পতঙ্গবিদ ছাড়াই সল্টলেকে চলছে পুরসভার মশা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ।
তাই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি প্রতিরোধে তাদের ভরসা সেই কলকাতা পুরসভা কিংবা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। অথচ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে বিধাননগরের মতো বিভিন্ন পুরসভায় মশা নিয়ন্ত্রণে ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। কিন্তু আজও সল্টলেকে তৈরি হল না সেই পরিকাঠামো।
বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষের যুক্তি, গত আড়াই বছরে কোনও পতঙ্গবিদের সন্ধান মেলেনি। তাই তৈরি হয়নি ওই পরিকাঠামো। তবে তাঁরা কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের সাহায্যে লাগাতার মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। তাঁদের দাবি, গত দু’বছরের সাফল্যই এর প্রমাণ।
সত্যিই কি পতঙ্গবিদের আকাল?
প্রশাসনের এমন যুক্তি মানতে নারাজ পতঙ্গবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের একাংশের মতে, পতঙ্গবিদ্দের কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই এ রাজ্যে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, প্রতি বছর রাজ্য থেকে প্রায় জনা ৫০ জন ছাত্রছাত্রী পতঙ্গবিজ্ঞান নিয়ে পাশ করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ উচ্চশিক্ষায় যান, কেউ বা অন্য বিষয় নিয়ে আগ্রহী হন। কার্যত ছাত্রছাত্রীদের সুরেই কলকাতা পুরসভার পতঙ্গ বিশারদ দেবাশিস বিশ্বাসের অভিযোগ, “পতঙ্গ বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেই মশা বিশেষজ্ঞ হওয়া যায় না। তার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, মশা নিয়ে চর্চার আগ্রহও কম। মশা বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে কি করে? দীর্ঘ দিন ধরে এই বিষয়টি অবহেলিত।”
কেন পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের কর্মসংস্থানের অভাব?
পুর দফতর সূত্রে খবর, পুরসভাগুলিতে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট দফতর থাকলেও ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিটের মতো বিশেষ পরিকাঠামো ছিল না। ফলে পতঙ্গবিদ নিয়োগ নিয়ে পরিকল্পনাও ছিল না।
যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান মধুসূদন দাস বলেন, “আমাদের কাছে কেউ কখনও এ বিষয়ে খোঁজ নিতেই আসেননি। প্রশাসন যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তা হলে ছাত্রছাত্রীর কোনও অভাব হবে না। প্রতি বছর শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১২-১৪ জন ছাত্রছাত্রী পাশ করে বেরোচ্ছেন। এই বিষয় নিয়ে কর্মসংস্থান হলে কার্যকরী ভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ
হতে পারে।”
এই অভাবের কারণে আজ শুধু বিধাননগর পুরসভা ভুগছে এমনটা নয়, একাধিক পুরসভায় রয়েছে একই সমস্যা। সল্টলেকে ২০০৫ সালে ডেঙ্গি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফের ২০১১-এ ডেঙ্গির প্রকোপ জটিল আকার নেয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সহস্রাধিক ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গির সংক্রমণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তুলনায় ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কম।
এর পরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, কলকাতা পুরসভা ও বিধাননগর পুরসভা একযোগে বিশেষ অভিযান চালায়। তার জেরে পরবর্তী বছরগুলিতে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমে গিয়েছে সল্টলেকে।
প্রশ্ন উঠেছে, দু’বছর মশাবাহিত রোগ না হওয়ার কারণেই কি ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির ব্যাপারে গা ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে?
এই প্রশ্নের জবাবে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির কথা বলেছি। তা হবেই। কিন্তু পতঙ্গবিদের অভাবে এখনই সে কাজ করা যাচ্ছে না। তা বলে আমরা থেমে নেই। কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে একযোগে আমরা মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করছি। সাফল্যও এসেছে।”
বিধাননগর পুরসভার দাবি সমর্থন করেছেন পতঙ্গ বিশারদ দেবাশিস বিশ্বাসও। তিনি বলেন, “আমরা সল্টলেকে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে সহযোগিতা করেছি। সল্টলেকে এই সময়ে মশা হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হচ্ছে, কিন্তু রোগ ছড়াবে না। মশা সমস্যা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে বিভিন্ন পুর এলাকায় নিজস্ব ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট গড়ে তোলা একান্তই প্রয়োজন।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে চলতি বছরের শুরুতেই পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। যে কারণে পুরসভাগুলিতে ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিটের প্রয়োজন। তবে পতঙ্গবিদদের ক্ষেত্রে আপাতত চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এঁদের কর্মসংস্থান নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিত ভাবেই পরিকল্পনা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy