এরই নাম ফুটপাথ। ছবি: অরুণ লোধ
চওড়া হচ্ছে রাস্তা। আর তাতেই বাদ পড়েছে ফুটপাথ। কাটা পড়েছে প্রায় ছ’শো গাছ।
কোনও হাইওয়ে নয়। এই চিত্র জেমস লং সরণির। যে রাস্তার দু’ধারে রয়েছে অন্তত এক ডজন স্কুল, বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল। ২০১৩ সালে তারাতলা থেকে জোকা, জেমস লং সরণির ৭.১৬ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু করে রাজ্য পূর্ত দফতর। ওই দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থেই রাস্তাটি ১৪ মিটার পর্যন্ত চওড়া করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তাটি চওড়া করতে গিয়ে ফুটপাথ বলে কিছু রাখা তো হয়নি, উল্টে দু’ধারের প্রচুর সংখ্যক গাছ কেটে ফেলে রাস্তাটিকে ‘হাইওয়ে’-র ধাঁচেই তৈরি করেছে পূর্ত দফতর। এ ছাড়া, ফুটপাথ বাদ দিয়ে যে ভাবে রাস্তা চওড়া করার কাজ চলছে তাতে পথচলতি মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
কিন্তু কেন এ ভাবে রাস্তা চওড়া হচ্ছে?
পূর্ত দফতরের কর্তারা বলেছেন, এমনিতেই জেমস লং সরণি ‘বাইপাস’ হিসেবে ব্যবহার হত। তার উপর ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর মেট্রোর কাজ চলায় এই রাস্তায় যানজট বাড়ছে। সেই চাপ কমাতেই রাস্তাটি চওড়া করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আর এই কাজের জন্য গাছ কাটার ও ফুটপাথ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়র (সদর) করুণ দে-ও বলেন, “যে ভাবে ট্রাফিক বাড়ছে, তাতে ওই রাস্তা চওড়া করতেই হত।”
কী ভাবে তৈরি হচ্ছে চওড়া রাস্তা?
তারাতলা থেকে জোকা পর্যন্ত ওই রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে কার্যত ফুটপাথ তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক জায়গায় বাড়ির গেট খুললেই সরাসরি রাস্তায় গিয়ে পড়তে হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পাশে এক-দু’ফুট জায়গা উঁচু করে ফুটপাথের মত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে চলাফেরা করা সম্ভব নয়। কারণ সেই এক ফুটের মতো জায়গার উপর রয়েছে আলোক স্তম্ভ বা পুরসভার বসানো ত্রিফলা আলো। এ ভাবে রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে কাটা পড়েছে বড় বড় গাছগুলিও। পূর্ত দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কাটা গাছের সংখ্যা ৫৮৯টি। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার খানেক গাছ কাটা পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গাছ কাটার পরে পূর্ত দফতর যে সব পরিপূরক গাছ লাগিয়েছিল, ঠিক মতো পরিচর্যার অভাবে সেগুলিরও বেশির ভাগই মরে গিয়েছে।
কিন্তু এ ভাবে ফুটপাথ বাদ দিয়ে, গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করা কতটা যুক্তিসঙ্গত? কলকাতার এক প্রাক্তন ট্রাফিক কর্তার কথায়, জনবসতি রয়েছে এমন এলাকায় রাস্তার পাশে পথ চলতি মানুষের জন্য মোটামুটি ভাবে ৫ থেকে ৬ ফুট চওড়া ফুটপাথ রাখা উচিত। তবে সাধারণ ভাবে রাস্তা কতটা চওড়া এবং সেই রাস্তা দিয়ে কত গাড়ি যাতায়াত করে, সেই সংখ্যার উপর নির্ভর করে ফুটপাথের পরিমাপ। এলাকার এক বাসিন্দা পূবালী রায় বলেন, “মনে হচ্ছে রাস্তা শুধুমাত্র গাড়ি যাতায়াতের জন্যই। সাধারণ মানুষের যেন রাস্তা দিয়ে হাঁটার দরকার পড়ে না।” তাঁর অভিযোগ, যানজট এড়াতে পূর্ত দফতর তো রাস্তা চওড়া করে দিল, কিন্তু রাস্তার দু’ধারে অনেকগুলি স্কুল রয়েছে। সেখানে রোজ যে বাচ্চারা যাতায়াত করে, তাদের কথা কেউ ভাবল না। এতে ভবিষ্যতে গাড়ির সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy