ছবি: এএফপি।
সাগরের অতিথির চলন বড়ই রহস্যময়!
শনিবার যখন সে প্রথম জন্মায়, তখন সে ছিল নিম্নচাপ। বৃহস্পতিবার সেটাই পাল্টে গেল ঘূর্ণিঝড়ে। তাইল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা তার নাম দিলেন, গোমেন (ইংরেজি বানানে লেখা হয় কোমেন)। তার পরেও রহস্যের শেষ নেই। গোমেন কখন কোন দিকে ঘুরবে, কোন গতিবেগে এগোবে, কোথাও দাঁড়িয়ে যাবে কি না, স্থির করে বলা যাচ্ছে না কিছুই। মৌসম ভবন শুধু জানাচ্ছে, এ দিন সকালেই বাংলাদেশ উপকূলে অতিগভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। বিকেল চারটে নাগাদ চট্টগ্রাম উপকূলে প্রবেশ করে। রাতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে চট্টগ্রাম অতিক্রম করতে পারেনি!
আবহবিদদের একাংশের ধারণা, চট্টগ্রাম অতিক্রম করে খুলনার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে গোমেন। যদিও তত ক্ষণে শক্তি খুইয়ে ঘূর্ণিঝড়ের তকমা হারাবে সে। তবে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা থাকছেই। উপগ্রহ-চিত্রে দক্ষিণবঙ্গ ও বাংলাদেশের আকাশে ঘন মেঘের আস্তরণ ধরা পড়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, ‘‘শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে ঠিক কতটা বৃষ্টি হবে, তা নির্ভর করছে গোমেনের গতিবিধির উপরে।’’ তবে চট্টগ্রাম এলাকায় গোমেন যে ভাবে তার গতি কমিয়েছে, তাতে কিছুটা আশার আলো দেখছে হাওয়া অফিস। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রামের স্থলভূমিতে গোমেন যত ধীর লয়ে চলবে, ততই সে দুর্বল হতে থাকবে। ফলে এ রাজ্যে আসতে আসতে তার শক্তি কমবে। তবে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। আজ, শুক্রবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্রই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
হাওয়া অফিসের হিসেব অনুযায়ী, এখনও দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৪৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে বিভিন্ন নদী-খাল-বিল জলে টইটম্বুর হয়ে রয়েছে। তার উপরে যদি ভারী কিংবা অতিভারী বৃষ্টি হয়, তা হলে বানভাসি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বর্ধমান, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলার অনেক জায়গাতে ইতিমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে খবর। এ দিন লন্ডন থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, ভারী বৃষ্টি ও ভরা কোটাল একসঙ্গে হাজির। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘অযথা ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই।’’
দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি নিয়ে গত ক’দিন ধরেই নানা মহলে জল্পনা চলছিল। নিম্নচাপ দানা বাঁধার পরে তা আরও বাড়ে। কিন্তু এ দিন সকালে হঠাৎই মেঘ সরে গিয়ে রোদ বেরিয়েছিল। তার ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে শুরু হয় মুখরোচক আলোচনাও। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে। হাওয়া অফিসের খবর, বারাসত, হরিণঘাটা, ক্যানিং-সহ বহু এলাকাতেই ঝেঁপে বৃষ্টি হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ দিন কলকাতায় নামতে পারেনি দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিগো সংস্থার একটি বিমান। সেটি ভুবনেশ্বর চলে গিয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।
বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রের খবর, গোমেন উপকূলের দিকে যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে ঝড়ের দাপট। শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙেছে। গাছ উপড়ে ও নৌকোডুবিতে দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ। সতর্কতা জারি হয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, বরিশাল ও পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া খুলনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy