নামেই মেট্রোপলিটন শহর। অথচ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করা কোনও উড়ানেই প্রথম শ্রেণির আসন নেই। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলির বিচারে দেশের প্রথম দশটি শহরের মধ্যে কলকাতার স্থান সপ্তম। দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ তো বটেই, স্থানের বিচারে কলকাতাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে কোচির মতো ছোট শহরও।
এই পরিস্থিতিতে এমিরেটস বিমান সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২৯ মার্চ থেকে যে গ্রীষ্মকালীন উড়ানসূচি তৈরি হচ্ছে সেখানে কলকাতার দুর্নাম ঘোচাতে প্রথম শ্রেণির আসনযুক্ত একটি নতুন বিমান থাকবে। সেই বোয়িং ৭৭৭ বিমানে ২২০টি সাধারণ শ্রেণি, ৪২টি বিজনেস শ্রেণি ছাড়াও থাকবে ১২টি প্রথম শ্রেণির আসন। দিনে এক বার কলকাতা থেকে দুবাই যাবে সেই বিমান। ভারতে টানা ২৯ বছর উড়ান চালাচ্ছে এমিরেটস। তাদের মানচিত্রে কলকাতা রয়েছে ন’বছর ধরে।
এমিরেটসের এই ঘোষণার পরেই বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজ্যে শিল্পের এই হাল সত্ত্বেও কেন এমিরেটস কলকাতার উড়ানে প্রথম শ্রেণির মতো বিলাসবহুল আসন রাখার ব্যবস্থা করছে, তা নিয়ে বিমান-পরিষেবা ক্ষেত্রে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এই শহর থেকে ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহানসা তাদের উড়ান তুলে নিয়েছে। এই মুহূর্তে কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ান নেই ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা জাপানে। এই অবস্থা সেই বাম আমল থেকেই রয়েছে। কলকাতা-লন্ডন সরাসরি উড়ান তুলে নিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়াও। প্রত্যেক বিমান সংস্থার যুক্তি প্রায় একই। এই শহর থেকে বিজনেস শ্রেণিতে যাতায়াত করার মতো উচ্চবিত্ত যাত্রী প্রায় পাওয়াই যায় না। প্রথম শ্রেণি তো আরও খরচ সাপেক্ষ। তবে শুধু আসনের ভাড়াটাই এর একমাত্র কারণ নয়। বস্তুত কলকাতা থেকে ইউরোপ, আমেরিকা বা বিশ্বের অন্যত্র যাওয়ার যাত্রীই বেশির ভাগ সময় পাওয়া যেত না। এখন প্রশ্ন, তা হলে কেন এমিরেটস প্রথম শ্রেণির আসনের ঘোষণা করল?
ভারত ও নেপালের দায়িত্বে থাকা এমিরেটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলেমান আহমেদ বললেন, “কলকাতার অনেক যাত্রী প্রথম শ্রেণিতে দুবাই যেতে চান। কিন্তু এখানে সেই সুযোগ না থাকায় তাঁরা দুবাই যাচ্ছেন বিজনেস শ্রেণিতে। আবার, দুবাই থেকে অন্য দেশে যাচ্ছেন প্রথম শ্রেণিতে। এমনই কিছু যাত্রী আমাদের জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথম শ্রেণিতে যাতায়াত করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।” জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে যাঁরা এমিরেটসের উড়ান ধরেন, তাঁদের মধ্যে ৯০% যাত্রীই দুবাই ঘুরে ইউরোপ, আমেরিকা বা বিশ্বের অন্য দেশে যান। কখনও ব্যবসার জন্য, কখনও বেড়াতে আবার কখনও বা পড়াশোনার কারণে। তা ছাড়া, বছর শেষে প্রবাসী বাঙালিদের একটি বড় অংশ কলকাতায় ফেরেন এমিরেটসের বিমানেই। অর্থাৎ সরাসরি কলকাতা থেকে ইউরোপ বা আমেরিকার যাত্রী পাওয়া না গেলেও দুবাই হয়ে যাঁরা বিশ্বের অন্য শহরে যাচ্ছেন, তাঁদের কথা ভেবেই প্রথম শ্রেণির ব্যবস্থা বলে জানাচ্ছেন সংস্থার এক কর্তা। সংস্থা সূত্রে খবর, পরীক্ষামূলক ভাবে মাত্র একটি উড়ানে প্রথম শ্রেণির আসন রাখা হচ্ছে। যাত্রী না-পাওয়া গেলে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভারতের যে দশটি শহর থেকে এমিরেটস সপ্তাহে মোট ১৮৫টি উড়ান চালায়, তাদের মধ্যে তিরুঅনন্তপুরম, কোঝিকোড় এবং আমদাবাদ পিছিয়ে রয়েছে কলকাতার থেকে। যাত্রী সংখ্যার বিচারেও দশটি শহরের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে কলকাতাই। যেখানে আমদাবাদে ৮১% এবং কোঝিকোড়, কোচি, চেন্নাই, হায়দরাবাদের মতো শহরে যাত্রী সংখ্যা ৯০%-এর বেশি, সেখানে কলকাতার যাত্রী সংখ্যা এখনও ৮০% ছাড়ায়নি। সংস্থার দাবি, মুম্বই থেকে দিনে পাঁচটি উড়ানের মধ্যে একটি থাকে এয়ারবাস ৩৮০। সুলেমান জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে ওই বিমান চালানোর মতো পরিকাঠামোই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy