—প্রতীকী চিত্র।
স্নায়ুরোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন বারাসতের দত্তপুকুরের বাসিন্দা রেহানা বিবি। বছর আঠাশের ওই তরুণীর হাঁটাচলার ক্ষমতা
ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন
নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসকেরা। কিন্তু তা না পারায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র চিকিৎসায় ফের দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন দু’সন্তানের ওই জননী।
ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রির অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানান, রেহানা ‘প্যারাপ্লেজিয়া সাইকোজেনিক ইন অরিজিন’ নামে রোগে আক্রান্ত। গত দেড় বছর ধরে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রের খবর, তরুণী প্রথমে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সেখানের চিকিৎসায় সে ভাবে সাড়া না মেলায় তাঁকে ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রিতে রেফার করে দেন আর জি করের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা।
ওই বিভাগের চিকিৎসক অরূপ দত্ত বলেন, ‘‘হাত নাড়াতেই পারতেন না ওই তরুণী। দাঁড়াতেও পারতেন না তিনি। সম্ভাব্য কারণ খুঁজতে স্নায়ু, মাংসপেশী, সুষুম্নাকাণ্ডের পরীক্ষা করানো হয়েছিল। কিছু ধরা না
পড়ায় রেহানার রোগ মানসিক মনে করা হয়েছিল। চিকিৎসা করে
এখন রোগী সুস্থ হয়েছেন জেনে খুব ভাল লাগছে।’’
রেহানার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চোদ্দ আগে পেশায় কৃষিজীবী মোতিয়ার রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। দম্পতির ন’বছরের একটি মেয়ে এবং চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শুরুতে মনোরোগের চিকিৎসা করাতে রেহানা রাজি ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে রেহানার কাউন্সেলিং করেন ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা। এর পরে ওই তরুণী মনোরোগের চিকিৎসা করাতে রাজি হয়ে যান।
রেহানার কথায়, ‘‘প্রতি মাসে দু’হাজার টাকার ওষুধ লাগত। এত টাকা ওষুধের জন্য খরচ হয়ে গেলে সংসার কী করে চলবে, তা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কথা শোনাতেন।’’ রেহানার বাবাই তখন ওষুধের খরচ জোগাতে থাকেন। রেহানা জানান, ‘‘ওষুধ শেষ হলে তাঁর দাদার হাত দিয়ে আব্বা পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁর উপরে কত চাপ দেব? আশঙ্কা ছিল, মানসিক হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা হচ্ছে শুনে স্বামী যদি তাঁকে ছেড়ে দেন!
প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘অসুখ সম্পর্কে মনের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে রেখেছিলেন রেহানা। দুই সন্তানের দেখাশোনা করতে পারতেন না তিনি। স্বামী ছেড়ে দেওয়ার আশঙ্কা সব সময়ে মাথায় ঘুরপাক খেত। যার ফলে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।’’ চিকিৎসক জানান, বছর দেড়েক ধরে ওই তরুণী হাঁটার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। মাত্র বাইশ দিনের চিকিৎসায় তাঁকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।
অফুরান হাসি নিয়ে রেহানা বলেন, ‘‘নিজের উপরে ভরসা, আত্মবিশ্বাস একেবারে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাবিনি কোনও দিন নিজে আবার হাঁটতে পারব। এক বার যখন ডাক্তারবাবুদের জন্য হাঁটতে পেরেছি, আর পিছন ফিরে তাকাতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy