সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু ঘোষণা করেছেন কলকাতাকে শিশুশ্রমিক মুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু তার পরেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানো এবং তাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে চলেছে। সম্প্রতি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পুলিশের সাহায্যে আমহার্স্ট স্ট্রিট ও কসবা থানা এলাকা থেকে এমন দুই শিশুকে উদ্ধার করল।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে খবর, ২ জুন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার মদন মিত্র লেনের এক কারখানার বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় বছর দশেকের একটি ছেলেকে। রোগাপাতলা ছেলেটির গায়ে, পিঠে ছিল কালশিটের দাগ। চোখে-মুখেও ক্লান্তির ছাপ। ওই কিশোর পুলিশকে জানায়, শুধু মারধর বা আটকে রাখাই নয়, চুরির অভিযোগ এনে কারখানার মালিক সে দিন তার মুখে গরম চা ঢেলে দিয়েছিল।
সে জানিয়েছে তার বাড়ি বিহারের মতিহারিতে। অভাবের তাড়নায় তার বাবা দেশওয়ালি এক চাচার সঙ্গে তাকে কলকাতায় পাঠায় কাজের জন্য। বছর দুই আগে সে একটি দোকানে কাজে ঢোকে। সম্প্রতি মে মাসের শেষে সেই কাজ থেকে ছাড়িয়ে ওই চাচাই তাকে নিয়ে যায় মদন মিত্র লেনের কারখানায়। পুলিশকে ওই কিশোর জানিয়েছে, কারখানায় লোহা, পিতলের কাজ হয়। তাকেও সেই কাজ করতে হত। যদিও কারখানার মালিক পুলিশকে পাল্টা অভিযোগে বলেন, ওই কিশোর কারখানা থেকে প্রচুর জিনিস চুরি করেছিল। বর্তমানে শিশুকল্যাণ সমিতির নির্দেশে কিশোরটির ঠাঁই হয়েছে একটি হোমে।
বেসরকারি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক আগে কসবা থানা এলাকা থেকে আরও একটি অভিযোগ আসে। স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই এলাকার একটি বহুতলের দোতলার কার্নিশ থেকে উদ্ধার করা হয় বছর তেরোর এক কিশোরীকে। উদ্ধারের পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। একটু সুস্থ হয়ে ওই কিশোরী শিশুকল্যাণ সমিতিকে জানায়, তার বাড়ি ক্যানিংয়ে। পরিচারিকার কাজের জন্য সে কসবার বাড়িটিতে এসেছিল। তাকে সব কাজই করতে হত। অভিযোগ, সে দিন তাকে কার্নিশে নেমে জানালার কাচ পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল।
কিশোরী আরও জানায়, কার্নিশে নেমে বাইরে থেকে স্লাইডিং কাচের জানালা পরিষ্কার করতে শুরু করে সে। কিন্তু তার পরে আর জানালা খুলতে পারেনি। এর পরেই ভয় পেয়ে সে কাঁদতে শুরু করে। উঁচু কার্নিশে ছোট মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে স্থানীয়েরা ১০৯৮-এ ফোন করেন। পরে ওই সংস্থা পুলিশ এবং দমকলের সাহায্য নিয়ে নামিয়ে আনে কিশোরীকে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কো-অর্ডিনেটর দিলীপ বসু জানান, উদ্ধারের পরে ৩ দিনের জন্য মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানে চিকিৎসার পরেও মেয়েটির ট্রমা কাটেনি। হোমে থেকেও মাঝে মাঝে সে ভয় পেয়ে ওঠে।
শুধু এই দুই কিশোর-কিশোরী নয়। ওই সংস্থা সূত্রের খবর, কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকী বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও আগত শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই শিশুদের বিভিন্ন কাজে লাগানো হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩ মাসে শহর থেকে ১০ জন শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রম দফতর উদ্ধার করেছে ৮ জন শিশুকে।
প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নাকের ডগায় কী করে শিশুশ্রমিক থাকছে? শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “শিশুদের উদ্ধারের পরে রাখার বন্দোবস্তের জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার তা সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। ফলে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু অভাবের জন্য তাদের পরিবার ফের তাদের কাজে পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়াও রয়েছে শিক্ষার অভাব। শিশুকে কাজে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠানো দরকার, সেটা পরিবারগুলি মনে করে না। তাই শিশুশ্রমিক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy