এই ঘরেই পুড়ে যান গুড়িয়া ও তাঁর শ্বশুর। — নিজস্ব চিত্র
রাতে হঠাৎই পোড়া গন্ধ পেয়েছিলেন বস্তির লোকজন। উৎস খুঁজতে বেরিয়ে তাঁরা দেখলেন, বস্তিরই একটি ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আর একটু কাছে যেতে শোনা গেল আর্তনাদ। সেই ঘরে ঢুকে প্রতিবেশীরা দেখলেন, এক তরুণী জ্বলছেন। চিৎকার করছেন বাঁচার জন্য। মেঝেতে শোয়া, তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত শ্বশুরও কিছুটা দগ্ধ, ছটফট করছেন তিনি। মহিলাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাঁর স্বামী। খাটে বসে থাকা দু’টি শিশুকন্যা কান্নাকাটি করছে। ঘরের আসবাবেও ধরে গিয়েছে আগুন।
পড়শিরাই তখন জল ঢালতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নেভে। দমকল পৌঁছনোর আগেই। তবে ওই গৃহবধূ ও তাঁর শ্বশুরকে বাঁচানো যায়নি।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুরের শাহ আমন লেনে। ঘটনাস্থল থেকে একবালপুর থানা মিনিট দুয়েকের হাঁটা পথ। অগ্নিদগ্ধ দম্পতি ও বৃদ্ধ— তিন জনকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতেই মারা যান গুড়িয়া প্রসাদ (৩৫) নামে ওই গৃহবধূ। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর শ্বশুর রণজিৎ প্রসাদের (৭৫)। গুড়িয়ার স্বামী সাঁইগোপাল প্রসাদ আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। ওই দম্পতির দুই সন্তানের অবশ্য কোনও ক্ষতি হয়নি। তাদের তুলে দেওয়া হয়েছে গুড়িয়ার বাপের বাড়ির লোকজনের হাতে। দুই সন্তানের মধ্যে এক জনের বয়স চার, অন্যটির দুই।
কিন্তু কেন জ্বলছিলেন গুড়িয়া? তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন সাঁইগোপালের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, চিৎপুর লকগেট এলাকার বাসিন্দা গুড়িয়ার সঙ্গে সাঁইগোপালের বিয়ে হয় বছর ছয়েক আগে। এ দিন সকালে একবালপুর থানায় গিয়ে গুড়িয়ার বাবা রাজনাথ ও ভাই দিলীপ জয়সোয়ারা অভিয়োগ করেন, বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাঁইগোপাল গুড়িয়ার উপরে অত্যাচার করতে শুরু করে। তাঁদের আরও অভিযোগ, সোমবার রাতে গুড়িয়াকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
যদিও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরে নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ওই গৃহবধূ। তাঁর শ্বশুর, বৃদ্ধ রণজিৎ প্রসাদ অন্য জায়গায় সরে যেতে না পারায় তিনিও অগ্নিদগ্ধ হন। কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘আমরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy