নাখোদা মসজিদ। —ফাইল চিত্র।
নাখোদা মসজিদের চারতলা থেকে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম মহম্মদ ফৈয়াজ আলম (৩৫)। জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ মসজিদের নীচের তলার রক্ষীরা চারতলা থেকে গোঙানি শুনতে পান। তাঁরা গিয়ে দেখেন, গলায় গামছা বাঁধা অবস্থায় উপুড় হয়ে এক ব্যক্তি কাতরাচ্ছেন। তাঁর মাথা থেকে অঝোরে রক্ত বেরোচ্ছে। পাশে পড়ে রয়েছে একটি বড় হাতুড়ি। মসজিদের দারোয়ান মহম্মদ রুস্তম বলেন, ‘‘আমি গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়ে অন্যদের জানাই। পরে উপরে উঠে দেখি, চারতলার পড়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে।’’ বিষয়টি ফোনে জানানো হয় মসজিদের ট্রাস্টি ও ইমামকে। আহতকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে মল্লিকবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথায় তেরোটি সেলাই করা হয়েছে। তাঁকে আইসিইউ-এ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মহাত্মা গাঁধী রোডের বাসিন্দা ফৈয়াজ দীর্ঘদিন ধরে নাখোদা মসজিদ চত্বরের ফুটপাতে ডলার কেনাবেচার ব্যবসা করেন। ফৈয়াজকে নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন ব্যবসায়ীরা মুন্না নামেই চেনেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ব্যবসায় ঝামেলার জন্যই ফৈয়াজকে কেউ বা কারা খুনের মতলব এঁটেছিল। তদন্তকারীরা এখনও অপরাধীদের পরিচয় নিয়ে ধন্ধে রয়েছেন। তবে অপরাধীরা যে ফৈয়াজের পরিচিত, সে বিষয়ে একমত তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, নাখোদা মসজিদের ভিতরে কোনও সিসি ক্যামেরা না থাকায় দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আহত ব্যক্তি এখনও কথা বলার অবস্থায় নেই। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ফৈয়াজের বয়ান পেলেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে। এ দিন ঘটনাস্থল থেকে হাতুড়ি এবং গামছা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
প্রশ্ন উঠেছে, রক্ষীদের নজর এড়িয়ে মসজিদের চারতলায় এই ধরনের ঘটনা কী ভাবে ঘটল? নাখোদা মসজিদের ইমাম সফিক কুরেশি বলেন, ‘‘মসজিদের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। সাধারণত সবাই নমাজ পড়তেই এখানে আসেন। ভোর থেকেই নমাজ শুরু হয়। তখনই মসজিদের সদর দরজা খুলে দেওয়া হয়। আবার রাত দশটা নাগাদ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ মসজিদের ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিম বলেন, ‘‘যখন ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়, সাধারণত তখন ভোরের নমাজের পরে মসজিদে বেশির ভাগ মানুষ বিশ্রাম নেন।’’ মসজিদ সূত্রের খবর, শুক্রবার জুম্মার নমাজের সময়ে চারতলায় মানুষ যান। বাকি সময়ে চারতলার দরজা খোলা থাকলেও সকলে সাধারণত নিচেই নমাজ পড়েন। পুলিশের অনুমান, চারতলা ফাঁকা থাকে বলেই অপরাধীরা খুন করার উদ্দেশ্যে ফৈয়াজকে কোনও ভাবে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল।
নাখোদা মসজিদের বাইরেও সিসি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীদের পরিচয় নিয়ে কোনও সূত্র মেলেনি। বছরখানেক আগে নাখোদা মসজিদ লাগোয়া জাকারিয়া স্ট্রিটে নিজের দোকানে খুন হয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। তখন নজরদারি বাড়াতে মসজিদে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এখনও তা বসানো গেল না কেন? মসজিদের ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিম বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা বসানোর যাবতীয় প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই কাজ হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy