Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কোথাও জঙ্গল, কোথাও জঞ্জাল, হতশ্রী বনবিতান

কেমন আছে কলকাতা ও সল্টলেকের বিভিন্ন পার্ক? রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাই বা কেমন সেখানে? ঘুরে দেখে এলেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা।জলাশয়ের এক প্রান্ত শ্যাওলায় ভরেছে। চার দিকে প্রায় জঙ্গল। জলাশয়ের পাড়েই পড়ে রয়েছে ভগ্নপ্রায় বোট। জলের ধারে সার দিয়ে বসে যুবক-যুবতীরা। সপরিবারেও বসে অনেকেই। চলছে খাওয়া দাওয়া। ভোজনপর্ব শেষে জলাশয়েই ফেলা হচ্ছে উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে খালি প্যাকেট, সবই। উদ্যানের এক প্রান্তে প্রজাপতি গ্যালারি। বিভিন্ন হোর্ডিংয়ে নানা প্রজাতির প্রজাপতির সচিত্র তথ্য। সেই ছবি দেখে কচিকাঁচাদের নিয়ে ঢুকে পড়ছেন অনেকেই। তবে ওইটুকুই। কারণ, রং-বেরঙের আসল প্রজাপতির দেখা মেলা ভার। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব সেখানে স্পষ্ট।

বনবিতান। ছবি: শৌভিক দে

বনবিতান। ছবি: শৌভিক দে

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

জলাশয়ের এক প্রান্ত শ্যাওলায় ভরেছে। চার দিকে প্রায় জঙ্গল। জলাশয়ের পাড়েই পড়ে রয়েছে ভগ্নপ্রায় বোট। জলের ধারে সার দিয়ে বসে যুবক-যুবতীরা। সপরিবারেও বসে অনেকেই। চলছে খাওয়া দাওয়া। ভোজনপর্ব শেষে জলাশয়েই ফেলা হচ্ছে উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে খালি প্যাকেট, সবই।

উদ্যানের এক প্রান্তে প্রজাপতি গ্যালারি। বিভিন্ন হোর্ডিংয়ে নানা প্রজাতির প্রজাপতির সচিত্র তথ্য। সেই ছবি দেখে কচিকাঁচাদের নিয়ে ঢুকে পড়ছেন অনেকেই। তবে ওইটুকুই। কারণ, রং-বেরঙের আসল প্রজাপতির দেখা মেলা ভার। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব সেখানে স্পষ্ট।

এ ছবি সল্টলেকের কেন্দ্রীয় উদ্যান সেন্ট্রাল পার্কের (বনবিতান)।

অথচ এই পার্কের এ চেহারা ছিল না। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় করতেন পর্যটকেরা। বিশাল জলাশয়ে সুদৃশ্য বোট চলত। চার দিকে রকমারি গাছপালা। বিনোদনে হরেক রকমের ব্যবস্থাও ছিল সেখানে।

ছবিটা পাল্টেছে। যে শিয়াল নিয়ে নাজেহাল প্রশাসনকে এক সময়ে এ উদ্যানে অভিযানও চালাতে হয়েছিল, সেই শিয়ালের ডাকই শোনা যায় না এখন। কাটা পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। অন্য দিকে, পুরনো গাছগুলি যেন শুকিয়ে কাঠ। মাটির ধসে জেগে উঠেছে কঙ্কালসার বেশ কিছু গাছের শিকড়। একাধিক জায়গায় উপড়ে পড়ে রয়েছে শিকড়সুদ্ধ গাছ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে একসময়কার সুদৃশ্য পদ্মবাগান। আবর্জনা জমা করার নির্দিষ্ট জায়গা থাকতেও বনবিতানে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট থেকে লেবুর খোসা-সহ রকমারি আবর্জনা।

পায়ে চলার পথ একাধিক জায়গায় ভাঙাচোরা অবস্থায়। পর্যটকদের বসার জায়গারও বেহাল দশা। কড়া রোদের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আটচালার প্রতীক্ষালয়ে গিয়ে বসছেন। কিন্তু তার চাল ভাঙা। অগত্যা রোদে-জলে ভরসা ছাতা-ই।

নিরাপত্তারক্ষীও হাতে গোনা। ১০০ একরেরও বেশি আয়তনের বনবিতানে এক-একটি শিফ্টে দিনে-রাতে ৬-৮ জন নিরাপত্তারক্ষী নজরদারি চালান। সুরক্ষা জোরদার করতে পাঁচিলের উপরে বসানো হয়েছিল কাঁটা তার। সে সব উধাও। বনবিতানে কুকুরের উপদ্রব নিয়েও পর্যটকদের অভিযোগের অন্ত নেই।

এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বিনয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরেই বনবিতানের এই অবস্থা। একাধিক বার বন বিভাগের কাছে সংস্কারের দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি।” আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারী শুভ্র দাস বলেন, “পর্যটকদের একাংশও এখানকার সৌন্দর্য নষ্টের জন্য দায়ী। প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি।”

সমস্যার সবটা স্বীকার না করলেও বন দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “প্রথমে মূলত জোর দেওয়া হয় বনসৃজনে। পরবর্তীতে উদ্যানের সৌন্দর্যায়ন করা হয়। সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। সমাধানের চেষ্টা চলছে।” বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। কী ভাবে বর্ষার মরসুমে বনবিতানকে সাজিয়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যান শাখার উর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।” বনকর্মীদের একাংশের অবশ্য দাবি, কর্মী, ব্যয়বরাদ্দ না বাড়লে উন্নয়ন দূর অস্ত্, রক্ষণাবেক্ষণ করাই মুশকিল।

অথচ এর ঠিক উল্টো ছবি সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকের সত্তরটিরও বেশি পার্কে। পার্ক বলতে একটি মাঠ, সেখানে কমিউনিটি হল, হাঁটাচলার জায়গা, ছোট-বড় গাছপালা, এক দিকে শিশু উদ্যান। গত কয়েক বছর ধরে পার্কগুলিতে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। কচিকাঁচাদের জন্য বসেছে খেলাধুলোর নানা সরঞ্জাম। কোথাও আবার ঝর্না, ভাস্কর্যে পার্কের শ্রী কিছুটা বদলেছে।

বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘স্রেফ বাসিন্দাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাই নয়, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বনসৃজন, রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও পরিকল্পনা কার্যকর হবে।’’

উদ্যানগুলির উন্নয়নে কেন এই বৈষম্য? পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা বলেন, “বনবিতান বন দফতরের নিয়ন্ত্রণে। আর সল্টলেকের উদ্যান দেখভাল করে পুরসভা। দুই দফতরই উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। কারও কাজ আগে হচ্ছে, কারও হয়তো পরে হবে। এর মধ্যে বৈষম্যের কোনও বিষয় নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

kajal gupta banbitan saltlake park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE