Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পথের দাবিতে নিয়ম নস্যাৎ

শহরের মোড়ে-মোড়ে নতুন বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলি ফাঁকা। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে রাস্তার উপরে। সেখানেই দাঁড়াচ্ছে বাস। আর বোকা বনছেন স্ট্যান্ডের যাত্রীরা। বিপাকে পড়তে হচ্ছে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের। পুলিশকর্তারা অবশ্য দায় চাপিয়েছেন যাত্রীদের ঘাড়েই। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়ালে আমরা কেস করি। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে নাগরিকদের।” শহর জুড়ে এই অনিয়মের ছবি ঘুরে দেখলেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা।শহরের মোড়ে-মোড়ে নতুন বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলি ফাঁকা। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে রাস্তার উপরে। সেখানেই দাঁড়াচ্ছে বাস। আর বোকা বনছেন স্ট্যান্ডের যাত্রীরা। বিপাকে পড়তে হচ্ছে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের। পুলিশকর্তারা অবশ্য দায় চাপিয়েছেন যাত্রীদের ঘাড়েই। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়ালে আমরা কেস করি। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে নাগরিকদের।” শহর জুড়ে এই অনিয়মের ছবি ঘুরে দেখলেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৪
Share: Save:

প্রাণ হাতে নিয়ে

হাজরা মোড়: সন্ধ্যা সওয়া ৭টা। যতীন দাস পার্ক মেট্রোর সামনে আশুতোষ কলেজের দিকের রাস্তায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়ক তহবিলের টাকায় তৈরি বাসস্ট্যান্ড। অথচ অফিসযাত্রী, কলেজপড়ুয়া সকলেই দাঁড়িয়ে চার রাস্তার মোড়ে। সেখানেই সব রুটের সরকারি-বেসরকারি বাস দাঁড়াচ্ছে। তাতেই হুড়মুড়িয়ে উঠছেন যাত্রীরা। স্ট্যান্ড ছেড়ে রাস্তায় কেন? তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠতে উঠতে এক যাত্রী কৌশিক বসু বললেন, “এ ভাবেই রোজ উঠতে হয়।” মধ্যবয়স্ক তমাল শূরের কথায়, “এক দিন তো এ ভাবে চাকার তলায় চলে যাচ্ছিলাম!”

থোড়াই কেয়ার

রাসবিহারী মোড়: রাত ৮টা। রাসবিহারী মোড়ের পাশেই কালীঘাট মেট্রো স্টেশন। তার সামনে রাস্তার উপরে গোল বোর্ডে লেখা, ‘এখানে বাস দাঁড়াবে না।’ কিন্তু ছবিটা ঠিক উল্টো। বাড়ি ফেরতা যাত্রীদের ভিড়ে কার্যত মুখ ঢেকেছে বোর্ডটাই। আর ঠিক তার সামনেই রাস্তার উপরেই বাসের গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে বাস। এক যাত্রী সুমন রায় বললেন, “এ রকম অনেক নিয়মই কলকাতার রাস্তায় লেখা থাকে। কে সব মানে বলুন তো!” তবে একটি বাসের কন্ডাক্টর বলেন, “যেখানে যাত্রী দাঁড়াবে, সেখানেই তো বাস দাঁড় করাতে হবে। না হলে যাত্রী হবে কী করে?”

নস্যাৎ নিয়ম

সবিস্তার...

চোর-পুলিশ খেলা

শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়: বিকেল ৩টে। পাঁচ মাথার মোড়ে সর্বত্রই অলিখিত বাস দাঁড়ানোর জায়গা। থেমে যাচ্ছে হাত দেখালেই। কোথাও নির্দিষ্ট যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। বালির বাসিন্দা সৌমেন কুশারী বললেন, “এখানে চোর পুলিশ খেলা চলে। পাঁচমাথার মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট থাকলে চালকেরা নির্দিষ্ট জায়গায় বাস থামান। না হলে পুরো রাস্তাটাই ওঁদের।”

নিয়মটাই নেই

ধর্মতলা চত্বর: রাত ৯টা। গোটা রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে বহু যাত্রী। কোথাও নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ড নেই। মেট্রো সিনেমার সামনে বাঁধাঘাট-ধর্মতলা রুটের বাস আসতেই হুড়োহুড়ি পড়ল। তার মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়লেন এক যাত্রী। পরে ওই যাত্রী, সালকিয়ার বাসিন্দা অপূর্ব রায় বললেন, “এ ভাবে কী বাসে ওঠা যায়! আর একটু হলেই মরে যেতাম! অথচ এখানে বাস দাঁড়ানোর নিয়মই নেই।” রাত সাড়ে ৯টা। একই চিত্র চাঁদনি চক, লেনিন সরণির মোড় থেকে মৌলালির দিকে যাওয়ার রাস্তায়। রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের তুলতে একটি ট্রামকে বিপজ্জনক ভাবে ওভারটেক করে সামনে এসে থামল বাস। রে-রে করে উঠলেন ট্রামের চালক। কিন্তু যাত্রী ও বাসের কন্ডাক্টরের চিৎকারে তা কার্যত চাপাই পড়ে গেল।

যেমন খুশি চল

উল্টোডাঙা মোড়: সকাল সাড়ে ১০টা। বিধাননগর রোড (উল্টোডাঙা) স্টেশন চত্বরের কিছুটা আগেই রয়েছে যাত্রী প্রতীক্ষালয়। অথচ যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন রাস্তার মাঝে। জিজ্ঞাসা করতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন এক যাত্রী স্বরূপ সেন, “পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন। রাস্তার একেবারে বাঁ দিকে প্রথমে অটো, তার পরে বাসের লাইন। তা-ও নির্দিষ্ট জায়গায় বাস দাঁড়ায় না। তা হলে যেখানে-সেখানে দাঁড়াব না তো, কী করব!”

জিতবে কে

হাডকো মোড়: সকাল সাড়ে ৯টা। মোড়ের মাথায় যাত্রী প্রতীক্ষালয়। কিন্তু কে কার আগে কত যাত্রী তুলবে, তা নিয়েই মোড়ের মাথাতেই চলছে বাসের রেষারেষি। ডানলপের অরিন্দম দাস বললেন, “বাসের রেষারেষিতে আমাদের প্রাণ যায় যায়। একবার উঠতে গিয়ে বাস ছেড়ে দেওয়ায় পা ভেঙেছিলাম।”

যেন ফুটবল মাঠ

উল্টোডাঙা-দুর্গাপুর সেতুর মুখ: বিকেল ৪টে। সেতুর উপরে বাস দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা উল্টো। সেতুতে ওঠার মুখেই মর্জিমতো দাঁড়িয়ে পরে বাস। কে কত যাত্রী তুলতে পারবে, তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এক যাত্রী প্রসূন কর বললেন, “এমন ভাবে বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে যেন ফুটবল খেলা হচ্ছে। এক দিন একটা বাসকে কাটিয়ে পাশের বাসে উঠতে গিয়ে আর একটু হলেই দুটোর মাঝখানে চেপ্টে যাচ্ছিলাম!”

(প্রতিবেদক: শান্তনু ঘোষ, কাজল গুপ্ত, ছবি: সুমন বল্লভ, স্বাতী চক্রবর্তী)

অন্য বিষয়গুলি:

shantanu ghosh kajal gupta traffic rules
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE