Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

গায়ে হাত, জবাবে চড় মেরে পুলিশে

চিনার পার্কের সংলগ্ন বিশ্ববঙ্গ সরণির রাস্তার ধারের একের পর এক রেস্তরাঁয় বছরভরই ভিড় থাকে। নতুন বছরের প্রথম দিন অন্য দিনের তুলনায় আরও বেশিই ভিড় জমেছিল সার্ভিস রোডের ধারের রেস্তরাঁগুলিতে।

অকুস্থল: এই এলাকাতেই হেনস্থার শিকার হন ওই তরুণী। নিজস্ব চিত্র

অকুস্থল: এই এলাকাতেই হেনস্থার শিকার হন ওই তরুণী। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

নতুন বছর উপলক্ষে পার্টি মরসুমের রাতে বিধাননগর কমিশনারেটের ব্যস্ততম রাস্তায় স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে যৌন হেনস্থার শিকার হলেন এক তরুণী। তবে অনভিপ্রেত এই পরিস্থিতির শিকার হয়েও দমে যাননি তাঁরা। তিন বছরের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়েই অভিযুক্তকে সপাটে চড় মারেন তরুণী, অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তবে দম নিলেন দম্পতি। মঙ্গলবার রাতে বাগুইআটির চিনার পার্ক এলাকার এই ঘটনায় দম্পতির সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চিনার পার্কের সংলগ্ন বিশ্ববঙ্গ সরণির রাস্তার ধারের একের পর এক রেস্তরাঁয় বছরভরই ভিড় থাকে। নতুন বছরের প্রথম দিন অন্য দিনের তুলনায় আরও বেশিই ভিড় জমেছিল সার্ভিস রোডের ধারের রেস্তরাঁগুলিতে। এরই মধ্যে যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তরুণী জানান, শহরের একটি নামী মোগলাই রেস্তরাঁয় স্বামী এবং মেয়েকে নিয়ে নৈশভোজ করতে গিয়েছিলেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দিতে যান আক্রান্তের স্বামী। তরুণীর কথায়, ‘‘আইসক্রিম কেনার জন্য ওর বাবা এগিয়ে গেল। আমি পিছন পিছন হাঁটছিলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম, পিছন থেকে কেউ যেন গায়ে হাত দিচ্ছে। পিছন ফিরে দেখি, আমার শরীরে হাত রেখে একটি ছেলে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর পরেও হাত সরায়নি। চোখমুখে ভয়ের কোনও ছাপই নেই। ওই দেখে সপাটে এক থাপ্পড় মারি। এর পরে স্বামীকে চিৎকার করে ডাকতেই হাসতে হাসতে অন্ধকার গলির মধ্যে ঢুকে যায় ছেলেটি!’’

রেস্তরাঁর কাছেই একটি আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। ওই দম্পতি জানান, প্রকল্প এলাকার পাশে অন্ধকার গলিতে ঢুকে ওই যুবক খেয়াল রাখছিল কেউ পিছনে আসছেন কি না। ওই দেখে এগিয়ে যান হেনস্থার শিকার হওয়া তরুণী ও তাঁর স্বামী। তাঁদের আসতে দেখে প্রকল্প এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ে অভিযুক্ত যুবক আবু হানিফ মোল্লা। প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তারক্ষীকে ঘটনার কথা জানানো হলে হানিফের সেখানে ঢুকে পড়ার কথা অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ। নাগেরবাজারের বাসিন্দা ওই দম্পতিকে ছুটতে দেখে আর এক দম্পতি তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে যান। স্থানীয় যুবকেরাও দম্পতির বিপদ বুঝে প্রকল্প এলাকায় জড়ো হন। চাপের মুখে প্রকল্পের নিরাপত্তারক্ষী এক এক করে সকল ঠিকা শ্রমিককে দম্পতির সামনে হাজির করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে হানিফকে চিহ্নিত করেন তরুণী। এর পরে বাগুইআটি থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রহমানের অভিযোগ, ‘‘সন্ধ্যায় গলির মধ্যে একই ভাবে অন্য এক তরুণীকে পিছন থেকে জাপটে ধরে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে কে এই কাজ করল তা বুঝতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে তরুণী বাড়ি চলে যান।’’ গত কয়েক দিন ধরেই ওই রাস্তায় মহিলারা অভব্যতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মাইতি, বাপ্পা মণ্ডলেরা। সফিক মণ্ডল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘হানিফের সঙ্গে আরও কয়েক জন এই কাজে যুক্ত। ১১ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তীর্ণ প্রকল্প এলাকা। সেখানে কোনও মহিলাকে তুলে নিয়ে কুকীর্তি করলে কে দায় নেবে!’’

বস্তুত, বাসিন্দাদের মুখে এ কথা শুনেই থানায় অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন দম্পতি। খবর পাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ পৌঁছলেও শিশুকন্যাকে নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করেন তাঁরা। শেষে রাত ১টা নাগাদ অভিযোগ দায়ের করে বাড়ির পথে রওনা হন স্বামী-স্ত্রী ও শিশুকন্যা। থানা ছাড়ার আগে তরুণী বলেন, ‘‘বাসিন্দারা বলছেন, প্রায়ই মহিলাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ না করলে সাহস বেড়ে যেত। পিছিয়ে আসা যাবে না।’’

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্প এলাকার ম্যানেজার সুনীল মিশ্র বলেন, ‘‘দিনটি পয়লা জানুয়ারি হওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীরা সংখ্যায় কম ছিলেন। সেই সুযোগে এ কাজ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় আরও আলো বাড়িয়ে দিচ্ছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Crime Police Indecent Behaviour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE