভেন্দু স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে তিনি রাজ্য বিধানসভায় তাঁর ভূমিকা পালন করছেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কতটা গুরুত্ব পাবে, তা-ও দেখার।
বিধানসভায় বিজেপি দ্বিতীয় শক্তি হলেও রাজ্যে বিরোধীপক্ষ হিসাবে যে সিপিএমের ‘উত্থান’ হচ্ছে, তারও উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে, সম্প্রতি কলকাতায় সিপিএমের যুব শাখার কর্মসূচিতে কোনও ট্রেন, বাস ভাড়া না করেও ৩৫ হাজারের জমায়েত করা হয়েছিল। বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হবে। এ ছাড়াও নতুন জেলা থেকে ব্লক কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, বিজেপির আদি কর্মীরা গুরুত্ব হারিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকার সময় রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সায়ন্তন। সুকান্ত মজুমদার দায়িত্ব পাওয়ার পরে বিজেপির কোনও দায়িত্বেই নেই তিনি। সেই সময়ে ‘বিক্ষুব্ধ’ হিসাবে সায়ন্তন জয়প্রকাশ মজুমদারদের সঙ্গে জোটও বেঁধেছিলেন। পরে জয়প্রকাশ তৃণমূলে গেলেও সায়ন্তন দলবদল করেননি। যদিও রাজ্য বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব দিন দিন বেড়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, সায়ন্তন নিয়মিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানান বলে রাজ্য নেতারাই দাবি করেন। যে চিঠি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে, সেটি তেমনই কোনও চিঠি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। তবে সত্যতা যাচাই করার আগে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
চিঠিতে যেহেতু দীপাবলির শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে, তাই সেটা সাম্প্রতিক সময়ের বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখানে ১৯৮০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যে বিজেপির অসংখ্য কর্মীর অবদানের কথা দিয়ে শুরু করা হলেও মূলত রয়েছে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি বিষোদ্গার। ২০১৯ সালের পরে এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে বিজেপিতে যোগ-দেওয়া অন্য দলের নেতারা বেশ কিছু নিশ্চিত আসন থেকে লড়াই করেও হেরেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
নড্ডা ওই চিঠি সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেবেন বা আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেবেন কি না, তা অবশ্য বিজেপির নেতারা বলতে পারছেন না। রাজ্য বিজেপিতে সায়ন্তন তেমন বড় কোনও পদেও এখন নেই। ফলে তাঁর লেখা চিঠি কতটা গুরুত্ব পায়, তা-ও দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy