রত্না চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের দায়ের করা অভিযোগের উত্তর দিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখানে স্ত্রীর নাম উহ্য রেখে কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে পাঠানো চিঠির একটি অংশে প্রাক্তন মেয়র লিখেছেন, ‘কমিশনের মতো পবিত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে কেউ যাতে খাপ পঞ্চায়েতের মতো ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা আমি আমার নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করি।’
শোভন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রত্নার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে চলা ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে শোভন চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমি নির্বাক দর্শক হয়ে থাকতে পারতাম। আমি ৩৫ বছর ধরে এক জন জনপ্রতিনিধি। চুপ করে বসে মজা দেখার অনুমতি আমার বিবেক দেয়নি’।
শোভনের চিঠি প্রসঙ্গে রত্নার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি বৈশাখীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ করেছি। তাতে ওঁর কেন মনে হচ্ছে যে, আমি কমিশনকে খাপ পঞ্চায়েতের মতো ব্যবহার করতে চাইছি?’’
এ বছরের গোড়ায় শোভন ও বৈশাখীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রত্না। মেয়র-পত্নীর অভিযোগ ছিল, বৈশাখী তাঁর সম্মানহানি করেছেন। বান্ধবীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে শোভন তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘রত্না ও বৈশাখী সমাজের ভিন্ন স্তরের বাসিন্দা। বৈশাখী এক জন কলেজশিক্ষিকা। রত্না গুদাম-মালিক।’ যা শুনে রত্নার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি গুদাম-মালিক হতে পারি। কিন্তু এমন কোনও কাজ আমি করি না, যা আমাকে মুখ লুকোতে বাধ্য করে।’’
রত্নার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈশাখীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কমিশন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শোভন। চিঠিতে প্রাক্তন মেয়র লিখেছেন, ‘বৈশাখী সম্পর্কে রত্না ও তাঁর বাবা দুলাল দাস (মহেশতলার বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক) যে ধরনের নারী-বিরোধী মন্তব্য করেছেন, সেই বিষয়টি কমিশন ধর্তব্যে আনলে বা তাঁদের মন্তব্যের সমালোচনা করলে আমি খুশি হতাম। তা না করে কমিশন রত্নার চিঠিকে ধর্তব্যে এনেছে।’ এমনকি, রত্না ও তাঁর বাবা পরিকল্পিত ভাবে বৈশাখীর ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শোভন।
কমিশনের কাছে রত্নার অভিযোগ ছিল, তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করছেন বৈশাখী। শোভনের ছেলেমেয়েকে তাঁদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিয়েছেন। এ বিষয়ে শোভনের পাল্টা অভিযোগ, ‘আমার সন্তানদের নিয়ে সত্যিই চিন্তিত থাকলে রত্না আমার বাড়ি ঘেরাও করতে তাদের পাঠাতেন না।’ কমিশনের উদ্দেশে প্রাক্তন মেয়রের প্রশ্ন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে লেখা একটি চিঠি (রত্নার অভিযোগপত্র) কমিশন ধর্তব্যে আনল কী করে?’
শোভনের চিঠি নিয়ে মন্তব্যে নারাজ কমিশনের চেয়ারপার্সন। লীনা বলেন, ‘‘কয়েক জনের ব্যক্তিগত বিষয় যুক্ত রয়েছে। তাই আমি কিছু বলব না।’’ তবে তিনি শোভনের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন। শোভন তাঁর চিঠিতে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘রত্নার অভিযোগপত্রে কোথাও বৈশাখীর ফোন নম্বর বা তাঁর ঠিকানার উল্লেখ ছিল না। তা সত্ত্বেও কমিশন বৈশাখীর ফোন নম্বর এবং ঠিকানা খুজে বার করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এতে আমি চমকিত।’
রত্নার অভিযোগপত্রকে ‘তুচ্ছ’ আখ্যা দিয়ে শোভন লিখেছেন, ‘কমিশনের উপরে আস্থা রয়েছে। আশা করি, কমিশন বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করবে এবং ভবিষ্যতে রত্নার মতো কেউ মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে এলে কমিশন তাঁদের বিরত করবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy