ইমন দত্ত
এ দিনই কলকাতা থেকে পুরুলিয়ার চক বাজারের বাড়িতে রওনা হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু একা নয়, শুক্রবার পুরুলিয়ার বাড়িতে ছেলে ফিরে গেলেন বাবার সঙ্গে। বাবা বসেছিলেন গাড়িতে। সঙ্গে শববাহী গাড়িতে ছেলে।
কেষ্টপুরের মিশন বাজার এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ইমন দত্ত (১৯) নামে এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। মেঘনাদ সাহা ইনস্টিটিউটের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমন দিন তিনেক আগে তাঁর এক সহপাঠীর ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন ইমন। তবে এমন কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন পুরুলিয়া শহরের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আধিকারিক ইমনের বাবা কিশোর দত্ত।
কিশোরবাবু জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ৪০ মিনিটের ট্রেনে পুরুলিয়া ফেরার কথা ছিল ছেলের। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিন বিকেল ৫টা নাগাদ ছেলেকে ফোন করায় সে বলল শুক্রবার ফিরবে। ছেলের কথায় অস্বাভাবিক কিছু টের পাইনি।
বুঝিনি আজ এ ভাবে ছেলেকে নিয়ে ফিরতে হবে।’’
তবে শুক্রবার সকালে পুরুলিয়ার বাড়িতে ইমনের কাকা সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে পুরুলিয়ারই একটি মেয়ের সম্পর্ক ছিল বলে জানতাম। মেয়েটিও কলকাতায় লেখাপড়া করে। পরিবারের লোকজন তা নিয়ে মাথা ঘামাননি। এ ছাড়া, মেয়েটির সঙ্গে ভাইপোর কোনও গোলমাল হয়েছিল বলেও শুনিনি।’’
কলকাতায় রুবি এলাকায় ভাড়া থাকতেন ইমন। কেষ্টপুরের মিশন বাজারের যে ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়, সেই আবাসনের বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার এক তরুণীকে সেখানে ইমনের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। দু’জনের মধ্যে বচসা হতেও শুনেছেন বাসিন্দারা। পুলিশ জেনেছে, বচসার পরে এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে টেলি-কনফারেন্সে কথা হয় ইমন ও ওই তরুণীর। তার পরেই ওই বন্ধুর সঙ্গে কেষ্টপুরের ফ্ল্যাটটিতে ফের আসেন তরুণী। তাঁরা দেখেন ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকিতে সাড়া না পেয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের ডেকে আনেন তাঁরা। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ইমনকে সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এর পরেই রাতে আত্মীয়দের সঙ্গে বাগুইআটি থানায় যান ওই তরুণী। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। বিধাননগরের ডেপুটি কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘যাঁর ফ্ল্যাটে ওই ঘটনা, ইমনের সেই বন্ধু পাঁচ-ছ’দিনের জন্য সেখানে ছিলেন না। ইমন তাঁর থেকে চাবি নিয়ে সেখানে থাকছিলেন।’’
ইমনের পুরুলিয়া ও কলকাতার বেশ কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, বন্ধু মহলে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ইমন। ভাল গিটার বাজাতেন তিনি। ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বন্ধুদের থেকে বিভিন্ন তথ্য জেনেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, বন্ধুরা কেউ জানিয়েছে, ওই তরুণীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় ইমন অশান্ত হয়ে পড়েছিলেন। অনেকে পুলিশকে এমনও জানিয়েছেন যে পুরুলিয়া থেকে যোগাযোগ হলেও কলকাতায় এসে দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে। কেউ জানিয়েছে, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিতে ইমনের কাছে সময় চেয়েছিলেন ওই তরুণী। এ দিকে, ইমন বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মধ্যে ওই তরুণীর থেকে ইতিবাচক জবাব আদায় করবেনই।
পুলিশ জানায়, আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। তবে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুক্রবার দুপুরে আরজিকর মর্গ থেকে ইমনের মৃতদেহ নিয়ে পুরুলিয়া রওনা হওয়ার আগে তার আত্মীয়েরাও জানান তাঁরা কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy