এ ভাবেই রাস্তার উপরে পড়েছিলেন ওই তরুণী। —নিজস্ব চিত্র।
মত্ত এক তরুণীর তাণ্ডবে সাত সকালে জেরবার হরিদেবপুরের কেওড়াপুকুর এলাকার বাসিন্দারা। শুধু বাসিন্দারাই নন, ঘাম ছুটল পুলিশেরও।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকাল সাড়ে পাঁচটা–ছ’টা নাগাদ। কেওড়াপুকুর এলাকার রথের গলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের ঘুম ভাঙে এক তরুণীর চিৎকারে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কালো জিন্স এবং সাদা কালো ডোরাকাটা টপ পরা এক তরুণী রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন।” অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শুধু চিৎকার নয়, ওই তরুণী একাধিক বাড়ির গেটে ধাক্কা মারছিলেন। কখনও গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকেন। উম্নত্তের মতো আচরণ করছিলেন ওই তরুণী!”
পাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের দিকেও তেড়ে যান তিনি। এর পরেই এলাকার বাসিন্দারা হরিদেবপুর থানায় ফোন করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানায় ফোন করার পর ডিউটি অফিসার বলেন যে, ‘‘থানায় কোনও মহিলা অফিসার বা কনস্টেবল নেই।’’ তাই তাঁরা কাউকে তখনই পাঠাতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী
স্থানীয়দের অভিযোগ, মত্ত তরুণীর টানাহ্যাঁচড়াতেই ক্ষতি হয়েছে গেটের। —নিজস্ব চিত্র।
ওই এলাকার বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী সুবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে ওই ঘটনা দেখি। তখন ওই তরুণী রাস্তার উপর বসেছিলেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পর ১০০ নম্বরে ডায়াল করা হয়। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। থানায় ফোন করি। কেউ তা ধরেননি। হয়তো ফোন খারাপ ছিল।’’ এর পর হরিদেবপুর থানার তাঁর এক পরিচিত অফিসারকে মোবাইলে ফোন করেন সুবীরবাবু। ওই আধিকারিক সেই সময়ে থানায় ছিলেন না। তবে তিনি থানায় খবর দিয়ে দিচ্ছেন বলে জানান।
এর পর এক মহিলা কনস্টেবল এবং এক জন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা কোনও মতে ওই তরুণীকে থানায় নিয়ে যান। পুলিশ সূত্রে খবর, থানায় ২৪ ঘণ্টা মহিলা পুলিশকর্মী থাকার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাতে তেমন কেউই ছিলেন না। ব্যারাক থেকে অফ ডিউটিতে থাকা এক মহিলা কনস্টেবল এবং বাড়ি থেকে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকে এনে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়লে আর ফেরাব না, বার্তা দিলেন মমতা
পুলিশ সূত্রে খবর, থানায় নিয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না ওই তরুণী। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল থেকে ফোন করা হয় বাড়িতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুর এলাকারই বাসিন্দা ওই তরুণী। মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় নস্করপাড়ায় একটি অনুষ্ঠান-বাড়িতে ক্যাটারিংয়ের কাজে গিয়েছিলেন তিনি। মহিলা খানিকটা সুস্থ হওয়ার পর পুলিশকে জানিয়েছেন যে, ওই অনুষ্ঠান-বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হয় রাত দেড়টা নাগাদ। এর পর ক্যাটারিং সংস্থার অন্য কর্মীদের সঙ্গে তিনি মদ্যপান করেন। রাত সওয়া দুটো নাগাদ তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন একাই। কিন্তু খানিক পরেই নেশার ঘোরে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন এবং সকাল পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন, রাস্তা চিনতে না পেরে। সকালে রথের গলির বাসিন্দারা তাঁকে দেখতে পান।
পুলিশ ওই তরুণীর মাকে থানায় ডেকে তাঁর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছে। তবে ওই রাতে তাঁকে মদের সঙ্গে অন্য কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বাড়ি যাওয়ার সময় ওই তরুণী পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল। উনি সুস্থ হলে আমরা ফের কথা বলব।”
তবে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পুলিশ। ওই থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘বড় কোনও অঘটন ঘটতে পারত।”
পুলিশ হাঁফ ছাড়লেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন উঠেছে, ১০০ নম্বরে ডায়াল করলেও কেউ কেন ধরেনি? কেন থানাতে ছিলেন না কোনও মহিলা পুলিশকর্মী? এলাকাবাসীর দাবি, এ সব কারণে সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকটা সময় নিয়েছে পুলিশ।
এ বার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy