সিমেন্টের চাঁই, ভাঙা ইট-সহ স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকা নির্মাণ বর্জ্য নিয়েই দেখা দেয় সমস্যা। প্রতীকী ছবি
বর্জ্যের বিক্রয়যোগ্য অংশটুকু নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। তা তুলে নিয়ে যায় ঠিকাদার সংস্থাই। যেমন রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট (আরসিসি), লোহা, ইস্পাত, কাঠের জানলা, দরজা-সহ একাধিক সামগ্রী, অর্থাৎ যেগুলি বিক্রি করে টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু তা বাদ দিয়ে সিমেন্টের চাঁই, ভাঙা ইট-সহ স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকা নির্মাণ বর্জ্য নিয়েই দেখা দেয় সমস্যা। সেগুলির সিংহভাগ অংশ নির্মাণস্থলে বা যত্রতত্র পড়ে থাকে। অথচ, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ বর্জ্যের দূষণ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ গুরুত্বের পরেও কলকাতা সেই ব্যাপারে কতটা সচেতন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ফলে শহরে দৈনিক ৮০০ টনের হিসাবে বার্ষিক উৎপাদিত প্রায় তিন লক্ষ টন নির্মাণ বর্জ্য কোথায় যায়, তার প্রক্রিয়াকরণই বা কী ভাবে হয়, তা নিয়ে সামগ্রিক চিত্র একেবারেই স্পষ্ট নয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শহরের নির্মাণ বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব যৌথ ভাবে কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ এবং বিল্ডিং দফতরের। নির্মাণ বর্জ্য নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরে দায়িত্ব সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। সেখানে ওই দুই দফতরের ভূমিকা কি? পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এই ব্যাপারে বিল্ডিং দফতর সাড়ে তিন বছর আগে ‘পাবলিক নোটিস’ দিয়ে জানিয়েছিল, দূষণ এড়াতে নির্মাণ সামগ্রী এবং নির্মাণ বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে রাখা যাবে না। যাতে তা গাড়ি এবং পথচারীদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে বা নিকাশি নালার পথ আটকে দেয়। বর্জ্য থেকে কংক্রিট, ইস্পাত, কাঠ, প্লাস্টিক, ভাঙা ইটের মতো সামগ্রী পৃথক করতে হবে। কিন্তু তা করা হচ্ছে কি না, সেই ব্যাপারে নজরদারি চালানো হয় কি? এ বিষয়ে পুর বিল্ডিং দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল অনিন্দ্য কারফর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিছু বলব না। যা বলার পুর কমিশনার বলবেন।’’ প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিক বার ফোন করা হলেও পুর কমিশনার বিনোদ কুমার ফোন ধরেননি। তবে মেসেজ করে তিনি জঞ্জাল অপসারণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ দিকে, পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বাড়ি তৈরি, পুরনো বাড়ি সংস্কার, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা সংক্রান্ত তথ্য সবই জানে বিল্ডিং দফতর। কিন্তু সেই তথ্য তারা জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে জানায় না। ফলে, নির্মাণ বর্জ্য পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। সমন্বয়ের এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জঞ্জাল অপসারণ দফতর পড়ে থাকা কংক্রিটের চাঁই, ভাঙা ইট তুলে সেগুলি দিয়ে নিচু জমি ভরাট বা বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সাময়িক মেরামত করে বলে পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। কিছু অংশ আবার ধাপায় ফেলা হয়। দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বিল্ডিং দফতর না জানালে কোথায় নির্মাণ বর্জ্য পড়ে থাকছে, তা জানব কী করে? তবু তার মধ্যেই আমরা চেষ্টা করি।’’
এমনিতে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘বিল্ডিং মেটেরিয়ালস অ্যান্ড টেকনোলজি প্রোমোশন কাউন্সিল’ (বিএমটিপিসি)-এর বক্তব্য, যত্রতত্র নির্মাণ বর্জ্য ফেলা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দেশের বায়ুদূষণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা বৃদ্ধির পিছনে নির্মাণ বর্জ্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। তাই এই বর্জ্যকে ‘রিডিউস, রি-ইউজ় এবং রিসাইকল’ বা ‘থ্রি আর’ নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছে বিএমটিপিসি।
গত বছরের বাজেটেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বায়ুদূষণ কমানোর জন্য আলাদা করে নির্মাণ বর্জ্যের কথা বলেছিলেন। পরিবেশবিদ-নির্মাতা-স্থপতিদের একাংশের বক্তব্য, নির্মাণ বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১৬ সালেই ‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ম্যানেজমেন্ট রুলস’ তৈরি হয়েছিল। তার পরে কয়েকটি শহরে বিচ্ছিন্ন ভাবে নির্মাণ বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহার শুরু হলেও সার্বিক ভাবে সেই পরিকাঠামো কোথাও গড়ে ওঠেনি। যেমন, পুরসভার নির্মাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের প্লান্টও এখনও চালু হয়নি! নির্মাণ বর্জ্য নিয়ে বিল্ডিং ও জঞ্জাল অপসারণ দফতরের সমন্বয়ের প্রসঙ্গে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলছেন, ‘‘নির্মাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য যে প্লান্ট তৈরি হচ্ছে, সেটি চালু হলে বিল্ডিং দফতরের সঙ্গে নিশ্চয়ই তথ্যের আদানপ্রদান হবে। তবে বর্তমানে তা হচ্ছে না বলে সাফাই অভিযানে কিন্তু কোনও অসুবিধা হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy