Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কথা বলে সমস্যা মেটাচ্ছে মহিলা থানা

থানার সংখ্যা আট। আর গত ১৫ মাসে দায়ের হওয়া লিখিত অভিযোগের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৬০টি। যদিও আটটি থানার মধ্যে চারটি সদ্যোজাত, তবু গড় হিসেব বলছে, প্রতি মাসে থানা-পিছু একটি করেও অভিযোগ জমা পড়েনি।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

থানার সংখ্যা আট। আর গত ১৫ মাসে দায়ের হওয়া লিখিত অভিযোগের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৬০টি। যদিও আটটি থানার মধ্যে চারটি সদ্যোজাত, তবু গড় হিসেব বলছে, প্রতি মাসে থানা-পিছু একটি করেও অভিযোগ জমা পড়েনি।

তা হলে কি মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ কমে গিয়েছে এ শহরে? না কি এখানকার মহিলারা পৌঁছচ্ছেন না থানা পর্যন্ত?

বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। বহু মহিলাই এখানে থানা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছেন। সমস্যাও রয়েছে ভূরি ভূরি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে সমস্ত সমস্যার সমাধানে আইন নয়, কাজে দিচ্ছে কাউন্সেলিং। আর তা করছেন খোদ পুলিশকর্মীরাই। ‘‘অনেক সময়ে আইন নয়, পাশাপাশি বসে কথা বলাটাই সমাধানের পথ দেখিয়ে দেয়,’’ বললেন এক মহিলা থানার অফিসার।

সংসার ভাঙতে বসার মুখে, স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে এসেছিলেন উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মহিলা। যাঁর কাছে এসেছিলেন, সেই মহিলা অফিসার বললেন, ‘‘কথা বলার পরে মনে হয়েছিল ওই মহিলা অভিযোগ যত নিয়ে এসেছেন, তার চেয়ে বেশি ছিল তাঁর অভিমান।’’ ওই মহিলা অফিসার বলেন, ‘‘অভিযোগ লিখে নিয়ে মামলা করে দেওয়াই যেত, কিন্তু সব কিছু শোনার পরে আমাদের মনে হয়েছিল, স্বামী-স্ত্রীকে পাশাপাশি বসিয়ে কথা বললে হয়তে বা এই সমস্যার সুরাহা মিলতেও পারে।’’ আর এর ফলে হয়েওছিল ঠিক তা-ই। ‘‘মাসখানেক পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে থানায় এসেছিলেন।’’— তৃপ্তির হাসি ওই মহিলা পুলিশের মুখে।

টালিগঞ্জ মহিলা থানার এক অফিসারের কথায়, ‘‘চোর-ডাকাত তো আমরা অনেক ধরেছি। কিন্তু এখন যেন মনে হয়, আমরা পুলিশের চেয়েও অনেক বেশি করে মনোবিদ হয়ে উঠছি।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এটাই করা উচিত। মহিলাদের সমস্যাগুলি অনেক বেশি সংবেদনশীলতা নিয়ে শুনতে হয়।’’

বন্দরের এক মহিলা থানার অফিসার জানালেন, কয়েক দিন আগে এক মহিলা পায়ে আঘাত নিয়ে হঠাৎ থানায় এসেছিলেন। মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী মারধর করে ওই হাল করেছেন। অভিযোগ নথিবদ্ধ করে ওই মহিলার স্বামীকে তুলে এনে লক-আপে রাখে পুলিশ। কিন্তু দেখা যায়, দিন দুয়েক রাখার পরেই থানায় চলে এসে স্ত্রী বলেন, ‘আপনা আদমি নেহি মারেগা তো কওন মারেগা। ছেড়ে দিন দিদি, ও আর কোনও দিন এ রকম করবে না।’

সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়ার মাসখানেক পরে হাসিমুখে থানায় এসে দেখাও করে গিয়েছিলেন দম্পতি।

কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ জানিয়েছেন, রোজদিনকার ঘটনা-দুর্ঘটনার ভিড়ে মহিলাদের নিজস্ব কিছু অভিযোগ, যা তাঁরা পুরুষ পুলিশকর্মীর কাছে খুলে বলতে স্বচ্ছন্দ নন, সে সমস্ত কিছু বলার জন্যই মহিলা থানাগুলির গুরুত্ব।

ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা-প্রধানের কথায়, ‘‘আইনের দ্বারস্থ তো যে কোনও সময়েই হওয়া যায়। কিন্তু ততটা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই ওই থানাগুলিতে মহিলাদের সমস্যা মহিলারা যে ভাবে সহজে মিটিয়ে দিচ্ছেন, সেটা কিন্তু শেখার বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women's Police Station Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE