কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সব্যসাচী দত্ত এবং সুজিত বসু। ফাইল চিত্র।
জল্পনায় ছিল সুজিত বসুর নাম। দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার ভোটার তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দিয়ে বিধাননগর পুর এলাকার ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন জমা দিয়েই জল্পনা জমিয়ে দিয়েছিলেন সুজিত। কিন্তু সব্যসাচী দত্তর ইস্তফার ১২ দিন পরে বিধাননগরের নেতাদের নিয়ে নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করার পরে ভেসে উঠেছে কৃষ্ণা চক্রবর্তীর নাম। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণাকেই এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়র পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তৃণমূল পুরদল সূত্রের খবর। আর কৃষ্ণার জায়গায় চেয়ারপার্সন পদে বসতে চলেছেন অনিতা মণ্ডল।
মঙ্গলবার বিকেলে বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়, চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা নবান্নে যান। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সনের সঙ্গেই তাঁদের বৈঠক হয় বলে নবান্ন সূত্রের খবর। বৈঠক সেরে বেরনোর পথে সংবাদ মাধ্যমকে বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানাননি তাপস, কৃষ্ণা, দেবাশিসরা। কিন্তু বিধাননগরে তৃণমূলের গোটা পুরদলই এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল। বৈঠক শেষ হওয়ার পরে পুরদলের কাছে বার্তাও পৌঁছে যায় বলে খবর। কৃষ্ণা চক্রবর্তীকেই পরবর্তী মেয়র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে পুরদল সূত্রেই জানা গিয়েছে।
নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে বার বার বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা বা বৈঠক করা, দলীয় নীতির সমালোচনা করা, প্রকাশ্যে সরকারকে আক্রমণ করা— এমন নানা কারণে সব্যসাচী দত্তর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই সব্যসাচীকে বিধাননগরের মেয়র পদ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সব্যসাচী রাজি না হওয়ায় প্রথমে তাঁকে অকেজো করে দিয়ে ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে পুরসভার কাজ দেখভালের নির্দেশ দেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পরে সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়।
আরও পড়ুন: বৌভাতের দিন স্নানে নেমে স্বামীর সামনেই তলিয়ে গেলেন স্ত্রী, শ্যালিকা
পদ্ধতিগত ত্রুটির অভিযোগ তুলে সেই অনাস্থাকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তদানীন্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত। কলকাতা হাইকোর্ট অনাস্থার সেই নোটিস খারিজ করে নতুন করে অনাস্থার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নিজের পক্ষে এই রায় পাওয়ার পরে সব্যসাচী দত্ত আর দেরি করেননি। হাইকোর্টের এই রায়কে নিজের ‘নৈতিক জয়’ বলে দাবি করে তিনি ১৮ জুলাই মেয়র পদে ইস্তফা দেন।
সব্যসাচীর পরিবর্তে যে হেতু ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছিল প্রথমে, সে হেতু পরবর্তী মেয়র হিসেবে তাপসের নামই শুরুতে শোনা যাচ্ছিল। পরে বিধাননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে সব্যসাচী দত্তর ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান সুজিত বসুর। তাই রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা ছিল, সুজিতকে মেয়র পদে বসিয়ে সব্যসাচীকে আরও কঠিন শিক্ষা দিতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু মঙ্গলবার বিধাননগরের নেতাদের সঙ্গে নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করার পর কৃষ্ণা চক্রবর্তীর নাম শোনা যেতে শুরু করেছে পরবর্তী মেয়র হিসেবে।
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা কৃষ্ণা চক্রবর্তী বেশ কয়েক দশক ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিত। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা এবং নিউটাউনকে সল্টলেকের সঙ্গে জুড়ে পুর নিগম গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত যে পুরসভা সল্টলেকের নাগরিক পরিষেবা দেখভাল করত, সেই বিধাননগর পুরসভার প্রধান ছিলেন কৃষ্ণা। পুরসভা থেকে পুর নিগমে উত্তরণ ঘটার পরে বিধাননগরের আর এক পুরনো তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত মেয়র পদ পান। কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে চেয়ারপার্সন করা হয়। তবে সব্যসাচী যে দিন মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন, সে দিনও সংবাদমাধ্যমকে কৃষ্ণা জানিয়েছিলেন যে, পরবর্তী মেয়র হওয়ার দৌড়ে তিনিও রয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রতিবেশীর নজর সম্পত্তিতে, মানসিক চাপে আত্মহত্যার চেষ্টা বৃদ্ধ দম্পতির!
সব্যসাচীর উত্তরসূরি হিসেবে কৃষ্ণাকে বেছে নেওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি ‘ফ্যাক্টর’ কাজ করে থাকতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা। প্রথমত, কৃষ্ণা চক্রবর্তী আদি তৃণমূলী, নব্য নন। তাই সব্যসাচীর মতো পুরনো নেতাকে সরানোর পরে কৃষ্ণাকেই বাছা হচ্ছে বিকল্প হিসেবে, যাতে এই বার্তা দলে না যায় যে, পুরনো নেতাদের পাত্তা না দিয়ে নেতৃত্ব এখন অপেক্ষাকৃত নতুনদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, সুজিত বসুর সঙ্গে সব্যসাচী দত্তর সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, তা তৃণমূল নেতৃত্বের অজানা নয়। তাই সুজিতকে মেয়র পদে বসানো হলে সব্যসাচীকে দলে ধরে রাখতে পারার সম্ভাবনা আর কতটা থাকে, তা-ও নেতৃত্ব জানেন।
সব্যসাচী দত্ত একাধিক বার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, একাধিক বার দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন। কিন্তু মেয়র পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরেও তিনি বিজেপিতে যোগ দেননি। বরং দিন কয়েক আগে মধ্যমগ্রামে যে প্রশাসনিক বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেন, সেখানে হাজির হয়ে রাজনৈতিক শিবিরকে সব্যসাচী চমকে দেন। এত কিছুর পরেও সব্যসাচী যখন দল ছাড়েননি, তখন দলও সব্যসাচীর প্রতি কিছুটা নমনীয় বার্তা দিতে চাইল বলে তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা। সুজিত বসুকে মেয়র না করে কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে বেছে নেওয়াতেই সেই নমনীয়তার প্রমাণ মিলছে বলে ওই অংশের মত।
কৃষ্ণা মেয়র হলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে চেয়ারপার্সন পদ ছাড়তে হবে। পূর্বতন বিধাননগর পুরসভার প্রথম তৃণমূলী পুরপ্রধান অনিতা মণ্ডলকে ওই পদে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। সব্যসাচী দত্তর ইস্তফার পরে মেয়র পারিষদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সব্যসাচীর একনিষ্ঠ অনুগামী হিসাবে পরিচিত তরুণ কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ সর্দার। সেই প্রসেনজিৎকে আর মেয়র পারিষদ পদে ফেরানো হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। তাঁর জায়গায় আর এক তরুণ দেবরাজ চক্রবর্তীকে মেয়র পারিষদ করা হচ্ছে বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy