Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ফুটপাথ জবরদখল, ‘উধাও’ সার্ভিস রোড

দৃশ্য ১: সকাল ১০টা। উন্নয়ন ভবন থেকে হেঁটে করুণাময়ী আবাসনে যাবেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা প্রৌঢ়া শুভেন্দু মালাকার। ওইটুকু পথ হেঁটেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফুটপাথ নেই। তাই সার্ভিস রোড ধরেই হাঁটা শুরু করলেন। কিছু দূর যাওয়ার পরেই সার্ভিস রোডের ইতি। পরপর গাড়ির পার্কিং, সার সার দোকান। বাধ্য হয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে থাকলেন তিনি।

এটাই করুণাময়ী মোড়ের এক প্রান্তের সার্ভিস রোড।  ছবি: শৌভিক দে।

এটাই করুণাময়ী মোড়ের এক প্রান্তের সার্ভিস রোড। ছবি: শৌভিক দে।

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

দৃশ্য ১: সকাল ১০টা। উন্নয়ন ভবন থেকে হেঁটে করুণাময়ী আবাসনে যাবেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা প্রৌঢ়া শুভেন্দু মালাকার। ওইটুকু পথ হেঁটেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফুটপাথ নেই। তাই সার্ভিস রোড ধরেই হাঁটা শুরু করলেন। কিছু দূর যাওয়ার পরেই সার্ভিস রোডের ইতি। পরপর গাড়ির পার্কিং, সার সার দোকান। বাধ্য হয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে থাকলেন তিনি। আচমকাই একটি অটো প্রায় তাঁর গা ঘেঁষেই বেরিয়ে গেল। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলেন শুভেন্দুবাবু।

দৃশ্য ২: সকাল ১০-৩০। করুণাময়ী মোড় থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টর যাওয়ার রাস্তায় অসংখ্য লোক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। না আছে প্রতীক্ষালয়, বা ফুটপাথ। এক চিলতে সার্ভিস রোড যা-ও বা আছে, সেখানেও অটো কিংবা শাটলের স্ট্যান্ড, বাজারও রয়েছে। অথচ ওই পথেই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস।

ঘটনাস্থল করুণাময়ী মোড়। চার মাথার এই মোড়ে দু’দিকের রাস্তায় সার্ভিস রোড রয়েছে। অথচ অন্য দু’টি প্রান্তে সার্ভিস রোড উধাও। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সার্ভিস রোড ছিল, কিন্তু রকমারি দখলদারিতে তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত। যেটুকু সার্ভিস রোড রয়েছে, তা-ও কার্যত বেদখল। ফুটপাথগুলির অবস্থাও তথৈবচ। দোকান থেকে শুরু করে রকমারি ‘দখলদারি’। এমনকী, ফুটপাথের উপরে স্থানীয় পুরসভার ওয়ার্ড অফিসও হয়েছে। আবার ওই মোড়ের চারধারে রাস্তার উপরেই রিকশা, অটো, শাটলের স্ট্যান্ড রয়েছে। নেই শুধু পথচারীদের দাঁড়ানোর জায়গা।

বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলায় সমস্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বদলে সাময়িক ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মতো ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে।

পঞ্চাশ বছর পার হয়েছে সল্টলেক উপনগরীর। এতদ্সময়ে চরিত্র বদলেছে এই উপনগরীর। সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে সরকারি-বেসরকারি অফিস, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, বিনোদন ক্ষেত্রের পাশাপাশি পাঁচ নম্বর সেক্টরকে কেন্দ্র করে কয়েক লক্ষ মানুষ এবং গাড়ির চাপ বেড়েছে এই উপনগরীর উপরে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রায় সওয়া দু’লক্ষ বাসিন্দা আর দু’লক্ষাধিক বহিরাগতের চাপ সামলাতে হচ্ছে এই নগরীকে। ফলে পরিকাঠামোর উপরে চাপ বাড়ছে। তাই সমস্যাও বাড়ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।

যেমন, এই করুণাময়ী মোড়। সল্টলেকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চার মাথার মোড়। সল্টলেকের পাঁচটি সেক্টরের সংযোগস্থল এটিই। ফলে এই মোড়ে মানুষ ও গাড়ির চাপ সর্বাধিক। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে সার্ভিস রোডগুলি নানা বাণিজ্যিক কাজে আটকে রাখা হচ্ছে, ব্যবহার করতে পারছেন না শুধু পথচারীরাই। অবিলম্বে এই সার্ভিস রোডগুলিকে চলাচলের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ওই চার মাথার মোড়ের চারদিকের সার্ভিস রোডগুলিকে চলাচলের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। প্রয়োজনে অটো, রিকশা, শাট্ল থেকে দোকানদার, সকলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হোক।”

সমস্যার কথা স্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ অনুপম দত্ত বলেন, “আমরা এই প্রথম দায়িত্বে এলাম। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে এখন তা জটিল আকার নিয়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবেই সমস্যার সমাধান নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। নির্বাচনী বিধি জারি হওয়ায় সে প্রসঙ্গে কিছু বলা যাবে না।”

রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “স্থানীয় পুরপ্রশাসনই যা পরিকল্পনা করার করবেন। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করবে। তবে ভবিষ্যতের স্বার্থে সল্টলেকের পরিকাঠামো সম্প্রসারণ নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করেছি। কিছু কার্যকরীও হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

kajal gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE