আলোচনাসভায় (বাঁদিক থেকে) আন্তোনিও মন্ডা, ভেরা স্লোপোজ, সের্জিও কাকা। শুক্রবার, এশিয়াটিক সোসাইটিতে। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা লন্ডন হতে যাবে কোন দুঃখে? একেবারেই কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা। লন্ডনেরই বরং এখন কলকাতা হওয়া উচিত,” এশিয়াটিক সোসাইটিতে আড্ডা দিতে দিতে বললেন ইতালীয় সিনেমা প্রযোজক সের্জিও কাকা। ইতালির নেপ্লস শহরের বাসিন্দা এই প্রযোজকের উদ্যোগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকার সময় কলকাতা-নেপ্লস যুগ্ম শহর হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সুব্রতবাবু সেই অনুষ্ঠানে নেপল্স গিয়েওছিলেন। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যদি এখন লন্ডন আইয়ের ধাঁচে কলকাতা আই তৈরি করেন, হাস্যকর হবে,” এক দমে ভাঙা ভাঙা বাংলা মিশিয়ে বলে গেলেন সের্জিও। গত চার দশক ধরে মাঝে মাঝেই এই শহরে চলে আসেন, সিল্ক রুট নিয়ে চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষের ‘বিয়ন্ড দ্য হিমালয়াজ’ তথ্যচিত্রের প্রযোজকও ছিলেন তিনি।
নদীর সঙ্গে সাহিত্য, সিনেমাকে মিশিয়ে দিতেই শুক্রবার এশিয়াটিক সোসাইটিতে এসেছিলেন সের্জিও। কলকাতার ‘ফ্রিড’ সংস্থা ও ইতালির ‘লিব্রা দ্য আকুয়া’ সংস্থার উদ্যোগে সেখানে ছিল এক অনুষ্ঠান। নদীর ধারে বিভিন্ন শহরে সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে চিন্তাভাবনা আদানপ্রদানের অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ইতালীয় সংস্থাটি। প্রথম অনুষ্ঠান ছিল লন্ডনে। দ্বিতীয়টিই কলকাতায়। অতঃপর সারা বছর এই অনুষ্ঠান কখনও হবে প্যারিসে, কখনও বুদাপেস্টে, কখনও ভেনিস, কখনও বা নিউ ইয়র্কে। “নদী মানে সভ্যতা, বাণিজ্য। ভিন্ন ভিন্ন অনেক ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধন, সেই জন্যই নদীর ধারে বাছাই শহরগুলিতে এই উদ্যোগ,” বললেন আর এক ইতালীয়, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্মতাত্ত্বিক ও লেখক আন্তোনিও মন্ডা। ভারতে নদীর ধারে আরও অনেক শহরই তো আছে! প্রশ্নের উত্তরে লিব্রা দি আকুয়ার সভাপতি ভেরা স্লোপোজ:‘‘বারাণসীর কথাও অনেকে বলেছিল। কিন্তু কলকাতাই আমার প্রথম পছন্দের। পরের বার ব্রহ্মপুত্রের কথা ভাবছি।’’
বারাণসীর ঘাটে যা নেই, রয়েছে হুগলি নদীর তীরে। সিনেমাই একদা রোম, নেপল্স, ভেনিসের সঙ্গে কলকাতার যোগসূত্র গড়ে দিয়েছিল। ডি সিকা, ফেলিনি এবং এই শহরের সত্যজিৎ রায়। ফিল্ম ছিল, মায় প্রাক পেজ থ্রি সভ্যতায় সবচেয়ে বড় কেচ্ছা ছিল বাংলা-ইতালির অবৈধ বন্ধন। এই শহরের বউ সোনালি দাশগুপ্তকে নিয়ে রোসেলিনির স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন। শুক্রবারের বিকেল তাই ছিল না শুধু নদীর জন্য। আন্তোনিও মন্ডা, সের্জিও কাকা আলোচনা করলেন সিনেমা এবং সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়েও। কে না জানে, আইডিয়া আদানপ্রদানের স্রোতে বই, সিনেমা, সব রকম টেক্সট-ই হয়ে ওঠে অলৌকিক জলযান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy