আইএসআইয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী ওয়াই বি চ্যবন।—আনন্দ চিত্র।
—নাম্বার প্লেট হিন্দীতে লেখা,
শিগ্গির অনুবাদক পাঠান
—সোনার মেডেল পেলে বিয়ের
সময় কাজে লাগতো তা জানিস।
নেতাজীর স্মৃতি ফলকটি
খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, স্যার।
শনিবার, ৯ মাঘ, ১৩৭১ (৩ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JANUARY 23, 1965
কলিকাতা তৈল-সাগরে ভাসমান: কলিকাতা একেবারে তেলের উপর ভাসমান— অর্থাত্ এই অঞ্চলের নীচেই তেলের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কোন কোন বিশেষঞ্জের ইহাই অভিমত। তৈল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশনের চারিটি দল কলিকাতা এলাকায় ব্যাপক জরীপ চালাইতেছেন। তৈলমন্ত্রী শ্রীহুমায়ুন কবির আজ এখানে সাংবাদিকদের নিকট বিশেষজ্ঞদের অভিমত উল্লেখ করিয়া বলেন, কলিকাতার দক্ষিণ অঞ্চল তৈল সম্পদে প্রচুরভাবে সমৃদ্ধ হইতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তেলের সন্ধানে এ পর্যন্ত যেসব সমীক্ষা চালানো হইয়াছে শ্রী কবির তাহা জানান। কেরলে তেল পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই বলিয়া আগে ধারণা করা হইয়াছিল। কিন্তু সমীক্ষায় কেরলে নূতন করিয়া আবার তেলের সন্ধান করার সুপারিশ করা হইতেছে।
শনিবার, ৯ মাঘ, ১৩৭১ (৩ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JANUARY 23, 1965
পরীক্ষা হলেও গার্ড দিবেন না: অধ্যাপকদের পরীক্ষার খাতা বর্জন করিবার পরিকল্পনা তো আছেই। সেই সঙ্গে তাঁহারা পরীক্ষা হলেও গার্ড দিবেন না, সর্বশেষ এই সংবাদ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিমুঢ় করিয়া তুলিয়াছে। একজোটে কিছু জানান হয় নাই। কিন্তু কলিকাতা ও মফঃস্বলের কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাইয়াছেন। তাঁহারা একথাও বলিয়াছেন— অধ্যাপকরা গার্ড না দিলে পরীক্ষা গ্রহণ মুশকিল হইবে। পরীক্ষার মরশুম শুরু হইতে বাকী মাত্র ৩৭ দিন। ১লা মার্চ পুরান কোর্সের বি এ ও বি এস সি পরীক্ষা শুরু। সাড়ে বত্রিশ হাজারের মত পরীক্ষার্থী। প্রশ্নপত্র রচনার কাজ শেষ। পরীক্ষার খুটিনাটি কাজকর্মও প্রায় শেষ। তবুও সবকিছু অনিশ্চিত।
রবিবার, ১০ মাঘ, ১৩৭১ (৪ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JANUARY 24, 1965
কলিকাতা তৈল প্রপ্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল: কলিকাতার ভূগর্ভে প্রচুর তৈল সঞ্চিত আছে বলিয়া যে সংবাদ পাওয়া গিয়াছে তা আজ এখানে রুশ বিশেষজ্ঞ শ্রী এ সিডোরেঙ্কো সমর্থন করেন। শ্রী সিডেরেঙ্কো সোভিয়েট ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় ভূতাত্ত্বিক কমিটির চেয়ারম্যান এবং অন্যতম মন্ত্রী। তিনি আজ এখানে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে কলিকাতার নিকটবর্তী ক্যানিং অঞ্চলে তৈল এবং গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রমাণিত হইয়াছে যে, ঐ অঞ্চলে ভূগর্ভে প্রচুর তৈলসম্পদ নিহিত আছে। তিনি অতঃপর বলেন যে, এই ভূগর্ভস্থ তৈলসম্পদ উদ্ধারের জন্য চেষ্টার উপরেই সবকিছু নির্ভর করিতেছে।
রবিবার, ১০ মাঘ, ১৩৭১ (৪ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JANUARY 24, 1965
সুভাষ সরোবর: বেলেঘাটায় নির্মিত সি-আই-টির মনোরম নূতন হ্রদটি শনিবার সুভাষচন্দ্রের নামে উত্সর্গ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন এক অনুষ্ঠানে উহার নাম দেন ‘‘সুভাষ সরোবর’’। কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শ্রী কে কে সেন জানান, এই প্রথম কলিকাতায় অলিম্পিকের মান অনুযায়ী একটি সাঁতার কাটিবার পুকুর এইখানে খনন করা হইতেছে। উহা এই সুভাষ সরোবরেরই একটি অংশ।
শনিবার বেলেঘাটা সুভাষ সরোবর উদ্বোধন করিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন।—আনন্দ চিত্র।
শ্রী সেন বলেন কলিকাতার অবহেলিত পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন করিতে গিয়া যে মাটি কাটিতে হইয়াছিল, তাহার ফল এই সুভাষ সরোবর। এইখানে একটি রমণীয় উদ্যানও ধীরে ধীরে নির্মিত হইবে। অনুষ্ঠানের সভাপতি স্বায়ত্তশাসনমন্ত্রী শ্রীফজলুর রহমান বলেন, কলিকাতার নাগরিক জীবনে যে সকল জটিল সমস্যার সৃষ্টি হইয়াছে, তাহার সমাধান একমাত্র পরিকল্পনা মারফত কলিকাতার সম্প্রসারণ। সুভাষ সরোবর তাহারই নিদর্শন।
চল, তাহলে ম্যাটিনী ‘শো’তে লাইন দি
মঙ্গলবার, ১২ মাঘ, ১৩৭১ (৬ মাঘ, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, JANUARY 26, 1965
আজ হইতে বাংলা: আজ ২৬শে জানুয়ারী হইতে সরকারী কাজকর্মে বাংলা ভাষার প্রচলন শুরু হইতেছে। সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঐ সম্পর্কে আলোচনাকালে তিনি এই মত প্রকাশ করেন যে, মাতৃভাষার মনের ভাব প্রকাশ অনেক সহজে ও সংক্ষেপে সম্ভব। ইহাতে কাগজের খরচও বাঁচিয়া যাইবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, এখন হইতে বাংলা ভাষার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত প্রতিবাদি উত্থাপিত হইবে। বিধান মন্ডলীর বিল, বক্তৃতা ইত্যাদি ক্রমশ বাংলা ভাষার করা হইবে। তবে এখনও কিছুদিন দীর্ঘ কোন বিষয় বাংলার তৈরী করা সম্ভব হইবে না বলিয়া তিনি মনে করেন। শ্রীসেন আরও বলেন, আন্তঃ রাজ্য কাজকর্মের ব্যাপারেও বাংলার ব্যবহার চলিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে একটি ইংরেজি কপি দেওয়ার ব্যবস্থা হইবে।
বৃহস্পতিবার, ১৪ মাঘ, ১৩৭১ (৮ মাঘ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JANUARY 28, 1965
সম্মিলিত কুচকাওয়াজ ও পতাকা উত্তোলন: পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের সহিত একযোগে কলিকাতা ও শহরতলিতেও মঙ্গলবার যথোচিত গাম্ভীর্যের মধ্যে ভারতের ষোড়শ প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে এইদিন সকালে নানা অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করিয়া প্রজাতন্ত্র রক্ষার জন্য জীবণপণ করিবার সংকল্প ঘোষিত হয়। ময়দানের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনাদলের সম্মিলিত কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান বিশেষ আকর্ষণীয় হয়। রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু অভিবাদন গ্রহণ করেন। বিকালের দিকে বিভিন্ন সভাসমিতিতে বিশিষ্ট বক্তাগণ কম্যুনিস্ট চীনের আগ্রাসী ভুমিকার নিন্দা করেন এবং দেশবাসীকে এ সম্পর্কে সচেতন থাকিতে আহ্বান জানান। তাহার পাকিস্তানের ভারতবিরোধী নীতিরও সমালোচনা করেন।
বৃহস্পতিবার, ১৪ মাঘ, ১৩৭১ (৮ মাঘ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, JANUARY 28, 1965
পরলোকে প্রখ্যাত চিকিত্সক সত্যবান রায়: প্রখ্যাত চিকিত্সক এবং প্রাক্তন লোকসভা সদস্য ডাঃ সত্যবান রায় বুধবার বিকাল ৫.২৫ মিনিটের সময় তাহার কলিকাতার বাসভবনে সেরিব্রাল থম্বোসিস রোগে আক্রান্ত হইয়া পরলোকগমন করিয়াছেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স হইয়াছিল ৭০। ডাঃ রায় নিঃসন্তান ছিলেন, তাঁহার স্ত্রী বর্তমান। কর্ন, নাসিকা ও গন্ড দেশ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রায়ের পৈতৃক নিবাস ছিল হাওড়া জেলার বিধিচন্দ্রপুর গ্রাম। জন্ম ১৮৯৫। পিতা রামপ্রসন্ন রায়। স্কটিশ চার্চ প্রেসিডেন্সী এবং মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষাসমাপর্নান্তে ডাঃ রায় বিলাত গমন করেন। এবং চিকিত্সা শাস্ত্রে এফ আর সি এস (এডিন), ডি এল ও (লন্ডন) উপাধি লাভ করেন।
শুক্রবার, ১৫ মাঘ, ১৩৭১ (৯ মাঘ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, JANUARY 29, 1965
জোর করিয়া হিন্দী চাপাইলে বাংলা মানিবে না: বিশিষ্ট কংগ্রেসনায়ক শ্রীঅতুল্য ঘোষ বৃহস্পতিবার কলিকাতায় দেশের হিন্দীপ্রেমিক ও শাসন কর্তৃপক্ষকে এই মর্মে সতর্ক করিয়া দেন যে, ভাষার সূত্রে যেন দেশের সংহতি বিঘ্ন না হয়। হিন্দীকে জরুরি করিতে হইলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতে হইবে। তিনি বলেন হিন্দী লইয়া মাদ্রাজে যে শোচনীয় ঘটনা ঘটিতেছে একদিকে আমি যেমন তাহার তীব্র নিন্দা করি, অপরদিকে আমি মনে করি হিন্দীর সমর্থকদেরও সংযত হওয়া উচিত। শ্রীঘোষ ঐ দিন সন্ধ্যায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে লালা লাজপত্ রায় জন্মশতবার্ষিকী উত্সবে বক্তৃতা করিতেছিলেন। তিনি বলেন, হিন্দী প্রচার আর হিন্দী জোর করিয়া চাপানো এক জিনিস নয়।
—থাম বাবা, ভোট দেব, কথা দিচ্ছি
শুক্রবার, ১৫ মাঘ, ১৩৭১ (৯ মাঘ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, JANUARY 29, 1965
স্টেট বাসের আর এক দফা ভাড়া বৃদ্ধি: কলিকাতায় স্টেট বাসের আর এক দফা ভাড়া বৃদ্ধি করা হইতেছে এবং অতি শীঘ্রই, সম্ভবত ১লা ফেব্রুয়ারী হইতে নূতন ভাড়া চালু করা হইবে। জানা গিয়াছে, রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষ এই বৃদ্ধিকে ভাড়ার পূনর্বিন্যাস বলিয়া অভিহিত করিবেন। আজ (শুক্রবার) কলিকাতার রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে আহ্বান করিয়াছেন। এই সম্মেলনে নূতন ভাড়ার হার ঘোষণা করা হইবে। নূতন ভাড়া সম্পর্কে ষতদূর জানা গিয়াছে, তাহাতে প্রকাশ বর্তমানে স্টেট বাসের ভাড়া যেখানে পঁচিশ ভাগে (স্টেজে) লওয়া হয় তাহার পরিবর্তন করিয়া সাত ভাগে লওয়া হইবে। ফলে কয়েকটি স্টেজে ভাড়া সামান্য কমিবে। কিন্তু অন্যান্য স্টেজে এবং সাধারণভাবে ভাড়া বৃদ্ধি পাইবে।
শনিবার, ১৬ মাঘ, ১৩৭১ (১০ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JANUARY 30, 1965
পরীক্ষক হইতে রাজি: শতকরা মাত্র ২৫জন অধ্যাপক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি এ ও বি এস-সি (দুই বত্সর) পরীক্ষায় পরীক্ষক হওয়ার প্রস্তাবে রাজী হইয়াছেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপকদের জবাব দেওয়ার শেষদিন ছিল শুক্রবার। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র এই সংবাদ জানান। ১লা মার্চ পরীক্ষা দুইটি আরম্ভ হইতেছে। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ সিদ্ধান্তের জন্য তাঁহারা অপেক্ষা করিতেছেন। শনিবার সমিতির সমিতির কার্যনির্বাহক পরিষদের বৈঠক বসিতেছে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর সহিত আলোচনার বিষয়বস্তু উত্থাপন করা হইবে এবং তাঁহারা পরীক্ষা বর্জন করিবেন কি না, তাহাও চূড়ান্ত হইবে বলিয়া আশা করা যায়।
শনিবার, ১৬ মাঘ, ১৩৭১ (১০ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, JANUARY 30, 1965
সরকারী বাসের ভাড়া বাড়িল: ১লা ফেব্রুয়ারী হইতে কলিকাতার সরকারী বাসে ১৩টি স্টেজে ১ পয়সা হইতে ৩ পয়সা করিয়া ভাড়া বাড়ান হইতেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এখন যেখানে ১২ পয়সা ভাড়া দিতে হইতেছে ১লা তারিখ হইতে সেখানে ১৫ পয়সা ভাড়া গণিতে হইবে। শুক্রবার কলিকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্টের চেয়ারম্যান শ্রী এ বি গাঙ্গুলী সাংবাদিকদের কাছে সরকারী ভাবে এই কথা ঘোষণা করেন। শ্রী গাঙ্গুলী সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলেন, তাঁহারা যে কুপন প্রথা চালু করিতেছেন তাহার ক্রেতারা ভাড়ার হারে অনেকখানি সুবিধাও পাইবেন। স্টেট বাস কর্তৃপক্ষ ইহাকে ভাড়া বৃদ্ধি বলিতে নারাজ। তাঁহাদের ভাষা অনুসারে ইহার নাম র্যাশনাইলেজেশন।
রবিবার, ১৭ মাঘ, ১৩৭১ (১১ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, JANUARY 31, 1965
কলিকাতাই বস্তী সমস্যায় সব চেয়ে বেশি বিব্রত: শনিবার মেয়র সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে বস্তী সমস্যা প্রাধান্য পায়। প্রায় প্রতি সদস্যই নিজ নিজ নগরীর এই সমস্যায় বিপন্ন বলিয়া জানান। তবে দিল্লীর প্রতিনিধির মতে, কলিকাতাই ইহার মধ্যে সর্বপেক্ষা বস্তী সমস্যাগ্রস্ত নগরী। এইদিন অধিবেশনের সূচনায় মহাত্মা গান্ধীর সপ্তদশ স্মৃতি দিবস উপলক্ষে সদস্যগণ এক মিনিট নীরবে দন্ডায়মান থাকিয়া শহীদ স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধার্পন করেন। বস্তি সমস্যা আলোচনাকালে, দিল্লীর ডেপুটি মেয়র জানান, কয়েকটি বস্তি ভাঙিয়া বস্তিবাসীদের সেখানে মালিকানা সহ পাকা বাড়ি দেওয়া হইয়াছিল। পরে দেখা গেল লোকগুলি বাড়ি বেচিয়া দিয়া অন্য বস্তিতে ঢুকিয়াছে। মদ্রাজের মেয়র জানান, কংগ্রেস কম্যুনিস্ট, ডি এম কে প্রভৃতির চাঁইয়েরা দলীয় রাজনীতির আস্তানা হিসাবে ব্যবহারের জন্যই সেখানে বস্তি উচ্ছেদ বাধা দিতেছে।
হিন্দীতে আর গালাগালি দিও
না। বাবু ওটা এখন রাষ্ট্রভাষা।
—ভাসা খাবে
না গায়ে মাখবে?
না মশাই, আপনাপ ভোট চাইনে।
আপনার হয়ে কলেরার ইনজেকসন
আমি নিতে পারবো না।
মঙ্গলবার, ১১ মাঘ, ১৩৭১(১৩ মাঘ, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, FEBRUARY 2, 1965
মুদ্রার চোরাকারবারে কলিকাতার সাজা: বিদেশী মুদ্রার অবৈধ লেনদেনের জন্য ১৯৬৪ সালে সারা ভারতে যত জরিমানা আদায় হইয়াছে, তাহার তিন ভাগের এক-ভাগ দিয়াছে একা কলিকাতা। ঐ বছর সারা ভারতে মোট জরিমানা আদায়ের পরিমাণ কুড়ি লক্ষ টাকা, তাঁর মধ্যে কলিকাতার পূর্বাঞ্চলীয় শাখাতেই সাত লক্ষ টাকা। কলিকাতার তিনটি বিলাতী সওদাগরি অফিসই প্রায় দুই লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়াছেন। বিদেশী মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ (এনফোর্সমেন্ট) অধিকারের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ১৯৬৪ সালে ৬৭টি অভিযোগে কলিকাতায় ১৩৪ জায়গায় তল্লাসী চালান। কয়েকটি নামকরা দেশী ও বিদেশী রপ্তানি বাণিজ্য সংস্থা ইহার অন্যতম। অভিযোগগুলির তদন্ত অগ্রসর হইতেছে। যে তিনটি বিলাতী কোম্পানীর জরিমানা হয় তাহাদের একটি চা রপ্তানির সহিত যুক্ত (জরিমানার পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা), একটি পাট রপ্তানির সহিত যুক্ত ( জরিমানা ৪৫ হাজার টাকা) এবং তৃতীয়টি একটি নামকরা বিদেশী ম্যানেজিং এজেন্ট (জরিমানা ৬৭ হাজার টাকা)।
বুধবার, ১২ মাঘ, ১৩৭১ (১৪ মাঘ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 3, 1965
পথেই ইলেকট্রিক ট্রেন চলিতে দেরী নাই: আর দুই বত্সরের মধ্যেই কলিকাতার চার পাশের সমস্ত রেলপথে বৈদ্যুতিকরণ সমাপ্ত হইবে। মঙ্গলবার রেল বৈদ্যুতিকরণ সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার শ্রী এইচ ডি অবস্তী কলিকাতার সাংবাদিকদের জানান, শিয়ালদহের দক্ষিণে সেকশনগুলিতে বৈদ্যুতিকরণ শুরু হইয়াছে। ১৯৬৬ সালের জুন-জুলাই নাগাদ শিয়ালদহ হইতে ক্যানিং, লক্ষীকান্তপুর, ডায়মন্ড হারবার ও বজবজ রুটে পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিকরণ শেষ হইবে। ১৯৬৭ সালের মধ্যে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় বৈদ্যুতিকরণ শেষ হইলেই সমস্ত হাওড়া ও শিয়ালদহের সব লাইনেই বৈদ্যুতিক ট্রেন চলিতে থাকিবে। শ্রী অবস্তী বলেন, এ পর্যন্ত এই কাজে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হইয়াছে। বিদ্যুত্ প্রবাহ ডি সি হইতে এ সি’তে রূপান্তরের কাজও সুরু হইয়াছে। ১৯৬৬ সালের শেষাশেষি অথবা ১৯৬৭ সালের গোড়ার দিকে ব্যান্ডেল-হাওড়া এবং শেওড়াফুলি-তারকেশ্বর সেকশনে এ সি পদ্ধতি প্রবর্তিত হইবে।
শুক্রবার, ২২ মাঘ, ১৩৭১ ( ১৬ মাঘ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, FEBRUARY 5, 1965
কলিকাতায় ঈদ উত্সব: বৃহস্পতিবার কলিকাতা ময়দানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক ঈদের নামাজ পড়েন। তারপর, জনে জনে আলিঙ্গন,—ঈদ মোবারক। সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন মিনিট দুয়েক বক্তৃতা দেন। তিনি সম্প্রদায়নির্বিশেষে সকলকে স্থায়ী শান্তির জন্য সচেষ্ট হইতে অনুরোধ জানান। মৌলানা সালাম সৈফী আহমেদ নামাজ পরিচালনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ঈদের বাণী শান্তির বাণী। এই দিনে একমাত্র কামনা—পৃথিবীর সমস্ত দেশে যেন শান্তি অটুটু থাকে।
বক্তৃতা সংক্ষেপ করুন, আমাদের
পানীয় জলের বড় অভাব।
জরুরী চিঠি মনে রাখবেন। ইংরেজীতে
লিখে হিন্দী করে তার থেকে বাংলায়
অনুবাদ করে টাইপিস্ট ডেকে......
শনিবার, ২৩ মাঘ, ১৩৭১ (১৭ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, FEBRUARY 6, 1965
কলিকাতায় জমির মূল্য বাঁধিয়া দেওয়ার দাবি: কলিকাতায় জমির মূল্য বাঁধিয়া দেওয়া ও ব্যক্তিগত ভূ-সম্পত্তির সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণের জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানাইয়া শুক্রবার পৌরসভা এক প্রস্তাব গ্রহণ করে। স্টেটবাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও এই অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ পায়। ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ নির্ধারক প্রস্তাবটির উথ্থাপক সম্মিলিত বিরোধী দলের শ্রীসমর রুদ্র। প্রস্তাবে, বসবাস আর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের মূল্য নির্ধারণ না করিবার কথা বলা হইয়াছে। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। স্টেটবাসের ভাড়া বৃদ্ধির নিন্দা করিয়া পৌর কল্যাণ ব্লকের শ্রীবিমান মিত্র একটি প্রস্তাবে ভাড়া পুনর্বিন্যাসের কথা বলেন। নির্দলীয় শ্রীনৃপেন ব্যানার্জি উহার সমর্থন করেন। ডাঃ কে পি ঘোষও ভাড়া বৃদ্ধির নিন্দা করেন এবং ইহা পূনর্বিবেচনার জন্য সরকারের উদ্যেশে অনুরোধ জানান।
বুধবার, ২৭ মাঘ, ১৩৭১ (২১ মাঘ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 10, 1965
সরিষার তেল আছে, ক্রেতা নাই: কলিকাতার তেলকলগুলিতে সরিষার তেল ঠাসা দর ক্রমশই পড়তির মুখে, কিন্তু খরিদ্দার বিমুখ। বাদাম তেলের হাতে মার খাইবার পর তেলকল মালিকরা নূতন বাহানা ধরিয়াছেন, “এবার কলিকাতার বাহিরের বাজারে ‘অনধিকার প্রবেশকারী’ বাদাম তেলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার অনুমতি দেওয়া হোক।” মঙ্গলবার কলিকাতার বাজারে সরিষার তেলের দর নামিয়াছে প্রতি কেজি পাইকারী ৩ টাকা ৩০ পয়সা ও খুচরো ৩ টাকা ৪০ পয়সা। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাজারে আরও কম। প্রতি কেজি বাঁধা দর ৩ টাকা ২৫ পয়সা, কোন কোন বাজারে ৩ টাকাতেও খরিদ্দার মেলে নাই। কারণ, বাদাম তেলের দর আরও নীচে। এক্ষেত্রে কলিকাতা অপেক্ষা মফঃস্বলের তেলকল মালিকরা একধাপ আগাইয়া আছেন। তাহাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হইল,— কিছু ব্যবসায়ীর অসাধুতার জন্য সরিষার তেলের কলঙ্ক হইয়াছে। কলঙ্কভঞ্জনে সময় লাগিবে। সরিষার তেলকে বাজারে পূনঃ-প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে বাদাম তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়া দর নামানো ছাড়া অন্য পথ নাই।
শুক্রবার, ২৯ মাঘ, ১৩৭১ (২৩ মাঘ, ১৮৮৬ শক) FRIDAY, FEBRUARY 12, 1965
কলিকাতায় গোলযোগের পর স্কুল কলেজ সাতদিন বন্ধ: বৃহস্পতিবার দুপুরে ভবানীপুরের একটি স্কুলের সামনে এক শোচনীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার হইতে রাজ্য সরকার কলিকাতা ও হাওড়ার সমস্ত সরকারী স্কুল-কলেজ ১৮ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বন্ধ রাখিবার নির্দেশ দিয়াছেন। বেসরকারী স্কুল-কলেজকেও ঐরূপ করার অনুরোধ জানান হয়। এই শোচনীয় ঘটনায় কলিকাতার চারটি স্কুলের চারজন ছাত্র এক সংঘর্ষে শাণিত অস্ত্রের আঘাতে আহত হইয়াছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। আঘাত খুবই গুরুতর। ঘটনাটি ঘটে ভবানীপুর পদ্মপুকুর অঞ্চলে এক স্কুলের সন্মুখে। হিন্দীর প্রতিবাদে ও মাদ্রাজে ছাত্র বিক্ষোভের সমর্থনে বৃহস্পতিবার কলিকাতা ও শহরতলীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজেই ধর্মঘট পালিত হইয়াছিল। বাহিরের বিভিন্ন স্কুলের ধর্মঘটী একদল ছাত্রের সহিত ঐ স্কুলের কর্মচারী বলিয়া কথিত কয়েকজনের সংঘর্ষেই ছাত্ররা আহত হয় বলিয়া জানা যায়।
শনিবার, ১ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৪ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, FEBRUARY 13, 1965
নূতন দোকান আইনের পর কলিকাতা: সংশয়,—তবুও চৌরঙ্গী ও পার্ক স্ট্রীট এলাকার হোটেল –রেস্তোঁরা আগের মতই চলিয়াছে। অর্থ্যাত্, মেয়েদের নাচ-গান বন্ধ হয় নাই। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল। দোকান-সংস্থা আইনে সন্ধ্যা ছয়টার পর হোটেল, রেস্তোঁরা, কাফেতে মেয়েদের কাজ করা সম্ভব নয়। একই ক্যাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড, চিত্তরঞ্জন এভেন্যু, লোয়ার সার্কুলার রোডের খাবারের দোকানগুলিতে সন্ধ্যার পর পরিচারিকা থাকা উচিত নয়। কিন্তু জবরদস্ত দোকান-সংস্থা আইন প্রয়োগের প্রথম দু’দিন ছিল। পরিবর্তন খুব একটা চোখে পড়ে নাই। কলিকাতার নাগরিকদের অসন্তোষ ছাড়া সব যেমনটি ছিল তেমনই। কলিকাতাবাসীর অসন্তোষের কারণ মাত্র একটিই দোকানে সাপ্তাহিক দেড়দিন ছুটি দেওয়ার রীতি। ব্যবসায়ীরাও এজন্য ক্ষুব্ধ। দোকান-সংস্থা কর্মচারীরা কিন্তু অখুশী নয়। হোটেল-রেস্তোঁরার কর্মচারীদের কিন্তু বেজায় আনন্দ। রাত্রি এগারটার পর খানা বন্ধ। এবং সেই সঙ্গে তাহাদেরও ছুটি।
শনিবার, ১ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৪ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SATURDAY, FEBRUARY 13, 1965
পৌরসভায় উদ্ভট পরিস্থিতি দুই সভা, দুই সভাপতি: শুক্রবার কলিকাতা পৌরসভার অধিবেশনে আবার ১৯৫৯ সালের উদ্ভট ঘটনার পুনারবৃত্তি হয়। মেয়রের আসন লইয়া টানা-হেঁচড়া, হট্টগোল এবং শেষ পর্যন্ত যুগপত্ দুইজন চেয়ারম্যানের বিপরীতধর্মী সভা চালনার মধ্যে এই দিনের অধিবেশন সাঙ্গ হয়। সভাপতিদ্বয় হইলেন কংগ্রেসের সভানেতা শ্রী জে এল সাহা এবং বিরোধী দল নেতা শ্রীসত্যানন্দ ভট্টাচার্য। মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র কেহই অধিবেশনে উপস্থিত না থাকায় এই উদ্ভট পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত অধিবেশন বসিবার পূর্ব মুহূর্তে সেক্রেটারি আসিয়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি আছে কিনা দেখেন। তাহার পরে মেয়র প্রবেশ করেন। মেয়র বা ডেপুটি মেয়র আজ উপস্থিত না থাকায় সেক্রেটারীর আগমনে বোধ হয় বিলম্ব হইতেছিল।
—বেশী ভাড়া দিলেন, সেজন্য
বেশীদূর এনে নামিয়ে দিলাম।
পরীক্ষা যদি না হয় তাহলে
সরস্বতী পূজো করে কী হবে?
খাঁটি সরষের তেল সহ্য হয় না আজকাল,
বাদাম তেল একটি মিশিয়ে নিই
রবিবার, ২ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৫ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, FEBRUARY 14, 1965
চক্রবেড় রেল ও নূতন সেতু চাই-ই চাই: কলিকাতার উন্নয়ন যদি আপনাদের কাম্য হয় তাহা হইলে চতুর্থ পরিকল্পনায় চক্রবেড় রেল এবং গঙ্গার উপর আর একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করিতেই হইবে। জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের শিল্পস বিদ্যুত্ এবং পরিবহণ কমিটির সভায় আজ, পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি খুবই জোরালোভাবে তাঁহার এই বক্তব্য পেশ করেন। পরিকল্পনা কমিশনের উপসভাপতি শ্রীঅশোক মেহতা এবং রেল দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীরামসূভগ সিং-এর নিকটও শ্রী মূখার্জি এই দুইটি পরিকল্পনার গুরুত্বের কথা জানাইয়াছেন। শ্রী মেহতা এবং শ্রী সিংকে তিনি এই আশ্বাস দিয়াছেন যে, কলিকাতায় চক্রবেড় রেল স্থাপনের পরিকল্পনা-সমীক্ষার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার পশ্চিমবঙ্গ সরকারই বহন করিতে প্রস্তুত। পরিকল্পনা সমীক্ষার জন্য আনুমানিক চার লক্ষ টাকা খরচ হইবে।
রবিবার, ২ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৫ মাঘ, ১৮৮৬ শক) SUNDAY, FEBRUARY 14, 1965
‘হিন্দী ছবি বন্ধ’ অভিযান: হিন্দী-বিরোধী আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবে শনিবার কলিকাতায় একদল ছাত্র হিন্দী সিনেমার বিরূদ্ধে অভিযান চালায় এবং তাহাদের বিক্ষোভের ফলে কতগুলি হলে হিন্দী চিত্র দেখানো বন্ধ হইয়া যায়। বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা এক জায়গায় হিন্দী ছবির পোষ্টারও পোড়াইয়া দেয়। দুপুরের দিকে একদল ছাত্র কৃষ্ণা, মুনলাইট, প্রভাত, গ্রেস, জওহর সিনেমা এবং বীণা সিনেমা ভবনের সম্মুখে গিয়া হিন্দী ছবি দেথানো বন্ধের দাবি জানাইতে থাকে। প্রভাত টকিজে তখন ম্যাটিনি শো শুরু হইয়া গিয়াছে। আপত্তি জানানর সঙ্গে সঙ্গে শো বন্ধ। দর্শকদের যাঁহারা ভিতরে ছিলেন, তাঁহারা বাহির হইয়া আসিলেন। বীণার শো আরম্ভ হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনী ঐ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত করেন। টিকিটের দাম ফেরত্ দেওয়া হইবে বলিয়া কর্তৃপক্ষ জানাইয়াও দিয়াছেন।
সোমবার, ৩ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৬ মাঘ, ১৮৮৬ শক) MONDAY, FEBRUARY 15, 1965
কলিকাতায় এক সপ্তাহ হিন্দী সিনেমা বন্ধ: রবিবার কলিকাতা পুলিস কর্তৃপক্ষ মহানগরের সিনেমাগুলিকে হিন্দী চিত্র দেখানো এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখিতে অনুরোধ জানান। এখানে হিন্দী-বিরোধী বিক্ষোভের পটভূমিকায় সকর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই অনুরোধ। সাধারণত যে সব চিত্রগৃহে হিন্দী দেখানো হয় তাহাদের অধিকাংশই রবিবার হয় ইংরেজী নয় বাংলা ছবি দেখায়। ঐদিন কয়েকটি সিনেমা পুরাপুরি বন্ধ থাকে। এইদিন উত্তর ও মধ্য কলিকাতায় কয়েকটি হিন্দী প্রক্ষাগৃহের সম্মুখে কিছুসংখ্যক লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁহাদের দাবি: হিন্দী ছবি দেখানো বন্ধ করিতে হইবে। কোন কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিক বিক্ষোভকারীদের বলেন, তাঁহারা হিন্দী ছবির পরিবর্তে বাংলা ছবির ব্যবস্থা করিবেন।
আগমার্ক খৈন দিন দাদা। নিজে
খাবেন, গরুকে খাওয়ান, পছন্দ
না হলে জমিতে ফেলে দিন।
চাঁদা কম উঠেছে,
সেজন্য কেবল হাঁসটাই
কিনে এনেছি
কেন্দ্রীয় খাদ্য দপ্তর: হিন্দী
বললে কি বেশী করে
চাঁদা দেবেন স্যার?
মঙ্গলবার, ৪ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৭ মাঘ, ১৮৮৬ শক) TUESDAY, FEBRUARY 16, 1965
সোমবার ট্রাম বন্ধে দশ লক্ষ যাত্রীর হয়রানি: বিনা নোটিশের ট্রাম ধর্মঘট সোমবার কলিকাতা ও হাওড়ার সর্বত্র ছড়াইয়া পড়ে। ফলে অন্তত দশ লক্ষ ট্রামযাত্রীকে চুড়ান্ত নাকাল হইতে হইয়াছে। কলিকাতার চারিটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ট্রামের মত অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসে আকস্মিক ধর্মঘটকে নিন্দা করেন। শ্রমিক নেতাদের অনুরোধে ধর্মঘটীরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কয়েকটি রুটে ট্রাম চলিতে সুরু করে। এইদিন দুপুরে বিধানসভা ভবনে শ্রমমন্ত্রীর কামরায় কেন্দীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিদের সহিত শ্রমমন্ত্রী শ্রীবিজয়সিং নাহারের এক জরুরী বৈঠক বসে। ধর্মঘটীরা যে ইউনিয়নের সদস্য তাহাকে ঐ বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দিতে হইয়াছে যে, ভবিষ্যতে ঐভাবে আর হঠাত্ ধর্মঘট যাহাতে না হয়, তাহা দেখা হইবে।
বুধবার, ৫ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৮ মাঘ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 17, 1965
বালক ব্রহ্মচারীর জেল: শ্রীমতী শৈলবালা দেবীর বাঁশদ্রোণীস্থ তিনবিঘা জমি সম্পর্কে বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী বালক ব্রহ্মচারীর এক বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০০০ টাকা জরিমানা অনাদারে আরও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড হইয়াছে। মঙ্গলবার অতিরিক্ত চীফ প্রেসিডেন্সী মাজিস্ট্রেট শ্রী এ এন ব্যানার্জী বালক ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে আনীত এই মামলার রায় দান করেন। আদালত কক্ষ দর্শক সমাগমে পূর্ণ হইয়া গিয়াছিল, তিল ধরাণোর স্থান ছিল না। আসামীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধান করিয়া রায়দান প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, প্রায় ৫০ বছর পূর্বে আর্থার এভালন (স্যার জন উডরফ) তন্ত্রসাধনা সম্পর্কিত তাঁহার গ্রন্থে বলিয়াছিলেন যে, ভারতে গুরুগিরি সর্বাপেক্ষা লাভজনক বৃত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহাতে পরমার্থের সহিত অর্থের সংযোগ অনর্থের সৃষ্টি করিয়াছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অর্থের সহিত পরমার্থের মিলন না ঘটার ফলেই দেখা দিয়াছে অনর্থ।
দশ বছর রেশন
চালু থাকবে শুনে....
দেখলে, হিন্দীর দাপট!
ধর্মঘট ভেস্তে দিল একেবার।
—আপনারা দুজনেই মেয়র হোন
আপত্তি নেই। তবে দুবার ট্যাক্স চাইবেন না।
বুধবার, ৫ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৮ মাঘ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 17, 1965
এইবার সরকারী রেশন-দোকান: রাজ্য সরকার ২৫০টি সরকারী রেশন দোকান খুলিতে চান। তবে সমবায় সমিতির দোকান পাওয়া গেলে সেগুলিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে। ইতিমধ্যে ৮৮টি ক্রেতা সমবায়ের মধ্যে ৩৫টিতে রেশন দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। ১৯৬৫ সালের রাজ্যের অভ্যান্তরে লেভি প্রথার সাহায্যে ৪ লক্ষ টন চাল কেনার পরিকল্পনা রাজ্য সরকার গ্রহণ করিয়াছেন। ১৯৬৫ সালের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টন চাল এবং প্রয়োজনমত গম সরবরাহ কেম্দ্র প্রতিশ্রুত। বর্তমান বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াইবার পরিকল্পলাও সরকারের বিবেচনাধীন। মঙ্গলবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তরে সরকার পক্ষ হইতে ঐ তথ্যগুলি দেওয়া হয়। প্রশ্নকর্তা ছিলেন শ্রীনেপাল রায়, শ্রীমতী বিভা মিত্র (কং) এবং শ্রীসোমনাথ লাহিড়ী (কম্যু)।
বুধবার, ৫ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৮ মাঘ, ১৮৮৬ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 17, 1965
জলের ব্যাপারে: কলিকাতা পৌরসভার জল সরবরাহ কমিটির তিনজন সদস্য সরেজমিনে তদন্তের জন্য মঙ্গলবার পলতা পাম্পিং স্টেশন পরিদর্শন করেন। এই তিনজন সদস্যের নাম শ্রীঅনিল মৈত্র, শ্রীরাজ সত্যেন মিত্র ও শ্রীশঙ্কুলাল বিশ্বাস। চীফ ইঞ্জিনীয়ারও তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন। তদন্তের পরও কোন কোন সদস্যের মন হইতে অন্তর্ঘাতের সন্দেহ একেবারে দুর হয় নাই।
পলতায় নির্মীয়মাণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলশোধনাগারের একাংশ।
আগামী বছর এটা চালু হইলে কলিকাতা দিনে অতিরিক্ত ৬ কোটি গ্যালন জল পাইবে।—আনন্দ চিত্র।
শ্রীমিত্র এইদিনই আমাকে বলেন, ভাঙ্গা যন্ত্রপাতিগুলি দেখিলে মনে হয় ঐগুলিকে সজোরে হাতুড়ি পিটাইয়া জখম করা হইয়াছে। চীফ ইঞ্জিনীয়ারের কার্যের সন্দেহকে আমল দেন নাই। কমিটি এই সম্পর্কে এক রিপোর্ট পৌরসভায় পেশ করিবেন। এইদিন কলিকাতা শহরে জল সরবরাহের পরিমাণ আংশিক বৃদ্ধি পায়।
—চোরাকারবারীদের ছেড়ে
সবাই এখন হিন্দাকে গালাগালি
করছে। সুলক্ষণ তাই না?
—পুরস্কার পেলেও কুকুর
কি মানুষ হয় রে ভাই
বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৯ মাঘ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, FEBRUARY, 1965
কলিকাতার দক্ষিণে ইস্পাত কারখানা : ভারত-বৃটান সহযোগিতায় দক্ষিণ কলিকাতার দক্ষিণ অঞ্চলে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইস্পাত কারখানা নির্মাণের কথা পাকা হইয়াছে। এই কারখানায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন ইস্পাত উত্পন্ন হইবে। শ্যামুয়েল ওসবোর্ন (ইন্ডিয়া) কোম্পানীর অন্যতম ডিরেক্টর ও বৃটিশ এম-পি শ্রী জন এইচ ওসবোর্ন এই সম্পর্কে ভারত সরকারের সহিত কথাবার্তা চালাইতেছেন।
বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন, ১৩৭১ (২৯ মাঘ, ১৮৮৬ শক) THURSDAY, FEBRUARY, 1965
উপেক্ষিত কলিকাতার গুটিকয় উন্নয়ন-সঙ্কল্প: বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি তাঁহার বাজেট বক্তৃতায় বৃহত্তর কলিকাতার বিবিধ সমস্যা নিরসনে ভারত সরকার ও চতুর্থ অর্থ কমিশনকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান। চতুর্থ যোজনায় বৃহত্তর কলিকাতার জন্য ১০০ কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগসহ একটি পৃথক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনার কথা বাজেটে উল্লেখ করা হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তৃতীয় পরিকল্পনাকালে কলিকাতার কয়েকটি মৌল পরিকল্পনা রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সাহায্যদানে ঔদাসীন্যে ক্ষোভ প্রকাশও করেন। অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য বণ্টনের ব্যাপারে সমস্যাজর্জর পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজন সম্যক উপলব্ধি করিয়া যথোচিত অর্থ বরাদ্দ করিবার জন্যও চতুর্থ অর্থ কমিশনের নিকট আবেদন জানান। অর্থমন্ত্রী কর্ত্তৃপক্ষকে একথা স্মরণ করাইয়া দেন যে, অতীতের তিনটি অর্থ কমিশন পশ্চিমবঙ্গের প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করে নাই।
হিন্দী সিনেমা না-হয় বন্ধ,
কিন্তু আকাশ-বাণীর হিন্দী-প্রচারিণী
আলয় তো খোলা।
নির্বাচনী ব্যয়
বেড়েছে, তাই ভাতাও...
বাঁচলে তেমন মাইনে নেই,
কিন্তু মরলে পরিবারের সবাইকে
সরকার পেনসন দেবে বলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy