Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

অপেক্ষায় স্টেশন, তবু সল্টলেকে মেট্রো দূর অস্ত

রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেছেন, জমি-জটের কারণে বারাসত ও ব্যারাকপুরে মেট্রো রেল হবে না। অনিশ্চিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভবিষ্যৎও। একই মত রেল মন্ত্রকের। তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ভোটের জন্যই এ সব কথা বলেছেন অধীরবাবু। কিন্তু যে সমস্ত প্রকল্প এক সময়ে আশার আলো জ্বেলেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে, তাঁরা কী বলছেন? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধিরা।উড়ালপুলের কাজ হয়েছে, চলছে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজও। মেট্রোর কারশেডও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবুও অনিশ্চিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। কখনও তা দত্তাবাদের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য, কখনও বৌবাজারে সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশে জমি অধিগ্রহণ-জটে। সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে কলকাতা হয়ে গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়া এই ছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকল্পনা। সেই মতো কাজও শুরু হয়েছিল। ঠিক ছিল, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, এই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করা হবে ২০১৩ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে।

দত্তাবাদের কাছে অসমাপ্ত মেট্রোর উড়ালপুল। ছবি: শৌভিক দে।

দত্তাবাদের কাছে অসমাপ্ত মেট্রোর উড়ালপুল। ছবি: শৌভিক দে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

উড়ালপুলের কাজ হয়েছে, চলছে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজও। মেট্রোর কারশেডও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবুও অনিশ্চিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। কখনও তা দত্তাবাদের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য, কখনও বৌবাজারে সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশে জমি অধিগ্রহণ-জটে।

সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে কলকাতা হয়ে গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়া এই ছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকল্পনা। সেই মতো কাজও শুরু হয়েছিল। ঠিক ছিল, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, এই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করা হবে ২০১৩ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে। সেই সময়সীমা মেনেই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। রবিবার এই প্রকল্পের কাজ সরেজমিন দেখতে গিয়ে উঠে এল প্রকল্পের বাধার ছবিটাই।

সল্টলেকের বেশির ভাগ জায়গাতেই মেট্রোর জন্য উড়ালপুল হয়ে গিয়েছে। হয়ে গিয়েছে স্টেশন তৈরি, লাইন পাতার কাজও। এমনকী, সেন্ট্রাল পার্কের একটি অংশে মেট্রোর কারশেডও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জট তৈরি হয়েছে দত্তাবাদের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন নিয়ে।

দত্তাবাদের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুনর্বাসন নিয়ে তাঁদের সঙ্গে মেট্রো কিংবা রাজ্য সরকার কোনও কথাই বলেনি। তাঁরা পুরসভা কিংবা রাজ্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও আমল দেওয়া হয়নি তাঁদের। পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা না করলে আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

ফুলবাগান মোড়ে এ ভাবেই রাস্তার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে চলছে কাজ।

যদিও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নির্মাণের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (কেএমআরসি) কর্তারা এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, পুনর্বাসন নিয়ে সমস্যা হয়নি। সল্টলেকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজও চলছে। রবিবার শ্যামলী আবাসনের সামনে গিয়ে দেখা গেল, সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢালাইয়ের যন্ত্রপাতি। সামনের জায়গাটমেট্রো প্রকল্পের কাজ বলে টিন দিয়ে জায়গা ঘিরে রেখেছে কেএমআরসি। তার ভিতরে ছোট বাড়ি তৈরির কাজও চলছে। কেএমআরসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) বিশ্বনাথ দেওয়ানজী বলেন, “ওই জমিটি নগরোন্নয়ন দফতরের। তাতে দত্তাবাদের উচ্ছেদ হওয়া ৬০টি পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য বাড়ি তৈরি হচ্ছে।”

কিন্তু এই বাড়িতে যেতে নারাজ দত্তাবাদের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, উচ্ছেদ হওয়ার পরে ওই বাড়িতে অস্থায়ী ভাবে থাকতে দেওয়া হবে। কী ভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হবে, তা-ও জানানো হয়নি। বাসিন্দাদের পক্ষে টুলা নাইয়া ও গৌতম বর বলেন, “আমরা মেট্রোর বিরুদ্ধে নই। কিন্তু চাহিদা মতো পুনর্বাসন দেওয়া না হলে জায়গা ছাড়ব না।” যদিও কেএমআরসি কর্তৃপক্ষের দাবি, পুনর্বাসন নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই কথা হয়েছে।

দত্তাবাদের সমস্যা মিটলেও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো যে হবেই, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রেলকর্তারা। প্রকল্প অনুযায়ী, সুভাষ সরোবরের কাছ থেকে ভূগর্ভে ঢুকবে মেট্রো। সেই কাজে সুভাষ সরোবর, ফুলবাগান, শিয়ালদহেও সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ হয়েছে। রেল মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, শিয়ালদহ থেকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সেন্ট্রাল স্টেশন হয়ে যাবে। এর জন্য বৌবাজারে প্রায় ২৫০টি বাড়ি ভাঙতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। সিঙ্গল বেঞ্চ প্রথমে অধিগ্রহণকে বেআইনি বলে। গত বছরের ১৮ মার্চ সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে অধিগ্রহণ সমস্যা মেটে। কিন্তু রেল সূত্রের বক্তব্য, ওই জমি রাজ্য সরকারের। স্থগিতাদেশ পাওয়ার পরেও তারা অধিগ্রহণ করেনি। ফলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর দ্বিতীয় দফার কাজ (শিয়ালদহ থেকে হাওড়া) থমকে।

আর কাজ থমকে যাওয়ায় ফাঁপরে পড়েছেন শহরবাসী। ফুলবাগানের মোড়ে রাস্তা বন্ধ। ফাঁক গলে কোনওক্রমে চলছে যাতায়াত। একই হাল শিয়ালদহেও। সম্প্রতি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী জানিয়েছিলেন, দমদম থেকে বারাসত ও ব্যারাকপুর মেট্রো হবে না। “সব প্রকল্প যদি না-ই রূপায়িত হয়, তা হলে আমাদের এত অসুবিধার অর্থ কী?”দুপুরে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরোতে বেরোতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন এক বৃদ্ধ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE