রাস্তার ধারে দাঁড় করানো গাড়ি এ ভাবেই ঠেলে সরিয়ে যাতায়াত যানবাহনের। সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে
দৃশ্য ১: বিদ্যাসাগর আইল্যান্ড এবং রাস্তার মাঝে বুলেভার্ডের ধার ধরে গাড়ির ঢল। আবার, রাস্তার এক পাশেও সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি। সেই পথেই তীব্র বেগে যাচ্ছিল একটি বেসরকারি রুটের বাস। একটি অটোকে পাশ কাটাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির সামনের অংশ ভেঙে দিয়ে চলে যায় বাসটি। কিছুক্ষণের গোলমাল। পরে পুলিশ এসে গোলমাল মেটায়।
দৃশ্য ২: সিটি সেন্টার মোড় থেকে সেচভবনমুখী রাস্তায় এক দিকে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সারি, অন্য দিকে ফুটপাথ জুড়ে বাগান। কোথাও আবার ফুটপাথই নেই। বাধ্য হয়েই রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন মানিকতলার বাসিন্দা রমেন্দু বসু। ওই পথে দু’টি অটো নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করতে গিয়ে রমেন্দুবাবুকে ধাক্কা মারে। আহত হন ওই ব্যক্তি।
দৃশ্য ৩: সল্টলেকবাসী শান্তনু কর গাড়ি নিয়ে ই ই ব্লকের কাছে একটি সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। গাড়ি রেখেছিলেন হাসপাতালের কাছেই। কিছুক্ষণ পরে হাসপাতাল থেকে বেরোতেই এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বললেন, পার্কিং ফি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন শান্তনুবাবু।
এমন খণ্ড খণ্ড দৃশ্যগুলির সাক্ষী বহিরাগত থেকে সল্টলেকবাসী সকলেই। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চাশ পার হওয়া এই উপনগরীতে পার্কিং নিয়ে কোনও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা নেই। পুরসভার পার্কিং লট বা বেসরকারি পার্কিং লটে যদিও বা কিছুটা পরিকল্পনা চোখে পড়ে, বাকি সর্বত্র যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সল্টলেকের সাবেক চেহারাটাই যেন আর নেই। ব্লকে ব্লকে তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রশিক্ষণ সংস্থা, ব্যাঙ্ক, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বিনোদন ক্ষেত্র, মাল্টিপ্লেক্স গজিয়ে উঠেছে। সল্টলেকের জনসংখ্যা কমবেশি আড়াই লক্ষ। এ ছাড়া, রোজ কর্মসূত্রে এই উপনগরীতে যাতায়াত করেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। অথচ সেই তুলনায় পার্কিং ব্যবস্থা অপ্রতুল।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পার্কিং ব্যবস্থা কার্যত গোলকধাঁধা। বিধাননগর পুরসভার ১৭টি পার্কিং লট রয়েছে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যার তুলনায় তা যৎসামান্য। মোড়গুলিতে গজিয়ে উঠেছে অটো, রিকশা, শাটল্ গাড়ির স্ট্যান্ড।
ব্লকগুলির ভিতরেও বেশি সংখ্যায় গাড়ি পার্কিং নিয়ে সমস্যা ক্রমে বাড়ছে। বেশ কয়েকটি ব্লকে সরকারি-বেসরকারি স্কুলকে কেন্দ্র করে অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করে। আবার, ভাড়া নিয়ে চালু হওয়া বেসরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসা গাড়ির সংখ্যাও কম নয়। সেগুলি নিয়েও অভিযোগ জমছে বিস্তর।
অফিসপাড়া কিংবা জনবহুল এলাকাতেও সমস্যার ছবি একই। যেমন, ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল কমপ্লেক্স মোড়। সেখানে রয়েছে দু’টি হাসপাতাল, শপিং মল, রেস্তোরা।ঁ তেমনই সিটি সেন্টারের চারপাশের রাস্তার দু’ধারে এমনকী বুলেভার্ডের ধারেও অবাধে চলছে গাড়ি পার্কিং। বাসিন্দাদের অনেকে ফুটপাথের উপরেও গাড়ি দাঁড় করাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে রাস্তার আয়তন কমছে, অথচ বাড়ছে গাড়ির রেষারেষি। ফলে, সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তা দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ট্রাফিক দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। ইতিমধ্যেই কয়েকটি জায়গায় নো-পার্কিং করা হয়েছে। অবৈধ ভাবে গাড়ি দাঁড়ালে জরিমানা করা হচ্ছে। পার্কিং-এর জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। চালু হয়েছে সিগন্যাল ব্যবস্থাও। তবে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, তাই সমস্যা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাফিক দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পার্কিং-এর ব্যবস্থা করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনা গিয়েছিল। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাম আমল থেকে চলতে থাকা পার্কিং সমস্যা নিয়ে সরকার ওয়াকিবহাল। আলোচনাও চলছে। ইতিমধ্যে পাঁচ নম্বর সেক্টরে পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছে। সল্টলেকের ক্ষেত্রেও সমস্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy